Advertisement
০২ মে ২০২৪

গোষ্ঠী দ্বন্দ্বেই সরলেন নুরুল, দাবি কর্মীদের

বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে দলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ইদ্রিশ আলিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাল তৃণমূল। গতবারের সাংসদ নুরুল ইসলামকে টিকিট দেওয়া হয়েছে জঙ্গিপুর কেন্দ্রে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ইদ্রিশের। ভাল সংগঠক হিসেবেও পরিচিত।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ১০:১৫
Share: Save:

বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে দলের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ইদ্রিশ আলিকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাল তৃণমূল। গতবারের সাংসদ নুরুল ইসলামকে টিকিট দেওয়া হয়েছে জঙ্গিপুর কেন্দ্রে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ওই এলাকায় যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে ইদ্রিশের। ভাল সংগঠক হিসেবেও পরিচিত। জেলার কার্যকরী সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “আইনজীবী, সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান ও প্রবীন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বসিরহাটে ইদ্রিশের জনপ্রিয়তা রয়েছে। আর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের জোয়ারে লড়া কঠিন হবে না ইদ্রিশের পক্ষে।”

কিন্তু সাংসদ নুরুল ইসলামকে সরিয়ে দিয়ে ইদ্রিশকে আনার সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে। ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে প্রথমবার প্রার্থী হয়ে বসিরহাট কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন নুরুল। দলের একাংশের বক্তব্য, পাঁচ বছর উন্নয়নের কাজও অনেকটাই করেছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও কেন নুরুলকে তাঁর কেন্দ্র থেকে সরিয়ে জঙ্গিপুর থেকে দাঁড় করানো হল?

স্থানীয় তৃণমূলের একাংশের মতে, গত পাঁচ বছর বারবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে নাম জড়িয়েছে নুরুল ইসলামের। অভিযোগ উঠেছিল, দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে অস্বীকার করে নিজের মতো করে চলছেন তিনি। বিভিন্ন গোলমালের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ারও অভিযোগ ওঠে নুরুলের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি বসিরহাটের ভেবিয়া চৌমাথায় প্রকাশ্য জনসভায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের কাছেও নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে বিক্ষোভ করেন দলের একাংশ। মঞ্চ থেকে নেমে যেতে হয় তাঁকে। আরও অভিযোগ, সম্প্রতি জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যে মেছোভেড়িগুলি মালিকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, তা ফের নুরুলের নেতৃত্বে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী দখল করে। এই সব কিছুর জেরেই নুরুলকে নিজের কেন্দ্র থেকে সরতে হল বলে মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। জ্যোতিপ্রিয়বাবু অবশ্য বলেন, “এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমার কিছু বলার নেই।”

নুরুলের অবশ্য বক্তব্য, “আমি দলের অনুগত সৈনিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সম্মান আমাকে দিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। কিছু লোক নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে না পেরে আমাকে বদনাম করছেন। কিন্তু বসিরহাটের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ওঁরাই আমাকে সাংসদ করেছিলেন। আমি সাধ্যমতো উন্নয়নের কাজ করার চেষ্টা করেছি।”

প্রার্থী হিসেবে ইদ্রিশের যোগ্যতাও কম নয়, দাবি দলীয় নেতৃত্বের। দলের একাংশের মতে, সংখ্যালঘু সংগঠন করা তো বটেই, বিভিন্ন ব্যাপারে মানুষকে আইনি সাহায্য দেওয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা ভালই। ভোটে লড়ারও অভিজ্ঞতা আছে। অনেকের আবার বক্তব্য, নুরুল এলাকায় যে উন্নয়নের কাজ করেছেন, তার ভিত্তিতে জয় কঠিন হবে না তাঁর। ইদ্রিশের অবশ্য বক্তব্য, “প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত দলের। নুরুলের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই। দল মনে করেছে, উনি জঙ্গিপুর থেকে প্রার্থী হলে ভাল। ওঁর সমর্থনে আমিও জঙ্গিপুরে যাব।”

ইদ্রিশ আলির বিরুদ্ধে ওই লোকসভা কেন্দ্রে সিপিআইয়ের রাজ্য কৃষক সভার সভাপতি নুরুল হুদাকে দাঁড় করিয়েছে বামফ্রন্ট। স্থানীয় নির্মাণ আদর্শ বিদ্যাপীঠের এই প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায় প্রচারও শুরু করে দিয়েছেন এঁর মধ্যে। আগে অবশ্য কখনও প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াননি তিনি। খাদ্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত বর্ষীয়ান এই নেতার বক্তব্য, “যেখানে প্রচারে যাচ্ছি, সাড়া পাচ্ছি। মানুষ আশীর্বাদ করছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE