Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
সালকিয়া-কাণ্ড

খুনিদের ফাঁসি হোক, চাইছে শোকার্ত পাড়া

সরস্বতী পুজোর ভাসানে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অরূপ। পাঁচ দিন পরে সেই অরূপই ফিরলেন সালকিয়ায়, তাঁর বাড়ির কাছের একটি স্কুলের মাঠে। তবে কাচের শববাহী গাড়িতে। গোটা শরীর ফুলে ঢাকা। গাড়ির কাচের জানলা আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অরূপের মা। তাঁকে ঘিরে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন। সকলের চোখেই জল। মুখে একটাই দাবি, “অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। সকলের শাস্তি চাই। দোষী সকলের ফাঁসি চাই।”

শোকে বিহ্বল অরূপের মা ও ভাই। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র

শোকে বিহ্বল অরূপের মা ও ভাই। সোমবার।—নিজস্ব চিত্র

সুপ্রিয় তরফদার ও দেবাশিস দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৩
Share: Save:

সরস্বতী পুজোর ভাসানে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন অরূপ। পাঁচ দিন পরে সেই অরূপই ফিরলেন সালকিয়ায়, তাঁর বাড়ির কাছের একটি স্কুলের মাঠে। তবে কাচের শববাহী গাড়িতে। গোটা শরীর ফুলে ঢাকা। গাড়ির কাচের জানলা আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন অরূপের মা। তাঁকে ঘিরে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন। সকলের চোখেই জল। মুখে একটাই দাবি, “অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। সকলের শাস্তি চাই। দোষী সকলের ফাঁসি চাই।”

বুধবার রাতে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে প্রহৃত হওয়ার পরে পাঁচ দিন কোমায় ছিলেন সালকিয়ার হৃষিকেশ লেনের অরূপ ভাণ্ডারী। লড়াই শেষ হয়ে গেল সোমবার ভোরে। সকাল সাড়ে ছ’টায় বাড়িতে খবর আসা মাত্রই হাসপাতালে রওনা হন অরূপের বাবা প্রতাপ ভাণ্ডারী ও ছোট ভাই অমর। তখনও অবশ্য ছেলের মৃত্যুসংবাদ পাননি মা মেনকা দেবী। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ক্রমশ ভিড় বাড়তে শুরু করে। ছেলে কোমায় চলে যাওয়ার পর থেকেই খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন মেনকাদেবী। রক্তচাপ ক্রমশ বাড়তে থাকায় চিকিৎসা চলছিল। এ দিন বাড়িতে অহরহ লোকের আনাগোনা মনে সন্দেহ জাগায় তাঁর। বাড়িতে যান এলাকার মহিলারাও। তাঁরাই বিকেলে মেনকাদেবীকে অরূপের মৃত্যুর খবর দেন। সঙ্গে সঙ্গেই জ্ঞান হারান মা। তার পর থেকে বারবারই সংজ্ঞা হারাচ্ছেন তিনি।

সে সময়ে বাড়িতেই ছিলেন অরূপের ঠাকুমা শেফালিদেবী। কান্নাভেজা গলায় তিনিও বলছিলেন, “নাতির খুনের বদলা চাই। পুলিশ যেন কাউকে না ছাড়ে। ওদের যেন ফাঁসি হয়। ও (অরূপ) খুব ভাল ছেলে ছিল। কোনও গণ্ডগোলে থাকত না। মেয়েদের সঙ্গে অসভ্যতা করা হচ্ছিল। সেটা মেনে নিতে না পারাতেই ওকে মেরে ফেলা হল। ওদের শাস্তি হোক।’’

মেনকাদেবী কখনও সংজ্ঞা ফিরে পাচ্ছেন। কখনও কান্না বদলে যাচ্ছে গোঙানিতে। ডুকরে উঠছেন, “ওদের ছেড়ো না। ওরা আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।” অরূপের মৃত্যুতে গোটা এলাকা জুড়েই শোকের ছায়া। মহিলারা কেউ কাঁদছেন, কেউ বা বুকে কালো ব্যাজ পড়ে রাস্তার একধারে দাঁড়িয়ে। প্রত্যেকের মুখে একটাই কথা, “ভাল ছেলেটা এ ভাবে চলে গেল! দুনিয়াটা কতটুকু দেখল ও (অরূপ)?” সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ অরূপের দেহ সালকিয়ায় পৌঁছনো মাত্রই শোকের বাঁধ ভাঙে গোটা পাড়ার।

স্থানীয় একটি স্কুলের মাঠে রাখা হয় অরূপের দেহ। মেনকাদেবীকে সে সময়ে ধরে ধরে শববাহী গাড়ির কাছে আনা হয়েছিল। গাড়ি থেকে অরূপের দেহ নামানো হতেই ছেলেকে আঁকড়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা। স্কুলের মাঠে তখন ভেঙে পড়েছে গোটা পাড়া। চারপাশে কান্নার রোল।

দেহ নিয়ে যাওয়ার সময়ে মেনকাদেবী চেপে ধরে রেখেছিলেন অরূপকে। কোনও মতেই মায়ের হাত থেকে ছেলেকে ছাড়ানো যাচ্ছিল না। শেষ বারের মতো ছেলেকে আদর করে লুটিয়ে পড়ছিলেন তিনি। আত্মীয়-পড়শিরা অরূপের দেহ নিয়ে বাঁধাঘাট শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও চোখের জল বাগ মানছিল না কারও। অরূপের বাবা প্রতাপবাবু তখনও বলছেন, “আমরা কী নিয়ে বাঁচব? শাস্তি চাই। ফাঁসি চাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE