Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের সঙ্গে অম্ল-মধুর কৌশলে চলছে কংগ্রেস

সরকারের প্রস্তাবিত সর্বদল কমিটি থেকে এক দিকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে আবার বিধানসভার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকার পক্ষের সঙ্গে নৈকট্য বাড়ানোর চেষ্টা জারি! লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল তথা সরকারের সঙ্গে এমনই অম্ল-মধুর সম্পর্ক রেখে চলছে কংগ্রেস!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

সরকারের প্রস্তাবিত সর্বদল কমিটি থেকে এক দিকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে আবার বিধানসভার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকার পক্ষের সঙ্গে নৈকট্য বাড়ানোর চেষ্টা জারি! লোকসভা ভোটের পরে তৃণমূল তথা সরকারের সঙ্গে এমনই অম্ল-মধুর সম্পর্ক রেখে চলছে কংগ্রেস!

দলের মধ্যে চাপের মুখে পড়ে কংগ্রেসও শেষ পর্যন্ত সিপিএমের মতোই পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের প্রস্তাবিত সর্বদল কমিটিতে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাস ভাড়া বাড়ানোর জন্য বাস মালিকদের দাবি বিবেচনা করতে ওই কমিটি গড়ার কথা। সিপিএম এবং কংগ্রেস সরে দাঁড়ানোয় কমিটিতে যোগ দেওয়ার জন্য সরকার হাতে পেল একমাত্র এসইউসি-কে। যদিও এসইউসি বিধায়ক তরুণ নস্কর কমিটিতে গিয়ে ভাড়াবৃদ্ধির প্রস্তাবের বিরোধিতাই করবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন। কংগ্রেসের পরিষদীয় দল শুক্রবার যখন এই বিষয়ে সরকারের ডাকে সাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সে দিনই আবার বিধানসভার কক্ষে জলপাইগুড়ি জেলা ভাগের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায়। একই দিনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন দলের আর এক বিধায়ক মইনুল হক। গোটা ঘটনায় শাসক দলের সঙ্গে দূরত্ব রেখেও নৈকট্য গড়ে তোলার দ্বিমুখী প্রয়াস স্পষ্ট।

বিধানসভার চলতি অধিবেশনেই বিজেপির মোকাবিলায় কংগ্রেসের প্রতি বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

তার পর থেকে কংগ্রেসের তরফেও নৈকট্য গড়ে তোলার ইঙ্গিত মিলছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড আগামী সোমবার নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণের জন্য আলোচনায় ডেকে পাঠিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী, পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব এবং তিন প্রাক্তন প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্র, মানস ভুঁইয়া ও প্রদীপ ভট্টাচার্যকে। সেখানে সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও আলোচনায় আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত।

পরিষদীয় দলের আলোচনায় এ দিন কংগ্রেসের অধিকাংশ বিধায়কই মত দেন, সরকার বিরোধীদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে বাস ভাড়া নিয়ে অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে! সেই কমিটিতে দলের যাওয়া উচিত হবে না। মানসবাবু বলেন, “সরকার চালানোর দায়িত্ব যাঁরা পেয়েছেন, বাস ভাড়া নিয়ে সিদ্ধান্ত তাঁরাই নিন না!”

বিধানসভার ভিতরে অবশ্য ছিল অন্য ছবি! নতুন জেলা আলিপুরদুয়ারের ঘোষণার পরে দেবপ্রসাদবাবু বিধানসভাতেই উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন মুখ্যমন্ত্রীর। বলেন, “সব ভেদাভেদ, রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা ভুলে মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই!”

সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানসবাবু সভায় নিজের আসন থেকে মুুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ঝাড়গ্রামকেও আলাদা জেলা করার পরিকল্পনা কবে রূপায়িত হবে? জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রক্রিয়া চলছে। বিচার বিভাগের অনুমতি মিললেই তা চূড়ান্ত হবে। এর পরে পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো আবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে জানতে চান, ঝালদা ব্লককে মহকুমার মর্যাদা দেওয়ার দাবি অনেক দিনের। সেটা কবে বাস্তবায়িত হবে? তাঁকেও বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে গিয়ে দেখা করেন ফরাক্কার কংগ্রেস বিধায়ক মইনুল। তাঁর বক্তব্য, ২০০০ সালে ঠিক হয়েছিল, বিহার, ঝাড়খণ্ড হয়ে এ রাজ্যের উপর দিয়ে জাতীয় সড়ক ৮০ তৈরি হবে। বিহার, ঝাড়খণ্ডে ওই রাস্তার অংশ তৈরি হলেও এ রাজ্যে এখনও কাজ শুরুই হয়নি বলে মইনুল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানান।

কারও সেতু, কারও রাস্তার দাবি এই ভাবেই কি চলছে সেতু-বন্ধনের প্রয়াস? প্রশ্ন এখন কংগ্রেসের অন্দরেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

congress tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE