Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

চা খেতে আসছি, দেবের ফোন সন্তোষ রানাকে

মিনিট তিনেকের একটা ফোন! লোকসভা ভোটের মরসুমে তাই ফের সৌজন্যের বার্তা নিয়ে এল রাজ্য রাজনীতিতে। দু’দিন আগে কেশপুরে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মিলেমিশে কাজ করার কথা বলেছিলেন ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব। হাসিমুখেই বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ বাম প্রার্থীর বাড়িতে চা খেতে যেতে চান। বাম প্রার্থীও প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়ে রেখেছিলেন তারকা-প্রতিদ্বন্দ্বীকে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৬
Share: Save:

মিনিট তিনেকের একটা ফোন! লোকসভা ভোটের মরসুমে তাই ফের সৌজন্যের বার্তা নিয়ে এল রাজ্য রাজনীতিতে।

দু’দিন আগে কেশপুরে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে মিলেমিশে কাজ করার কথা বলেছিলেন ঘাটাল কেন্দ্রে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী দেব। হাসিমুখেই বলেছিলেন, প্রতিপক্ষ বাম প্রার্থীর বাড়িতে চা খেতে যেতে চান। বাম প্রার্থীও প্রকাশ্যে স্বাগত জানিয়ে রেখেছিলেন তারকা-প্রতিদ্বন্দ্বীকে। রবিবার সকালে আরও এক ধাপ এগোলেন টলিউডের সুপারস্টার! ঘাটালের সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে সরাসরিই ফোন করে চা খেতে আসার ইচ্ছার কথা জানালেন। প্রত্যুত্তরে নবীন প্রার্থীকে আশীর্বাদ করে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন প্রবীণ সন্তোষবাবুও। তবে মেদিনীপুরে সন্তোষবাবুর বাড়িতে দেব কবে আসবেন, তার দিনক্ষণ চূড়ান্ত নয়।

সন্তোষবাবু এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ প্রচারে যাচ্ছিলেন পিংলার দিকে। তখনই বেজে ওঠে মোবাইল। ফোনের ও’পারে প্রাণচঞ্চল এক যুবক ‘হ্যালো, স্যার, আমি দেব বলছি!’ দেবের পারিবারিক সূত্রে সন্তোষবাবু আগেই জেনেছিলেন, ফোন আসতে পারে। সহজ গলাতেই তাই তিনি বলেন, ‘বলুন’। দেব এ বার বিনয়ী সন্তোষবাবু তাঁর চেয়ে বয়সে অনেক বড়, রাজনীতিতেও অভিজ্ঞ। তাঁর মুখে ‘তুমি’ই ঠিক আছে!

সন্তোষবাবু নেমে এলেন ‘তুমি’তে। দেবও আশীর্বাদ চাইলেন। তারকা অভিনেতার দীর্ঘায়ু হওয়া, আরও বড় হওয়ার শুভকামনা জানালেন সিপিআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক। এর পরে দেব বলেন সন্তোষবাবুর বাড়িতে চা খেতে আসার আবদারের কথা। সন্তোষবাবুর সবিনয় জবাব, সারা দিন প্রচারের পর ফাঁকা হতে হতে রাত ৮টা বেজে যাচ্ছে। তার পরে কি আসা সম্ভব? সঙ্গে সঙ্গে রাজি সুপারস্টার! জানালেন, তাঁরও শ্যুটিং শেষ করে স্টুডিও থেকে বেরোতে ৭টা-৮টা বেজে যায়। তার পর যেতে অসুবিধা নেই। এ বার সন্তোষবাবুর আমন্ত্রণ, সোম বা মঙ্গলবার, চাইলে তিনি আসতে পারেন বাড়িতে।

গোড়া থেকেই রাজনৈতিক সহাবস্থানের কথা বলছেন দেব। ইতিমধ্যেই কেশপুরের বাড়িতে গিয়ে সিপিএম নেতা, জেঠু শক্তিপদ অধিকারী আর ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলুইকে দু’পাশে নিয়ে জেঠুর আনা লাল চেয়ারে বসে বলেছেন, “রাজনীতি দূরে সরিয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই।” আর তার পরেই এ দিনের ফোন। তরুণ প্রতিপক্ষের সৌজন্যে সিপিআই প্রার্থী খুশি। তাঁর বক্তব্য, “ওর সঙ্গে তো আর ব্যক্তিগত বিরোধ নেই! এটা দু’টো দলের নীতির লড়াই। দেব বাড়িতে এলে ভালই লাগবে।” কিন্তু দেবকে আশীর্বাদ করতে গিয়ে ‘বিজয়ী হও’ তো বলতে পারলেন না? স্মিত হেসেই সন্তোষবাবুর জবাব, “দেব তো এখনও আসেনি। আগে আসুক!”

রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কাদা ছোড়াছুড়ি, বাগযুদ্ধ দেখতেই অভ্যস্ত রাজ্যবাসী। ভোটের বাজারে আক্রমণের মাত্রা আরও চড়া হওয়াই রেওয়াজ। প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে গিয়ে ডান-বাম দু’পক্ষকেই সৌজন্যের সীমা ছাড়াতে দেখেছেন এ রাজ্যের মানুষ। তবে মাঝেমধ্যে সৌজন্যের আবহ যে তৈরি হয়নি তা নয়। যেমন, গত লোকসভা ভোটের প্রচারে, এমনকী, ভোটের দিনও যখনই দেখা হয়েছে, পরস্পরকে আলিঙ্গন করে কুশল বিনিময় করেছিলেন যাদুবপুরের তৃণমূল এবং সিপিএমের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কবীর সুমন ও সুজন চক্রবর্তী। ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনের প্রচারে কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রী তথা তৃণমূল প্রার্থীর বাড়ির দুয়ারে হাজির হয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। এ বারও মধ্যমগ্রামের রাস্তায় সৌজন্য নমস্কার বিনিময় হয়েছে তৃণমূল ও বাম প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার ও মোর্তাজা হোসেনের।

বঙ্গ রাজনীতির প্রবীণেরা বলছেন, অতীতে এ রাজ্যেই পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে তুঙ্গ রাজনৈতিক লড়াই হয়েছে। অজয় ও বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায় যুযুধান দুই শিবিরের হয়ে ভোটে লড়েছেন। কংগ্রেসের প্রার্থী যখন বিধানচন্দ্র রায়, তাঁরই ভাইঝি রেণুু চক্রবর্তী কমিউনিস্ট পার্টির হয়ে লড়েছেন! আরও আগে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভায় প্রার্থী হয়েছেন সাধন গুপ্ত। ওই লোকসভার অধীনেই একটি বিধানসভা এলাকায় প্রতিপক্ষ শিবিরের হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁর বাবা জে সি গুপ্ত! লড়াই রাজনীতির ময়দানে হয়েছে, কিন্তু পারিবারিক সৌজন্য থেকেছে অটুট। ক্রমে সেই সৌজন্য সরে গিয়েছে পিছনের সারিতে।

দেব আপাতত চন্দ্রকোনা রোডের ফিল্ম সিটিতে শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। প্রচার সে ভাবে শুরু করেননি। শ্যুটিংয়ের ফাঁকে এক দিন মেদিনীপুরে এসেছিলেন তৃণমূলের কর্মিসভায় যোগ দিতে। আর এক দিন কেশপুরের বাড়িতে জেঠু-জেঠিমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সন্তোষবাবু অবশ্য এর মধ্যে দেবের গ্রাম কেশপুরের মহিষদায় গিয়েও মিছিল, সভা করে এসেছেন। তবে একটি বারও ব্যক্তি দেবকে আক্রমণ করেননি পোড়খাওয়া এই বাম নেতা। শুধু বলেছেন নীতির লড়াইয়ের কথা। দেবের পরিবার সূত্রের বক্তব্য, সন্তোষবাবুর এই আচরণ দেবের মন ছুঁয়েছে। দেবের জেঠতুতো দাদা সুজিত অধিকারীর কথায়, “ভাইয়ের সম্পর্কে একটাও কটু কথা বলেননি বাম প্রার্থী। এটাই ওকে আকর্ষণ করেছে।”

আপাতত তারকা অতিথি আপ্যায়নের ভার স্ত্রী ভারতী রানার হাতে সঁপেছেন সন্তোষবাবু। ভারতীদেবী সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। সংসার আর রাজনীতি সামলে দেবের অনেক সিনেমাই দেখেছেন তিনি। তাই সন্তোষবাবু যখন ফোন করে বলেছেন, ‘ভাল করে চা বানাতে হবে। দেব আসছে তোমার হাতের চা খেতে’ শুনে মন ভাল হয়ে গিয়েছিল ভারতীদেবীর। তাঁর কথায়, “ভাল করেই চা খাওয়াব! অতিথি আপ্যায়ন করতে ভালই লাগে।”

পরের ফোনটা তা হলে কার কাছে আসছে? ঘাটালের কংগ্রেস প্রার্থী মানস ভুঁইয়া? না বিজেপি-র মহম্মদ আলম? কেউ চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loksabha ellection suman gosh mednipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE