Advertisement
E-Paper

চাপে রাখছে পুলিশ, জানিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেন নির্যাতিতা

পুলিশ ও তৃণমূল তাঁদের মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা বধূ। আর তার পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন আত্মীয়-পরিজনেরা। আজ, শুক্রবার জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা রাজ্যে আসছেন। গোড়া থেকেই নির্যাতিতা বধূ ও তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছে বিজেপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৬

পুলিশ ও তৃণমূল তাঁদের মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করলেন পাড়ুইয়ের নির্যাতিতা বধূ। আর তার পরেই চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেলেন আত্মীয়-পরিজনেরা।

আজ, শুক্রবার জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা রাজ্যে আসছেন। গোড়া থেকেই নির্যাতিতা বধূ ও তাঁর পরিবারের পাশে রয়েছে বিজেপি। বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা নিমাই দাস দাবি করেন, “ওই বধূ এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন। সিআইডি ওদের ফোন করেছিল। কাল সিআইডি দলের আসার কথা রয়েছে।”

বীরভূমের পাড়ুইয়ে সাত্তোর গ্রামে বোমাবাজিতে অভিযুক্ত এক বিজেপি কর্মীকে খুঁজতে গিয়ে শনিবার রাতে বর্ধমানের বুদবুদ থেকে ওই বধূকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। তাঁর ‘অপরাধ’, তিনি অভিযুক্তের কাকিমা। বুদবুদের কলমডাঙা গ্রামে বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, বাড়ির পাশের জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে মারধর করা হয়। বিছুটি ঘষে দেওয়া হয় সর্বাঙ্গে। হাতের তালু চেরা, আঙুল ভাঙা অবস্থায় রবিবার রাতে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হাসপাতালের অস্থি বিভাগের বিছানায় বসেই বধূর অভিযোগ, “পুলিশ ও তৃণমূল মিলে আমাদের মামলা তুলতে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা ওই চাপের কাছে মাথা নোয়াব না। দোষী পুলিশ অফিসারদের সাজা চাই।” যদিও কোথাও লিখিত ভাবে এই অভিযোগ জানানো হয়নি। পরে বিকেল ৪টে নাগাদ ভর্তি থাকা বধূটিকে ‘ব্যক্তিগত বন্ডে’ হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তাঁর পরিবারের লোকজন। বধূটির স্বামীর অভিযোগ, “এখানে চিকিৎসা বলতে সারা দিনে শুধু দু’টি ইঞ্জেকশন দেওয়া হচ্ছে। বাইরে থেকে ওষুধপত্র কিনে দিতে হবে কি না, তা-ও জানানো হচ্ছে না। ভাল চিকিৎসার জন্য আমরা ওকে অন্য জায়গায় ভর্তি করাব।”

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও লিখিত অভিযোগ করা হয়নি। হাসপাতালের বক্তব্য, চিকিৎসায় গাফিলতি হয়নি। বধূটি অনেকটাই সুস্থ। বরং কাল, শনিবার ধর্ষণের নির্ধারিত পরীক্ষা না করিয়ে তিনি চলে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ কিছুটা বিস্মিত। হাসপাতাল সুপার তথা মেডিক্যাল কলেজের সহ-অধ্যক্ষ উৎপলকুমার দাঁ বলেন, “মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, তা বুঝতে শনিবার স্ত্রীরোগ ও এফএসএম বিভাগের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে পরীক্ষা করার কথা ছিল।” এত দিন পরে কেন ওই পরীক্ষা? উৎপলবাবুর দাবি, “উনি মানসিক ও শারীরিক ভাবে স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত ওই পরীক্ষা করা চলে না।”

এর পরে কোথায় ওই বধূকে ভর্তি করানো হবে, তা অবশ্য তাঁর বাড়ির লোকজন জানাতে চাননি। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ও তৃণমূলের লোকজন বধূটির বাপের বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ি দুই জায়গাতেই গিয়ে মামলা তুলতে চাপ দিচ্ছে। তাই তাঁরা আতঙ্কে আছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের (এসওজি) ওসি কার্তিকমোহন ঘোষকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার এসডিপিও (বোলপুর), পাড়ুই থানার ওসি, ইলামবাজার থানার ওসি এবং এসওজি-র দুই কনস্টেবল নামেও বুদবুদ থানায় অভিযোগ জানিয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। এসডিপিও-সহ ন’জনকে শোকজ করা হয়েছে। কিন্তু এর পরেও দোষী পুলিশকর্মীদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে, এমনকী পুলিশ তাদের টাকা দিয়ে মামলা তোলানোর চেষ্টা করেছে বলে নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ।

এ দিন বীরভূমেরই সিউড়ির কড়িধ্যায় গিয়ে কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু মন্তব্য করেন, “পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে।” রাজ্যে তথাকথিত পরিবর্তনের পরেও যে এই পরিস্থিতির বদল হয়নি তা মেনে নিয়ে বলেন, “পুলিশ পুলিশের জায়গাতেই আছে। এটা পাল্টাতে পারছি না। এটা আমাদের দায়।” দুপুরে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যালে গিয়ে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদিকা মিনতি ঘোষ বলেন, “বধূটির কাছে অত্যাচারের বর্ণনা শুনে শিউরে উঠেছি! পুলিশের এই জঘন্য ভূমিকা নিয়ে আন্দোলনে নামব।” তাঁর ফিরে যাওয়ার পরে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর প্রতিনিধিরাও বধূটির সঙ্গে দেখা করেছেন।

sattor parui women's commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy