Advertisement
০৭ মে ২০২৪

নিহত তৃণমূল কর্মীও এখন বিজেপির শহিদ

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে এ বার ‘শহিদ’ নিয়ে টানাপড়েন বিজেপি-তৃণমূলের। যাঁকে খুনের ঘটনায় অভিযোগ হয়েছে তাদেরই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, মাখড়া গ্রামের সেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেল হককে নিজেদের শহিদ বলে দাবি করে বসল বিজেপি! সোমবার মাখড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি-র সংঘর্ষে নিহত তৃণমূল কর্মী মোজাম্মেলের ভাইপোকে পাশে বসিয়ে মঙ্গলবার সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল।

বিজেপির মঞ্চে এই পোস্টারে শেখ মোজাম্মেলের নাম নিয়েই বিতর্ক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

বিজেপির মঞ্চে এই পোস্টারে শেখ মোজাম্মেলের নাম নিয়েই বিতর্ক। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে এ বার ‘শহিদ’ নিয়ে টানাপড়েন বিজেপি-তৃণমূলের। যাঁকে খুনের ঘটনায় অভিযোগ হয়েছে তাদেরই নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে, মাখড়া গ্রামের সেই সক্রিয় তৃণমূল কর্মী শেখ মোজাম্মেল হককে নিজেদের শহিদ বলে দাবি করে বসল বিজেপি!

সোমবার মাখড়ায় তৃণমূল ও বিজেপি-র সংঘর্ষে নিহত তৃণমূল কর্মী মোজাম্মেলের ভাইপোকে পাশে বসিয়ে মঙ্গলবার সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন বিজেপির বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। রাত পেরোতেই সেই মোজাম্মেলকে তাদের শহিদের তকমা দেওয়ায় নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। তৃণমূলের সন্ত্রাস, তৃণমূলের সঙ্গে জামাত যোগ, পুলিশকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা-সহ একাধিক অভিযোগের প্রতিবাদে সিউড়িতে জেলাশাসকের কার্যালয়ের পাশে ধর্নামঞ্চ গড়েছে বিজেপি। সেই মঞ্চে রয়েছে একটি পোস্টার, যার মাথায় লেখা: ‘শহিদ স্মরণে প্রতিবাদ মঞ্চ’। আর নীচে রয়েছে: ‘তৃণমূলী সন্ত্রাসের বলি বিজেপি কর্মী শেখ রহিম, শেখ এনামুল, শেখ তৌসিফ ও শেখ মোজাম্মেল স্মরণে’।

নিহতদের তালিকার প্রথম দু’জন (রহিম ও এনামুল) খুন হয়েছিলেন লোকসভা ভোটের পরেই। তাঁরা ইলামবাজারের বাসিন্দা। সোমবার মাখড়া গ্রামে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে ১৯ বছরের তৌসিফ মারা যান বলে বিজেপি-র অভিযোগ। তৌসিফের পরিবার বিজেপি সমর্থক হিসেবেই পরিচিত। গোল বেধেছে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মোজাম্মেলের নাম নিয়ে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের একাংশই পিটিয়ে মারেন মোজাম্মেল ও দুবরাজপুরের সালুঞ্চির বাসিন্দা শেখ সোলেমানকে। পিটুনিতে জখম মোজাম্মেলের দাদা, এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ এনামুল হক বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি।

ঘটনার পরপরই বিজেপি ‘কুকুরের মতো পিটিয়ে মেরেছে’ বলে সংবাদমাধ্যমে অভিযোগ করেন মোজাম্মেলের মেয়ে সাবিনা এবং স্ত্রী তফিজা বিবি। নিহত মোজাম্মেলের দিদি তথা ইলামবাজার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যা নুরেলা বিবি মঙ্গলবার পাড়ুই থানায় ২৩ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে অভিযোগও করেন।

এমন এক তৃণমূল সদস্যকে তাদের শহিদ বলে দাবি করাকে বিজেপি-র ‘নোংরা রাজনীতি’ হিসেবেই দেখছে তৃণমূল। তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মত্‌স্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, “মৃতদেহ নিয়েও যদি ফায়দা হয়, সেই সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি। এ থেকেই স্পষ্ট, কোন পথে নিজেদের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা করছে ওরা। এটা নোংরা রাজনীতি ছাড়া আর কী?” বীরভূম পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জাফারুল ইসলাম (যিনি নিজে তৌসিফ আলি এবং অন্য দুই বিজেপি কর্মী খুনে অন্যতম অভিযুক্ত) বলেন, “মোজাম্মেল যে তৃণমূল কর্মী, তার ঢের তথ্যপ্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে। বিজেপি যেটা করছে, সেটা এক কথায় নিচু রাজনীতি।”

তৃণমূল এটা বললেও, নিহতদের নিয়ে রাজনীতি করছে সিপিএম বা তৃণমূল, এই ছবি এর আগে একাধিক বার দেখেছেন রাজ্য। সে কামদুনিতে তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুনই হোক বা দত্তপুকুরে প্রতিবাদী যুবক সৌরভ চৌধুরীর হত্যা। এ বার সেই দলে নাম লেখাচ্ছে বিজেপি-ও।

মঙ্গলবারই অবশ্য মাখড়ায় গিয়ে একটা সহাবস্থানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। নিহত মোজাম্মেলের বড়দা শেখ মান্নানের বক্তব্য ছিল, “যা হওয়ার হয়েছে। গ্রামে শান্তি ফিরুক।” যদিও তৃণমূলের দাবি, ওই গ্রামে বিজেপি-র এতটাই দাপট যে, বাধ্য হয়ে তাদের কর্মী-সমর্থকেরা সহাবস্থানের পথে হেঁটেছেন। স্থানীয় সূত্রেও জানা যাচ্ছে, গ্রামের বিজেপি সমর্থকেরা ঘরছাড়া করেছিল তৃণমূলের ১৪টি পরিবারকে। গ্রামে ফিরতে চেয়ে যাঁদের নেতৃত্বে বহিরাগতেরা গ্রামে হামলা চলিয়েছিল বলে বিজেপি-র অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোজাম্মেল ও তাঁর দাদা এনামুলও। তা-ই বিজেপি সমর্থকদের রোষ গিয়ে পড়ে তাঁদের উপরে।

এই মোজাম্মেলকে কেন নিজেদের শহিদ হিসেবে দাবি করলেন? জেলা বিজেপি সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল বলেন, “সোমবার শুধু তৌসিফ নয়, উনিও তো মারা গিয়েছেন, তাই!”

তা হলে তৃতীয় নিহত শেখ সোলেমান আপনাদের শহিদ-তালিকায় নেই কেন?

জবাব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

makhra tmc bjp suri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE