Advertisement
E-Paper

ধান গিয়েছে ফড়ের ঘরে, মার খাচ্ছে সরকারি শিবির

গোড়াতেই হোঁচট। ‘ধান্যগোলা’ বর্ধমানেই সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে শিবির করে মাছি তাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বর্ধমান জেলার অন্তত দু’টি ব্লকে ধান কেনার শিবির খুলেও চাষিদের দেখা পায়নি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএসসি)। মাঝপথেই শিবির বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ঘটনা হল, এখন সরকারি সহায়ক মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম অনেকটাই কম।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১২

গোড়াতেই হোঁচট।

‘ধান্যগোলা’ বর্ধমানেই সহায়ক মূল্যে ধান কিনতে শিবির করে মাছি তাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার।

ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বর্ধমান জেলার অন্তত দু’টি ব্লকে ধান কেনার শিবির খুলেও চাষিদের দেখা পায়নি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সরবরাহ নিগম (ইসিএসসি)। মাঝপথেই শিবির বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

ঘটনা হল, এখন সরকারি সহায়ক মূল্যের চেয়ে খোলা বাজারে ধানের দাম অনেকটাই কম। কিন্তু সরকারকে ধান বিক্রির এত হ্যাপা যে বহু চাষি কম দাম সত্ত্বেও পাইকারি ব্যবসায়ী তথা ফড়েদের কাছে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন। সরকারকে দেওয়ার মতো ধান তাঁদের হাতে আর নেই। আর সেই সুযোগে ইতিমধ্যে কম দামে কিনে রাখা ধানই চাষিদের সামনে রেখে সরকারি শিবিরে বেশি দামে বিক্রির ফন্দি আঁটছেন বহু ফড়ে।

সম্প্রতি রাজ্য সরকারের কাছে একটি রিপোর্টে জেলা খাদ্য দফতর জানিয়েছে, স্থানীয় ক্রেতারা (আসলে ফড়ে) চাষিদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ধান কিনে নিচ্ছেন। ফলে সরকারি ধান কেনার গতিতে ভাটা পড়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক সাধনকুমার পাঠক জানান, কাটোয়া ১ এবং রায়না ২ ব্লকে এক জন চাষিও স্থানীয় কিসান মান্ডিতে গিয়ে ধান বিক্রির উৎসাহ দেখাননি। ইসিএসসি-র তরফে বর্ধমান জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশ্বজিৎ হালদারও বলেন, “চাষিরা ধান বিক্রি করতে শিবিরে আসতে চাইছে না।” ইসিএসসি-র ধান ক্রয় পরিদর্শক সনৎকুমার সামন্তের আক্ষেপ, “তাই শিবির গুটিয়ে নিয়েছি।”

ঘটনা হল, এ বার ধানের সহায়ক মূল্য আগের বছরের চেয়ে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৩৬০ টাকা কুইন্টাল করা হয়েছে। উল্টো দিকে, বর্ধমান জুড়ে খোলা বাজারে ধানের দাম ইতিমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। মরসুমের শুরুর দিকে যা ছিল কুইন্টাল প্রতি ১২৫০ টাকার কাছাকাছি, তা কমে কোথাও ১১২০ টাকা, কোথাও ১১৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সে ভাবে ধান কেনা শুরু না করাই তার অন্যতম কারণ। এখন সরকার যখন ধান কিনতে চাইছে, চাষিরা আর আগ্রহী নয়।

কেন এই পরিস্থিতি? চাষিদের কথা থেকে উঠে আসছে: ১) সরকার নড়েচড়ে বসার আগেই ফড়েরা মাঠে নেমে পড়েছেন। নিজের ঘর থেকে নগদে ধান বিক্রি করতে পেরে কিছুটা কম দামেই রাজি হয়ে গিয়েছেন চাষিরা। ২) সরকারকে ধান বিক্রির নিয়ম হল, জমির নথি বা কিসান ক্রেডিট কার্ড দেখিয়ে ব্লক বা পঞ্চায়েত অফিস থেকে ‘চাষি’ বলে শংসাপত্র নিতে হবে। তার পরে গাড়ি ভাড়া দিয়ে শিবিরে গিয়ে ধান বিক্রি করতে হবে। কিন্তু কারও কাছ থেকেই মাত্র ১০ বস্তার (প্রতিটি ৬০ কেজি) বেশি নেওয়া হবে না। তা থেকেও ছাঁট বাবদ অন্তত চার কেজি বাদ। এই সামান্য পরিমাণের জন্য এত হ্যাপা পোহাতে বেশির ভাগ চাষিই রাজি নন। ৩) আগের অভিজ্ঞতা থেকে চাষিরা জানেন, শিবির থেকে হাতে-হাতে চেক মিললেও অ্যাকাউন্টে কবে টাকা ঢুকবে তার ঠিক নেই। কখনও চেকে তিন মাস পরের তারিখ থাকে, চেক বাউন্স হওয়ার অভিযোগও ওঠে। ৪) এর পরেও যে মুষ্টিমেয় চাষি সরকারি শিবিরে ধান বিক্রিতে আগ্রহী তাঁরা সময়ে খবর পাচ্ছেন না, কারণ শিবির নিয়ে যথেষ্ট প্রচার হচ্ছে না।

কাটোয়ার শ্রীখণ্ড গ্রামের তোরাফ শেখ, বজু শেখ, সানু শেখ বা গলসির সামসুদ্দিন শেখ, ভাতারের সুশান্ত দত্তরা প্রায় একমত, “সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করতে গিয়ে আমাদের সময়ও যায়, আর্থিক লোকসানও হয়। বরং বাড়িতে বসে দু’একশো টাকা কমে ধান বিক্রি করে লাভ।” পশ্চিমবঙ্গ ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় মেনে নেন, “ইতিমধ্যেই চাষিদের থেকে প্রচুর ধান কিনে আমরা গোলায় মজুত করেছি।”

এর পরে চাষিদের সামনে রেখেই এক শ্রেণির ফড়ে সরকারের কাছে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রির তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন। প্রয়োজনীয় শংসাপত্র সংশ্লিষ্ট চাষিদের দিয়েই জোগাড় করানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। ধান্য ব্যবসায়ী সমিতির তরুণবাবুও বলেন, “এর পরে রাজ্য সরকার ধান কিনতে চাইলে আমাদের থেকেই কিনতে হবে। আমাদের ছাড়া সরকারের চলবে না।”

burdwan rice collection centre soumen dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy