Advertisement
১৯ মে ২০২৪

পাইপে ফাটল, গ্যাসে মৃত্যু কি না তবু সংশয়

ঝাঁঝালো গন্ধটা নিয়ে ধন্দ ছিল প্রথম থেকেই। কিন্তু তার উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার বৌবাজারের আরপুলি লেনে গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের লাইনে চার ইঞ্চি ফাটল ধরা পড়ার পরে তদন্তকারীদের ধারণা, ওই ঝাঁঝালো গন্ধটা গ্যাসেরই এবং সেটা বেরনোর উৎস ওই চার ইঞ্চি ফাটলটি। তবুও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পিছনে ওই গ্যাসই রয়েছে কি না, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি তদন্তকারীদের।

সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৯
Share: Save:

ঝাঁঝালো গন্ধটা নিয়ে ধন্দ ছিল প্রথম থেকেই। কিন্তু তার উৎস খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। শনিবার বৌবাজারের আরপুলি লেনে গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের লাইনে চার ইঞ্চি ফাটল ধরা পড়ার পরে তদন্তকারীদের ধারণা, ওই ঝাঁঝালো গন্ধটা গ্যাসেরই এবং সেটা বেরনোর উৎস ওই চার ইঞ্চি ফাটলটি। তবুও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সুমন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পিছনে ওই গ্যাসই রয়েছে কি না, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি তদন্তকারীদের।

ছাত্রীর মৃত্যুর পরেই গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের কর্মীরা একবার আরপুলি লেনে যান লাইন পরীক্ষা করতে। কিন্তু তখন তাঁরা কিছু খুঁজে পাননি। শনিবার তাঁরা ফের সেখানে যান। তখনই বহু পুরনো ওই পাইপলাইনের ফাটলের খোঁজ মেলে। মাটির ৮০ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে যাওয়া ওই লাইনের ঠিক উপরেই সুমন্তিকার ঘরের জানলা। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সুমন্তিকার ঘরের জানলার নীচে গ্যাসের লাইনে ফাটল ধরা পড়েছে। এর সঙ্গে ওই ছাত্রীর মৃত্যুর সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” বিষয়টি নিয়ে গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশনের কোনও বক্তব্য মেলেনি। এ দিন বিকেলে ওই সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজীব কুমারকে ফোন করা হলে প্রশ্নের মধ্যেই লাইন কেটে যায়।

তার পর আর তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি তিনি।

গত রবিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উল্টো দিকে আরপুলি লেনের একটি বাড়ির একতলার বন্ধ ঘর থেকে সুমন্তিকার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁর বন্ধু সুবর্ণা লামাকে। শুক্রবারই সুবর্ণাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বলছে, গ্রেটার ক্যালকাটা গ্যাস সাপ্লাই কর্পোরেশন লাইন মারফত যে কোল গ্যাস সরবরাহ করে তাতে মিথেন থাকে, যা যথেষ্ট ঝাঁঝালো। সুমন্তিকার দেহ উদ্ধারের সময়েও তাঁর ঘরে পাওয়া গিয়েছিল তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। তা থেকেই পুলিশের অনুমান, ঝাঁঝালো গ্যাসের কারণেই সুমন্তিকার মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও জানাচ্ছে, ঘুমের মধ্যেই শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ওই ছাত্রীর।

এ দিন সেই লাইনেই ফাটল তাঁদের অনুমানকে আরও দৃঢ় করেছে বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীদের একাংশ। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ঠিক কী কারণে মৃত্যু, তা ভিসেরা রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে। কিন্তু কবে সেই রিপোর্ট মিলবে, তা জোর দিয়ে বলতে পারেননি তিনি। ওই পুলিশকর্তার বক্তব্য, মেয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে সুমন্তিকার পরিবারের তরফে গ্যাস লাইনের ফাটল নিয়ে অভিযোগ করা হলে তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। মামলাও দায়ের করা যেতে পারে। তবে এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ সুমন্তিকার বাবা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “নিজেদের মধ্যে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেব।”

সুমন্তিকার পরিবার মন্তব্য না করলেও গ্যাস সংস্থার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে। তাঁর বক্তব্য, “ব্রিটিশ আমলের পাইপ লাইন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেই।” এ নিয়ে প্রশ্ন করলে গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, “সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার কোনও অধিকার আমার নেই।”

সুমন্তিকার ঘরের ঝাঁঝালো গ্যাস নিয়ে অবশ্য প্রথম থেকেই ধন্দে পুলিশ। তদন্তে নেমে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেও এসেছে তদন্তকারীদের মনে। যেমন, মাটির তলা দিয়ে গ্যাসের লাইন গেলেও তার উপরে সিমেন্টের আস্তরণ রয়েছে। তা ভেদ করতে গেলে গ্যাস নির্গমণের বেগ অনেক বেশি হতে হবে। আদৌ তা হয়েছিল কি? গ্যাস যদি সিমেন্ট ভেদ করে, তা হলে সিমেন্টের আস্তরণে তার কোনও চিহ্ন কেন দেখতে পেল না পুলিশ? তদন্তকারীদের একাংশের ব্যাখ্যা, গ্যাস বাতাসে ভর করে ছড়ায়। ঘরের ভিতরের চেয়ে বাইরের বাতাস অনেক জোরালো। তা হলে গ্যাসের নির্গমণ শক্তি কত জোরালো ছিল যে জানলার ছিদ্র দিয়ে ঘরে ঢুকে তা এক জনের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে?

এ সব প্রশ্নের জবাব পেতে তদন্তের গোড়াতেই ডাকা হয় রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির বিশেষজ্ঞদের। তাঁরা প্রথম দিন গ্যাসের উৎস পাননি। পরের দিন তাদের রসায়ন বিশেষজ্ঞরা এসেও উৎস খুঁজে পাননি। তবে নিয়ে গিয়েছিলেন ঘরের ভিতরের হাওয়ার নমুনা। ওই নমুনা গ্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে গ্রেটার ক্যালকাটা সংস্থার গ্যাস। মিলে গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু সেই রিপোর্ট শনিবার পর্যন্ত মেলেনি।

এ দিন ফের আরপুলি লেনে যান গ্যাস সংস্থাটির একটি দল। ব্রিটিশ আমলের লাইনের উপরে জমে থাকা মাটি ও ধুলোর আস্তরণ সরাতেই তাঁদের নজরে আসে পাইপের ফাটল। তদন্তকারীদের একাংশের মতে, সুমন্তিকারা যে বাড়িতে থাকতেন সেটি বেশ পুরনো। সেই বাড়ির মেঝেয় ফাটল থাকতেই পারে এবং সেখান দিয়ে সুমন্তিকার ঘরে গ্যাস ঢুকেছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে। বাড়ির মালকিন রমা চৌধুরী বলেন, “১০ বছর ধরে আমরা এখানে আছি। বাড়ির নীচে কী আছে, জানিই না। এখন খুব ভয়ে আছি। আবার কখন বিপদ আসে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sumantika bandyopadhyay gas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE