Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জমি-জটেই সড়কের কাজ থমকে, কোর্টে অভিযোগ

টাকা বরাদ্দ করাই আছে। কী ভাবে কাজ হবে, তার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। কিন্তু জমি মিলছে না বলেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ (চার লেন) আটকে আছে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করে এ কথা জানান ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এনএইচএআই) বা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এনএইচএআই-কর্তৃপক্ষের দাবি, কলকাতা থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় সড়কটি (৩৪ নম্বর) চার লেন করার জন্য ২০০৯ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে দু’হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৮
Share: Save:

টাকা বরাদ্দ করাই আছে। কী ভাবে কাজ হবে, তার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত। কিন্তু জমি মিলছে না বলেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ (চার লেন) আটকে আছে। সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামা দাখিল করে এ কথা জানান ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এনএইচএআই) বা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।

এনএইচএআই-কর্তৃপক্ষের দাবি, কলকাতা থেকে ডালখোলা পর্যন্ত ৪৫৩ কিলোমিটার জাতীয় সড়কটি (৩৪ নম্বর) চার লেন করার জন্য ২০০৯ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে দু’হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু নিছক জমি-জটের দরুন রাস্তা সম্প্রসারণে গতি আসেনি। ওই জাতীয় সড়কের বেহাল দশার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের ডিভিশন বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে এ দিন বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে এনএইচএআই-এর হলফনামা পেশ করেন আইনজীবী দীপঙ্কর দাস।

৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের বেহাল দশার জন্য গত ৮ অগস্ট শান্তিপুরের জনসভায় কেন্দ্রকে দায়ী করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই রানাঘাট শহরের লাগোয়া ওই জাতীয় সড়ক কেন্দ্র-বিরোধী পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে যায়। এই প্রসঙ্গে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ মন্তব্য করেছিলেন, “জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে গেলেই রাজ্যের শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা বাধা দেন।”

এনএইচআই-কর্তৃপক্ষের এ দিনের হলফনামাতেও জমি-সমস্যার কথাই বড় জায়গা পেয়েছে। তাঁরা জানান, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজটিকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। বারাসত-কৃষ্ণনগর, কৃষ্ণনগর-বহরমপুর, বহরমপুর-ফরাক্কা এবং ফরাক্কা-রায়গঞ্জ। কৃষ্ণনগর-বহরমপুর পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ ৪৮ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাকি অংশের কাজ ধীর গতিতে চলছে প্রয়োজনীয় জমি হস্তান্তর না-হওয়ায়। হলফনামায় এনএইচআই-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ গত বছরের ১ অগস্ট শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জমি না-মেলায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি।

ওই জাতীয় সড়কের দুর্দশার কথা জানিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা দায়ের করেছেন আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য। সেই মামলাতেই এনএইচআই-কর্তৃপক্ষকে হলফনামা পেশ করতে নির্দেশ দিয়েছিল প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। অঞ্জনবাবু ১১ অগস্ট আদালতে জানিয়েছিলেন, কলকাতা থেকে মালদহ পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ৩০০ কিলোমিটার অংশের হাল অবর্ণনীয়। বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত সড়কের অবস্থা সব চেয়ে খারাপ। ওই দিন ডিভিশন বেঞ্চের অন্যতম বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই বলেছিলেন, “মাসখানেক আগে আমি ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেছি। রাস্তার হাল খুব খারাপ।”

এ দিন পেশ করা হলফনামায় বলা হয়েছে, বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ৮৪ কিলোমিটার রাস্তা মেরামতির কাজ ঠিকাদার সংস্থা চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে শেষ করেনি। এনএইচআই-কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের জুলাইয়ে রাস্তা সারানোর জন্য ৪৫ কোটি টাকার নতুন বরাত দিয়েছেন অন্য একটি সংস্থাকে। সেই সংস্থা কাজ শুরু করেছে। কিন্তু বর্ষার জন্য মেরামতি (বিশেষ করে পিচ ঢালার কাজ) এগোয়নি। অক্টোবরে পিচ ঢালার কাজ শুরু হবে। বারাসত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত রাস্তা মেরামতি শেষ হবে আগামী জানুয়ারিতে। এনএইচএআই কর্তৃপক্ষ হলফনামায় জানান, নতুন সংস্থাটি আগামী দু’বছর ধরে ওই অংশের প্রয়োজনীয় মেরামতি ও সংরক্ষণের কাজ করবে।

হলফনামায় আরও বলা হয়েছে, ওই জাতীয় সড়কের বাকি অংশ যান চলাচলের উপযুক্ত রাখার জন্য গর্ত মেরামতি চলছে। ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব তাদের অংশের মেরামতির কাজ শেষ করতে হবে। মাস আষ্টেক আগেও ওই সড়কের বেহাল দশা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তা সারানোর নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তার পরে তড়িঘড়ি গর্ত বুজিয়ে সাময়িক ভাবে পরিস্থিতি সামাল দেন সড়ক-কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

land problem nh 34
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE