Advertisement
E-Paper

নিম্নচাপের ভ্রূকুটিতে বৃষ্টি ভেজা মহানগর

ক্যালেন্ডারে পৌষ মাস। কিন্তু শীতের দেখা কই! উল্টে গুমোট গরম, বৃষ্টি আর ফাগুন-হাওয়ায় বসন্তের আভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে! শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ২১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ৮ ডিগ্রি বেশি। বিকেল হতেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে কলকাতায়! বাঁধভাঙা বৃষ্টি মানল না ছাতাও। কাকভেজা ভিজলেন পথচলতি মানুষ। সপ্তাহান্তের শীতের বিকেলে যাঁরা বেরিয়েছিলেন, আটকে পড়লেন মাঝপথেই। অনেকে আবার ছুটির ফাঁদে পা দিলেন না। পরিকল্পনা বাতিল করে থেকে গেলেন বাড়িতেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
অকাল বর্ষণে ভিজছে শহর। শনিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

অকাল বর্ষণে ভিজছে শহর। শনিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

ক্যালেন্ডারে পৌষ মাস। কিন্তু শীতের দেখা কই! উল্টে গুমোট গরম, বৃষ্টি আর ফাগুন-হাওয়ায় বসন্তের আভাস কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে!

শনিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গিয়েছিল ২১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা এ সময়ের স্বাভাবিকের থেকে ৮ ডিগ্রি বেশি। বিকেল হতেই আকাশ কালো করে বৃষ্টি নামে কলকাতায়! বাঁধভাঙা বৃষ্টি মানল না ছাতাও। কাকভেজা ভিজলেন পথচলতি মানুষ। সপ্তাহান্তের শীতের বিকেলে যাঁরা বেরিয়েছিলেন, আটকে পড়লেন মাঝপথেই। অনেকে আবার ছুটির ফাঁদে পা দিলেন না। পরিকল্পনা বাতিল করে থেকে গেলেন বাড়িতেই।

আবহবিদেরা অবশ্য বলছেন, ভরা পৌষের এই বৃষ্টি কিংবা শীতের উধাও হয়ে যাওয়ার পিছনে দায়ী একটি নিম্নচাপ। এ দিনই সে বঙ্গোপসাগর থেকে সরে এসেছে ওড়িশা ও লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গের উপরে। তার প্রভাবেই রাতে মিলছে দখিনা বাতাসের আমেজ।

প্রতি বছর শীতের দৌড়ে দক্ষিণবঙ্গে প্রথম তিনে থাকা শ্রীনিকেতনেরও ভোল বদলে গিয়েছে। এ দিন সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি! একই অবস্থা বাঁকুড়া-আসানসোলেরও। হাওয়া অফিসের খবর, কলকাতা বা শ্রীনিকেতনে এখন যা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রয়েছে, তা মার্চ (বাংলা ক্যালেন্ডারের হিসেবে ফাল্গুন মাসের দ্বিতীয়ার্ধ) মাসের স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সমান। জানুয়ারিতে পারদের এমন উত্থান সচরাচর দেখা যায় না বলেই আবহবিদেরা জানাচ্ছেন। সে দিক থেকে এ মরসুমের জানুয়ারি কিছুটা নজিরবিহীন-ই বটে। জানুয়ারি মাসে শেষ কবে এমন তাপমাত্রা দেখা গিয়েছিল, তা জানতে নথি ঘাঁটছেন আলিপুরের বিজ্ঞানীরা। তাঁদেরই এক জন বলেন, “গত এক দশকে এমন নজির মেলেনি।”

বাংলার শীত-বদল ছুঁয়ে ফেলেছে প্রতিবেশী বিহার-ঝাড়খণ্ডকেও। জানুয়ারিতে রাঁচি কিংবা পটনা শহরে কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে অভ্যস্ত বাসিন্দারা। কিন্তু শনিবার রাঁচি-পটনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭-১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে!

গরমের হাত ধরে বদল এসেছে দক্ষিণবঙ্গের শীত-ছবিতেও! ফুলহাতা সোয়েটার, টুপি তো দূর অস্ত্, শনিবার দুপুরে পথে বেরোতে সামান্য গরম জামাও গায়ে চাপাতে চাননি অনেকে। জানুয়ারির তিন তারিখে মেট্রোয় কিংবা বাসে স্লিভলেস টপ পরা কয়েক জন তরুণী-যুবতীকেও নজরে পড়েছে!

কেন এমন পরিস্থিতি? হাওয়া অফিস বলছে, নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে অতিরিক্ত জোলো হাওয়া ও মেঘ ঢুকেছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের পরিমণ্ডলে। তার ফলেই রাতে ভূপৃষ্ঠ তাপ বিকিরণ করতে পারেনি। কমেনি সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও। মেঘলা আকাশের জেরে মিলেছে গুমোট ভাব। পথে বেরিয়ে কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘামও। বিকেলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়েই মেঘ জমেছে। শুরু হয়েছে বৃষ্টি।

আবহবিদেরা বলছেন, প্রতি ঋতুর মতো শীতকালে আবহাওয়ার একটি নির্দিষ্ট ধারা রয়েছে। শীতকালে আকাশে মেঘ থাকে না। দিনের বেলা রোদ সরাসরি ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে। রাতে আকাশ পরিষ্কার থাকায় ভূপৃষ্ঠ সেই তাপ বিকিরণ করে। তার ফলেই রাতের তাপমাত্রা অনেক কমে যায়। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাকও হয় বিস্তর। হাওয়া অফিস সূত্রের ব্যাখ্যা, জানুয়ারি মাসে কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি। ফারাকটা প্রায় ১২ ডিগ্রির। যদিও দস্তুর হল, শীতে দিনের তাপমাত্রা সর্বোচ্চের বেশি থাকবে। রাতের তাপমাত্রা থাকবে সর্বনিম্নের কম। কিন্তু এ বার বঙ্গোপসাগরের আগন্তুক সেই সব রীতি ভেঙে দিয়েছে। আর এর জেরেই উধাও শীত।

তা হলে কি এ বার জানুয়ারিতেই পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলল শীত?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা অবশ্য তেমনটা বলছেন না। তবে শীত যে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে, তেমনটাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না তাঁরা। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “রবিবারও তাপমাত্রা এমনই থাকবে। কোথাও কোথাও বৃষ্টিও হতে পারে। সোমবার থেকে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।” তবে তাপমাত্রা কমতে শুরু করলেও এখনই কনকনে শীত পড়ার সম্ভাবনা তেমন নেই, জানিয়েছে আলিপুর হাওয়া অফিসই। তাদের মতে, তাপমাত্রা ধাপে ধাপে কমতে কমতে স্বাভাবিকের নীচে নামতে আরও দিন কয়েক লাগতে পারে।

মৌসম ভবন সূত্রের খবর, পাকিস্তান থেকে কাশ্মীরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ঢুকছে। তার জেরে আজ, রবিবার থেকেই উত্তর ও মধ্য ভারতে তাপমাত্রা কমবে। বাংলার নিম্নচাপটি দুর্বল হতে শুরু করলেই উত্তর ও মধ্য ভারত থেকে কনকনে উত্তুরে হাওয়া বাংলায় ঢুকবে।

সেই হাওয়ার হাত ধরেই এখন শীতের ফিরে আসার পালা!

rain winter weather kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy