Advertisement
১৭ মে ২০২৪

ছিটমহল নিয়ে সুর বদল মমতার

ছিটমহল বিনিময় নিয়ে তাঁর ঘোর আপত্তির কথা জনসভা থেকে ফেসবুক কোথাওই আড়াল করেননি মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনের মুখে কিন্তু কার্যত একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে তাঁর মন্তব্য, “ওখানকার মানুষ যা চান, তাই-ই হবে। আমি জোর করে কিছু চাপিয়ে দিই না। ওখানকার মানুষের যে ভাবে সুবিধে হবে, আলোচনার মাধ্যমে তা-ই করা হবে।” গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে কোচবিহারের মাথাভাঙায় এসে মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় ঘোষণা করে গিয়েছিলেন, “ছিটমহলের এক ছটাক জমিও হস্তান্তরের প্রশ্ন নেই।”

মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত। জলপাইগুড়ির সভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সন্দীপ পাল

মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত। জলপাইগুড়ির সভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সন্দীপ পাল

নমিতেশ ঘোষ
দিনহাটা শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৫৮
Share: Save:

ছিটমহল বিনিময় নিয়ে তাঁর ঘোর আপত্তির কথা জনসভা থেকে ফেসবুক কোথাওই আড়াল করেননি মুখ্যমন্ত্রী।

নির্বাচনের মুখে কিন্তু কার্যত একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে তাঁর মন্তব্য, “ওখানকার মানুষ যা চান, তাই-ই হবে। আমি জোর করে কিছু চাপিয়ে দিই না। ওখানকার মানুষের যে ভাবে সুবিধে হবে, আলোচনার মাধ্যমে তা-ই করা হবে।”

গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে কোচবিহারের মাথাভাঙায় এসে মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় ঘোষণা করে গিয়েছিলেন, “ছিটমহলের এক ছটাক জমিও হস্তান্তরের প্রশ্ন নেই।” রাজ্যসভায় ছিটমহল বিল পেশ হওয়ার সময়েও তৃণমূলের তীব্র বিরোধিতা কিংবা ফেসবুকে ‘ভারতের জমি আমরা দিচ্ছি না’ বলে মুখ্যমন্ত্রীর পোস্ট উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন ছিটমহলের বাসিন্দাদের অজানা নয়।

সেই অনড় মনোভাব থেকে আচমকাই কি সরে এলেন মুখ্যমন্ত্রী?

সে প্রশ্নই তুলেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’। কমিটির সাধারণ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “তৃণমূল নেত্রীর কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছি। ভোটের আগে এমন ডিগবাজি!” তাঁর দাবি, রাজ্যসভায় ছিটমহল বিল পেশ হওয়ার সময় তৃণমূল সাংসদরা তুমুল বিরোধিতা করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফেসবুকেও পোস্ট করে ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, “ছিটমহলবাসীদের আত্মীয় কয়েক হাজার মানুষের ভোট পেতেই তাঁর এই ভোল বদল। এখন বলছেন, ছিটমহলের বাসিন্দারা যা চাইবেন তাই হবে। আমরা কোনটা বিশ্বাস করব বুঝে উঠতে পারছি না!”

‘ছিটমহল ইউনাইটেড কাউন্সিল’-এর উপদেষ্টা দেবব্রত চাকীও বলেন, “ভারতীয় ছিটমহলের যারা প্রকৃত বাসিন্দা, এক মাত্র তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়েই ছিটমহল-সমস্যার সমাধান করা উচিত। মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিই সে পথে হাঁটেন, তা হলে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।”

দিনহাটার সংহতি ময়দানে তাঁর নির্বাচনী জনসভায় এ দিন অবশ্য আদপেই বোঝা সম্ভব ছিল না যে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে মাস কয়েক আগেও ঘোর আপত্তি ছিল তাঁর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ভোট এলেই অনেকের ছিটমহলের কথা মনে পড়ে। ভোট তোলার ফায়দা নেয়। আমাদের সরকার জনগণনা করছে। সমীক্ষাও করেছে। আমি জোর করে বন্দুক দেখিয়ে জমি দখল করব না। আমি সমস্যার কথা জানি। আমাকে জ্ঞান দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।”

ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে ছিটমহলের সংখ্যা ১৬২টি। এর মধ্যে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল, যেগুলি রয়েছে বাংলাদেশে। ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ভারতে। যার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কোচবিহার, বিশেষত দিনহাটা মহকুমায়। বাংলাদেশি ছিটমহলগুলি ৭১১০ একর জমিতে ১৪ হাজার ২১৫ জনের বাস। ভারতীয় ছিটমহলে ১৭,১৫৮ একর জমিতে ৩৭ হাজার ৩৬৯ জনের বসতি।

সরকারি ভাবে ছিটের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার নেই। বস্তুত তাঁরা কোন দেশের বাসিন্দা, তা-ই নিশ্চিত নয়। তবে মশালডাঙা, পোয়াতুর, জবরার মতো অজস্র ছিটমহলের বাসিন্দারা আশপাশের গ্রামের মানুষের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে সহাবস্থানের ফলে তাঁদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছেন। আর সেই সুবাদেই তাঁদের অনেকেরই এখন ভোটাধিকার রয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ছিটের হাজার পনেরো মানুষ এখন ভোটাধিকার পেয়েছেন।

বিরোধীদের দাবি, সেই ভোটের দিকে তাকিয়েই তৃণমূল নেত্রীর এই মত ‘পরিবর্তন’। কমিটির এক নেতা বলেন, “কোচবিহার কেন্দ্রে দলের অবস্থা যে ভাল নয় তা বুঝতে পেরেছেন নেত্রী। গোয়েন্দা রিপোর্টেও সম্প্রতি বলা হয়েছে, খুব সামান্য ব্যবধানে ভোটের ফলাফল নির্দিষ্ট হবে। ফলে ওই হাজার পনেরো ভোটের অসীম গুরুত্ব রয়েছে। সে কথা বুঝেই এ বার ছিট-বাসীদের পক্ষে কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।” একটা সময় ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা কমল গুহ, দীপক সেনগুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য শুনে বিজেপি প্রার্থী হেমচন্দ্র বর্মন বলেন, “এত দিন কথা নেই। ভোটের মুখে ছিটমহলের কথা মনে পড়ল?” আর ফব-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ মনে করেন, “ভোটের তাগিদেই মুখ্যমন্ত্রী এই সব কথা বলেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chhit mahal mamata banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE