Advertisement
E-Paper

তাপস কি সাসপেন্ড হবেন? ইঙ্গিত নবান্নের শীর্ষেই

রাজধানীতে দলের প্রতিবাদে যতই তিনি সামনের সারিতে থাকুন, তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল সাসপেন্ড হতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে। সোমবার রাত পর্যন্ত দলের কোনও নেতা অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে ইতিমধ্যেই এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে দলীয় সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, এটা কোনও নতুন ভাবনা নয়। প্রকাশ্য সভায় তাপস যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগেই ভাবা ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫০

রাজধানীতে দলের প্রতিবাদে যতই তিনি সামনের সারিতে থাকুন, তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল সাসপেন্ড হতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে। সোমবার রাত পর্যন্ত দলের কোনও নেতা অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে ইতিমধ্যেই এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে দলীয় সূত্রে এ-ও বলা হচ্ছে, এটা কোনও নতুন ভাবনা নয়। প্রকাশ্য সভায় তাপস যে কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আগেই ভাবা ছিল।

নদিয়ার একাধিক গ্রামে দলীয় জমায়েতে তাপস পাল ‘দলের ছেলেদের ঘরে ঢুকিয়ে’ মহিলাদের ধর্ষণ করা এবং বিরোধীদের গলার নলি কেটে খুন করার মতো বিবিধ হুমকি দেন। মাস চারেক আগে তাঁর ওই সব জ্বালাময়ী বক্তৃতার ভিডিও ফুটেজ সামনে আসে। কিন্তু লোকসভার সদস্য তাপস তাঁর দলের কাছে চিঠি লিখে ‘ক্ষমা’ চাওয়ার পরে বিষয়টি দলের তরফে কার্যত ধামাচাপা দেওয়ারই চেষ্টা হয়। এমনকী তাপসের বিরুদ্ধে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ার পরে ‘বিষয়টি বিচারাধীন’ বলেও যুক্তি দেওয়া হতে থাকে। আপাতত আদালতের নির্দেশে তাপসের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সিআইডি তার তদন্ত এখনও শেষ করেনি। দীর্ঘ অনুপস্থিতির পরে এ বার লোকসভায় হাজির হয়ে তাই নিজের কৃতকর্ম নিয়ে কোনও রকম দুঃখ প্রকাশ তাপস করেননি। বরং সাধ্বী নিরঞ্জন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি প্রতিবাদে সরব।

এই পরিস্থিতিতে এখন তাপসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এই তৎপরতা কেন? নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, সংসদে সাধ্বী নিরঞ্জনের আপত্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদে তৃণমূল সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার পরে তাপস সম্পর্কে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সাধ্বী নিরঞ্জনের জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী সংসদের উভয় কক্ষে দাঁড়িয়ে ভুল স্বীকার করার পরে মমতার উপর নৈতিক চাপও বেড়েছে। তাই দেরিতে হলেও তাপসকে সাসপেন্ড করার মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে তিনি ‘সুশাসনের’ বার্তা দিতে চান। মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের ইঙ্গিত, লোকসভার চলতি অধিবেশন শেষে দল এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে।

অনেকের প্রশ্ন, তাপসকে দল থেকে সাসপেন্ড করাই কি যথেষ্ট? তিনি যে ধরনের কদর্য হুমকি দিয়েছেন, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা হবে না কেন? দল যদি তাঁকে সাসপেন্ডও করে, তাতে কি প্রশাসক মমতার ‘রাজধর্ম’ পালন করা হয়? ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ পুলিশি প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। একই ভাবে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়েও বহাল তবিয়তে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল এবং জেলার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। তাপসের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি একই রকম দাঁড়ায় বলেই অনেকের মত।

সম্প্রতি ডেপুটি স্পিকার সোনালি গুহ হাওড়ায় দলবল নিয়ে গিয়ে জনৈক চিকিৎসককে হেনস্থা করার পরে অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্ব দ্রুত তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। আদালতের আদেশে পুলিশ তদন্তেও নেমেছে। দলনেত্রীও বিষয়টি ‘ভাল চোখে’ দেখছেন না বলে খবর।

তা হলে কি তাপস এবং সোনালির বিরুদ্ধে কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিয়ে পুরভোটের আগে নিজেদের ‘মুখচ্ছবি’ বদলাতে চান মমতা? দলে অনেকের মতে, এটা অবশ্যই একটি কারণ। আবার অন্যদের মতে, এঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ না-হলে সবই হবে অর্থহীন। এক নেতার মন্তব্য: “যা হচ্ছে, তা দলের মুখরক্ষায় ন্যূনতম ব্যবস্থাগ্রহণ। রামায়ণে যেমন গরুড় দু’টি পালক খসিয়ে সুদর্শন চক্রের মান রেখেছিলেন, অনেকটা তাই।” ওই নেতার বক্তব্য, তাপসের ক্ষেত্রে নিছক দলীয় স্তরে ব্যবস্থা নিলে বা সোনালিকে পদ থেকে সরালে কাজ হবে না। অনুব্রত, আরাবুল, মনিরুল, তাপস, সোনালি সবার বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত রাজধর্ম নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।

আপাতত তাপসকে সাসপেন্ড করার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করলে সোমবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সী সকলেই এক বাক্যে দাবি করেছেন: “আমাদের এ নিয়ে বিন্দুবিসর্গ জানা নেই। এমন কিছু হচ্ছে বলেও শুনিনি।”

স্বয়ং তাপসের দাবি, “এটা ভিত্তিহীন খবর। আমাকে কেন সাসপেন্ড করা হবে? বিষয়টি তো বিচারাধীন। তা ছাড়া আমি ইতিমধ্যেই দিদির কাছে, দলের কাছে, বাংলার মা-বোনেদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।”

tapas pal tmc mp hate speech mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy