অবস্থান বদলানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছিটমহল বিনিময়ের কৃতিত্ব নিতে দেবেন না বলে জানিয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ এ বার ঘোষণা করলেন তিনিই বরাবর এই
দাবি করে আসছেন। যদিও ইউপিএ আমলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ছিটমহল বিনিময় সংক্রান্ত স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলটি সমর্থনের সিদ্ধান্ত নিলেও রাহুল সিংহের আপত্তিতে তা ঘোষণা করতে পারেননি।
তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন আগাগোড়া স্থলসীমান্ত চুক্তির বিরোধিতা করে গিয়েছেন, একই পথে হেঁটেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতিও। মমতার নির্দেশে সংসদে এ বিষয়ে বিল পেশ হওয়া মাত্র ওয়েলে নেমে হইচই করে, কাগজ ছিঁড়ে অধিবেশন ভেস্তে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদরা। আর নিজের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি সাজাতে গিয়ে রাহুলবাবু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বুঝিয়েছিলেন, ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধিতা করেই বেশি রাজনৈতিক লাভ। তাই তৃণমূল এই পথ নিয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার কোচবিহারের নয়ারহাটে ছিটমহলের ধারে জনসভা ডেকে দাবি করেছেন, আসলে বরাবরই তিনি ছিটমহল বিনিময়ের পক্ষে। ছিটমহলবাসীর অধিকার রক্ষায় তিনি চিরকাল সরব হয়ে এসেছেন, ভবিষ্যতেও হবেন।
শুক্রবার রাজ্য বিজেপি সভাপতিও কার্যত একই দাবি করে বোঝালেন, ছিটমহল নিয়ে ফায়দা তুলতে বিজেপি ও তৃণমূলের কেউ কারও চেয়ে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন।
নরেন্দ্র মোদী সরকার ছিটমহল বিনিময়ে উদ্যোগী হওয়ার পর শুক্রবার রাহুলবাবু বলেন, “জনসঙ্ঘ ধারাবাহিক ভাবে ছিটমহল বিনিময়ের দাবিতে আন্দোলন করে এসেছে।” তাঁর অভিযোগ, মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ছিটমহল বিনিময়ের বিপক্ষে কড়া অবস্থান নিলেও এখন তাঁর অবস্থান ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, ছিটমহল বিনিময়ে তাদের আপত্তি নেই। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি রাহুলবাবুর কটাক্ষ, “যিনি আগে ছিটমহল বিনিময়ের বিরোধী ছিলেন, তিনি এখন তার কৃতিত্ব দাবি করছেন। এটা হতে দেব না। ১১ ডিসেম্বর দিনহাটাতেই জনসভা করে আমি মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান বদলের নেপথ্যকাহিনি মানুষকে জানাব।”
রাহুলবাবুর ব্যাখ্যা, তৃণমূল-জামাত যোগ প্রকাশ্যে আসার পর বাংলাদেশের সিংহ ভাগ মানুষের কাছে অপ্রিয় হয়েছেন মমতা। কারণ, শেখ হাসিনা সরকারকে বিপাকে ফেলতে বাংলাদেশে হিংসার পরিবেশ তৈরি করেছিল জামাত-জঙ্গিরা। তাতে বহু মানুষ হতাহত হন। বিজেপি সভাপতির অভিযোগ, জামাতের ওই সব কার্যকলাপে তৃণমূলের ইন্ধনের কথা মানুষ জেনে ফেলেছেন। তা ছাড়া, মমতার সংখ্যালঘু-প্রীতি যে নাটক মাত্র, এ দেশের সংখ্যালঘুরাও তা বুঝে ফেলেছেন। সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়ন তিনি করেননি। এ জন্য মমতার সংখ্যালঘু ভোট এখন ক্ষয়িষ্ণু। রাহুলবাবুর কথায়, “বাংলাদেশের মানুষ এবং এ দেশের সংখ্যালঘুদের ক্ষয়িষ্ণু সমর্থন ফেরাতে এখন ছিটমহল বিনিময়কে হাতিয়ার করছেন মমতা।”
কিন্তু মমতার বিরুদ্ধে তিনি যে ডিগবাজির অভিযোগ তুলছেন, তা তো তাঁর ক্ষেত্রেও খাটে? রাহুলবাবুর যুক্তি, “ইউপিএ সরকার তখন ছিল যাওয়ার মুখে। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি নানা কারণে ওই সরকার তখন কোণঠাসা। বিজেপির সমর্থনে ছিটমহল বিনিময় করে ফেলতে পারলে কংগ্রেস একটা ইতিবাচক প্রচারের অস্ত্র পেত। সেটা কেন হতে দেব?” রাহুলবাবুর দাবি, “তখন বলেছিলাম, ছিটমহল বিনিময়ে বাংলাদেশকে বেশি জমি দিয়ে বদান্যতা দেখাতে হলে সেটা নতুন বিজেপি সরকার করবে। সেটা আমাদের রাজনৈতিক সুবিধা দেবে।” এখন সেই রাজনৈতিক সুবিধা পেতেই ১১ ডিসেম্বর দিনহাটায় সভা করতে চলেছেন রাহুলবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy