Advertisement
০৩ মে ২০২৪

নাবালিকার বিয়ে কী করে, ধমক খেলেন রেজিস্ট্রার

পুলিশি যোগসাজশে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতা নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্ত হয়েছিলেন মা। যে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বিয়ে দিয়েছিলেন, সোমবার তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। কোন পরিস্থিতিতে তিনি নাবালিকার বিয়ে দিলেন, সুভাষচন্দ্র দে নামের ওই ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে তা সাত দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, তাও সরকারের কাছে জানতে চান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৮
Share: Save:

পুলিশি যোগসাজশে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতা নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্ত হয়েছিলেন মা। যে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার বিয়ে দিয়েছিলেন, সোমবার তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। কোন পরিস্থিতিতে তিনি নাবালিকার বিয়ে দিলেন, সুভাষচন্দ্র দে নামের ওই ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে তা সাত দিনের মধ্যে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, তাও সরকারের কাছে জানতে চান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

সুভাষবাবুর আইনজীবী এ দিন আদালতে জানান, মেয়েটির বাবার সম্মতিতেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিচারপতি দত্ত তার উত্তরে বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। কারও সম্মতি থাকলেও এক জন রেজিস্ট্রার অপ্রাপ্তবয়স্ক একটি মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন না।”

পরে আদালতের বাইরে সুভাষবাবু পাত্রপাত্রীর পরিবারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করেন, “ছেলে এবং মেয়ের বাবা-মা বিয়েতে সাক্ষী ছিলেন। তাঁরা যদি বয়স লুকিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে আমার কী করার আছে?” রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনি বয়সের প্রমাণপত্র দেখতে চাননি? সুভাষবাবুর দাবি, “ওঁরা বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে আদালতের কাগজ জমা দিয়েছিলেন।” কিন্তু নিয়ম ভেঙে এক মাসের নোটিস না দিয়ে বিয়ে দেওয়া হল কেন? রেজিস্ট্রারের দাবি, “এ ক্ষেত্রে সামাজিক বিয়ের পরে রেজিস্ট্রি হয়েছে। সে জন্য এক সপ্তাহের নোটিসেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”

নাবালিকা মেয়েটি কিন্তু জানাচ্ছে, তার রেজিস্ট্রি বিয়েই আগে হয়েছিল। আদালতের বাইরে এ দিন মেয়েটি বলে, “আমার আগেই রেজিস্ট্রি হয়েছিল। পরে সামাজিক বিয়ে হয়।” মেয়ের মা-ও সে কথা সমর্থন করেন। বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তার জন্য পুলিশকেই দায়ী করেন। মায়ের অভিযোগ, “জন্মের প্রমাণপত্র থেকে শুরু করে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড, সর্বত্রই আমার মেয়ের বয়স ১৬ রয়েছে। পুলিশই বয়স ভাঁড়িয়ে বেশি বয়সের প্রমাণপত্র বের করে রেজিস্ট্রির ব্যবস্থা করে। পরে সামাজিক বিয়ে হয়।”

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৩ সালের ৮ জুলাই। ওই দিনই দত্তপুকুরের বাসিন্দা ওই মেয়েটিকে স্থানীয় যুবক ভিক্টর রায় ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মেয়েটির পরিবারের দাবি, পুলিশ তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করেনি। বারাসত থানা তাঁদের অভিযোগ না নিয়ে দত্তপুকুর ফাঁড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তার পর ভিক্টরের কলকাতা পুলিশে কর্মরত এক আত্মীয়ের মধ্যস্থতায় পুলিশই নাবালিকার সঙ্গে ভিক্টরের বিয়ের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ। দত্তপুকুর ফাঁড়িতে বসেই বিয়ে ঠিক হয়। প্রথমে রেজিস্ট্রি হওয়ার পরে ২৪ জুলাই সামাজিক মতে তাদের বিয়ে হয়।

ঘটনার শেষ এখানে নয়। মেয়েটি এখন অন্তঃসত্ত্বা। তারই মধ্যে এ বছর ১০ ফেব্রুয়ারি সে ভিক্টরের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের অভিযোগ আনে দত্তপুকুর থানায়। তার অভিযোগ, ভিক্টর তার বিবাহিত দিদির সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হতে চায়। সেই জন্য ওই দিদিকে নিজের বাড়িতে এনে রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে সে। অত্যাচার চালাচ্ছে। দাবি পূরণ না হলে অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশ বাড়বে বলেও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগপত্রে লিখেছিল মেয়েটি। মেয়ের মা পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে দুই মেয়ের নিরাপত্তা চেয়ে মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টে।

হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পরে অবশ্য পুলিশ তৎপর হয়। ২ মার্চ বীজপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার হয় ফেরার ভিক্টর। সে এখন পুলিশি হেফাজতে। ৭ মার্চ বারাসত আদালতে মেয়েটির গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। যদিও বারাসত আদালতে মেয়েটির মায়ের আইনজীবী গৌরাঙ্গ পাল এ দিন দাবি করেন, “হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও জবানবন্দি নিতে পুলিশ টালবাহানা করছিল। মেয়েটির পরিবারকে এখনও মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে পুলিশ।” হাইকোর্টে নাবালিকার আইনজীবী দেবজ্যোতি বসু জানান, নিগৃহীতার জবানবন্দি এ দিন আদালতে আনা হয়নি।

আগামী দিন সেই জবানবন্দি আনার নির্দেশ দেন বিচারপতি। ২১ এপ্রিল পরবর্তী শুনানি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

teenage marriage highcourt marriage registrar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE