Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঠেকা দিতে নপরাজিতকে শীর্ষে আনার ইঙ্গিত

চেয়ারম্যান পদে বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের ইস্তফার পরে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এখন কী ভাবে চলবে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর ধন্ধে পড়েছে। নতুন চেয়ারম্যানের খোঁজ এখনও মেলেনি। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কিছু বিশিষ্টজন ইতিমধ্যে দু’-এক জন বিচারপতিকে বাজিয়ে দেখলেও এ পর্যন্ত কেউ সবুজ সঙ্কেত দেননি।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় ও অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৪ ২৩:২৪
Share: Save:

চেয়ারম্যান পদে বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের ইস্তফার পরে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন এখন কী ভাবে চলবে, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতর ধন্ধে পড়েছে। নতুন চেয়ারম্যানের খোঁজ এখনও মেলেনি। শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কিছু বিশিষ্টজন ইতিমধ্যে দু’-এক জন বিচারপতিকে বাজিয়ে দেখলেও এ পর্যন্ত কেউ সবুজ সঙ্কেত দেননি।
এমতাবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে অবিলম্বে কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করে স্বশাসিত সংস্থাটিকে অন্তত সচল রাখতে চাইছে রাজ্য সরকার। তিন সদস্যের কমিশনে এখন রয়েছেন সাকুল্যে এক জন রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়। ফলে সুপারিশ তো দূরস্থান, শুনানিও করা যাচ্ছে না। কারণ, শুনানি করতে হলে যে ‘কোরাম’ লাগে, তাতে অন্তত দুই সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন। পাশাপাশি চেয়ারম্যানের পদে পছন্দসই কাউকে এখন পাওয়া না-গেলে আপাতত নপরাজিতবাবুকে মাথায় রেখেই কাজ চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রের খবর। বৃহস্পতিবার নবান্নের এক কর্তা বলেন “নপরাজিতবাবুকে অস্থায়ী চেয়ারম্যান করার তোড়জোড় চলছে। দু’-এক দিনের মধ্যে রাজ্যপাল এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করবেন। তার পরে ধীরে সুস্থে নতুন বিচারবিভাগীয় সদস্য ও চেয়ারম্যানের খোঁজ করা হবে।”
অর্থাৎ পদ দু’টি পূরণ না-হওয়া পর্যন্ত নপরাজিতবাবুর নেতৃত্বেই কমিশন চালানোর সরকারি পরিকল্পনার ইঙ্গিত রয়েছে। আইন অনুযায়ী মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হতে পারেন হাইকোর্টের কোনও অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন তৈরি হওয়া ইস্তক বিভিন্ন হাইকোর্টের প্রধান হিসেবে কাজ করে আসা বাঙালি বিচারপতিদেরই তার শীর্ষে বসানো হয়েছে। “কমিশনে জমা পড়া অভিযোগের সিংহভাগ বাংলায় লেখা। চেয়ারম্যান বাঙালি হলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়।” যুক্তি দিয়েছেন এক সরকারি কর্তা।
এবং এটা মাথায় রেখে এ বারও স্বরাষ্ট্র দফতর বাঙালি বিচারপতির খোঁজে নেমেছিল। দেখা যায়, এই মুহূর্তে তিন রাজ্যের তিন হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতি পদে বঙ্গসন্তানেরা রয়েছেন। উত্তরাখণ্ডে বিচারপতি বারীন ঘোষ, হায়দরাবাদে বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত, আমদাবাদে বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য। বিচারপতি ঘোষ ও বিচারপতি ভট্টাচার্য কিছু দিনের মধ্যে অবসর নেবেন। নবান্নের ইঙ্গিত, কমিশনের দায়িত্বগ্রহণের জন্য রাজ্য এঁদের কাছে প্রস্তাব দিতে পারে। তবে অশোক-কাণ্ডের প্রেক্ষাপটে পরবর্তী চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক হয়ে এগোনোর পক্ষপাতী প্রশাসনের একাংশ। অন্য দিকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার যে সব অভিযোগ তুলেছেন, তার পরে কোনও বিচারপতি ওই দায়িত্ব আদৌ নিতে চাইবেন কি না, সেই সন্দেহও দানা বেঁধেছে স্বরাষ্ট্র দফতরের অন্দরে।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে কমিশনের পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে উঠে এসেছে কলকাতা হাইকোর্টেরই প্রাক্তন এক প্রধান বিচারপতির নাম। কে তিনি?
তিনি জয়নারায়ণ পটেল। যাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক যথেষ্ট হৃদ্যতাপূর্ণ। এমনকী, যাঁর এক নিকটত্মীয়ের বিয়েতে বিমান ভাড়া করে নাগপুরেও গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বিচারপতি পটেল আপাতত নিজের শহর নাগপুরে অবসর জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁর অবশ্য দাবি, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে এমন কোনও প্রস্তাব তিনি এখনও পাননি, এবং পেলেও গ্রহণ করবেন না। “অবসরের পরে চাকরির বহু প্রস্তাব এসেছিল। নিইনি। শান্তিতে দিন কাটাচ্ছি। নতুন করে কোথাও যোগ দেওয়ার ইচ্ছে নেই।” টেলিফোনে আনন্দবাজারকে বলেছেন বিচারপতি পটেল। পাল্টা প্রশ্নও ছুড়েছেন, “চাইলে তো মহারাষ্ট্রে বসেই নতুন চাকরি করতে পারতাম! কলকাতায় যাব কেন?”
চেয়ারম্যানের সন্ধান এই মুহূর্তে না-থাকলেও অবিলম্বে অন্তত কোনও প্রাক্তন বিচারপতিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করায় জোর দিয়েছেন সংস্থার প্রাক্তন কর্তারা। নচেৎ মানবাধিকার কমিশনের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে বলে তাঁরা মনে করছেন। তিন বছরের বেশি কমিশনের সদস্য ও দীর্ঘ দিন অস্থায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলে আসা বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীলের কথায়, “নপরাজিতবাবু একমাত্র সদস্য হয়ে থাকলে কোনও অভিযোগের শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন না। অস্থায়ী চেয়ারম্যান হলে অবশ্য অভিযোগের সত্যাসত্য যাচাই ও তদন্ত শুরুর অনুমতি দিতে পারেন। তবে তদন্ত-রিপোর্ট এসে গেলে ওঁর কিছু করার থাকবে না।”
কিন্তু ঘটনা হল, অস্থায়ী চেয়ারম্যান না-হলে অভিযোগের সত্যাসত্য বিচার ও তদন্ত শুরুর অনুমোদনটুকু দেওয়ারও ক্ষমতা নপরাজিতবাবুর থাকছে না। তাই এক জন বিচারপতিকে যত দিন না দ্বিতীয় সদস্য করে আনা হচ্ছে, তত দিন কমিশনের ন্যূনতম কাজ চালাতে নপরাজিতবাবুকে অস্থায়ী চেয়ারম্যান করতেই হবে বলে নবান্ন সূত্রের দাবি। এ হেন অচলাবস্থার দায় কার?
কমিশনের আর এক প্রাক্তন সদস্য অমিত সেন এ প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তিনি বলেন, “সরকারের অভিপ্রায় বোঝা মুশকিল। বিচারপতি শীল গত ১ নভেম্বর অবসর নিলেন। ১৭ নভেম্বর বিদায় নিলেন প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন রায়। অথচ প্রথমে ফাঁকা হওয়া বিচারবিভাগীয় পদটি পূরণ না-করে প্রশাসনিক সদস্যের শূন্য পদে নপরাজিতবাবুকে নিয়ে আসা হল!”
এর কোনও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদালয়ের আইন বিভাগের প্রাক্তন ডিন অমিতবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

naparajit human rights commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE