প্রার্থী হওয়ার খবর পাওয়ার পরে নিমু ভৌমিক। —নিজস্ব চিত্র।
এত দিন তাঁরা পুজোয় নিমুদার জন্য অপেক্ষা করে থাকতেন।
কেননা যতই ব্যস্ত থাকুন, পুজোর চার দিন তিনি পাড়ার মণ্ডপে কখনও ঢাক বাজিয়ে, কখনও ধুনুচি নাচ করে সবাইকে মাতিয়ে দেবেনই। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের পরে পড়শিদের মনখারাপ কমাতে বিভিন্ন বাংলা ছবির সংলাপ আউড়িয়ে সবাইকে হাসিয়ে দেওয়ার খ্যাতিও রয়েছে তাঁর।
বাংলা ছবির প্রবীণ অভিনেতা সেই নিমু ভৌমিক একেবারে ভোটে দাঁড়িয়ে পড়েছেন, ভাবতেই পারছেন না রায়গঞ্জের মিলনপাড়ার অনেকে। যে নিমুবাবুকে সিনেমা-টিভির পর্দায় দেখেই তাঁরা বেশি অভ্যস্ত, তাঁকে একেবারে হাতের কাছে পাওয়া যাবে, এ কথা চিন্তা করে-করেও ঘোর কাটছে না অনেকের।
নিমুবাবু বলেন, “দীর্ঘদিন রায়গঞ্জে নাটক করার পরে ১৯৫৪ সাল থেকে বাংলা ছবিতে ধারাবাহিক অভিনয় করছি। অভিনয়ের কাজে ব্যস্ত থাকায় গত ছ’দশক ধরে রায়গঞ্জে নিজের পৈতৃক বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ পাই না। তবে যতই ব্যস্ত থাকি, প্রতি বছর দুর্গাপুজোর চার দিন বাড়ি গিয়ে পাড়ার পুজোমণ্ডপে প্রতিবেশীদের সঙ্গে আনন্দ করি। লোকসভা নির্বাচনের সৌজন্যে এখন প্রতিবেশীদের কাছে বেশি করে থাকার সুযোগ পাব, তা ভেবেই ভাল লাগছে।”
এমনিতে সারা বছর কলকাতার গড়িয়ার কানুনগো পার্কে থাকেন নিমুবাবু। এক মাস আগে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “দল চেয়েছিল আমাকে যাদবপুরে প্রার্থী করতে। কিন্তু আমি রায়গঞ্জেই প্রার্থী হতে চেয়ে অনড় ছিলাম। রায়গঞ্জ শহরকে আমি নাটক ও সংস্কৃতির শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই শহরে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী থাকলেও তাঁরা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। রায়গঞ্জের মানুষ হিসেবে এই বিষয়টিই আমাকে নাড়া দেয়।” অশীতিপর নিমুবাবুর বাবা অবিনাশ ভৌমিক ১৯৬৮ সালে ও মা গিরিবালা ১৯৯৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন। নিমুবাবুর দুই দাদা ও এক বোন পরিবারের লোকজনদের নিয়ে কলকাতায় থাকেন। তাঁদের রায়গঞ্জের পৈতৃক বাড়িটি ভাড়া দেওয়া রয়েছে। সেই বাড়ির ভাড়াটে, ব্যবসায়ী প্রবীর বসাক বলেন, “পরিবার নিয়ে গত চার বছর ধরে নিমুবাবুর বাড়িতে রয়েছি। আমি কাজে ব্যস্ত থাকি। এই চার বছরে মাত্র এক বারই আমার নিমুবাবুকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।”
পড়শি ব্যবসায়ী স্বপন রায়, বধূ সবিতা গুহ ও গৌরী সাহাদের কথায় উচ্ছ্বাস, “ভাবতেই পারছি না, অভিনয় জগতের এমন এক জন কৃতীকে হাতের কাছে পাব। এত দিন তো তাঁর জন্য পুজো পর্যন্ত অপেক্ষা করে থাকতে হত।” নির্বাচনে কী ফল হবে, কারা নিমুবাবুকে ভোট দেবেন, তা নিয়ে প্রতিবেশীরা মাথা ঘামাচ্ছেন না। বরং নির্বাচনের সৌজন্যে তাঁকে কাছে পাওয়াটাই সবচেয়ে আনন্দের। রায়গঞ্জ সারণী নাটক দলের সম্পাদক অরূপ ধর, মূকাভিনয় ও তবলা শিক্ষক অমিতাভ মণ্ডলদের আর্জি, “ফল যাই হোক, নিমুবাবু যেনও সত্যিই শহরের সংস্কৃতি প্রসারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেন।”
প্রতি বারই রায়গঞ্জে এলে মিলনপাড়া লাগোয়া মোহনবাটি বাজারে একটি পানের দোকানে দাঁড়িয়ে কিসমিস, খেজুর, চানাচুর খান নিমুবাবু। দোকানের মালিক নারায়ণ সরকার বলেন, “উনি আমায় খুব ভালবাসেন। আমার দোকান ছাড়া অন্য কোনও দোকানে যান না। এখন দেখছি, দোকানে সবসময় কিসমিস, খেজুর ও চানাচুর রাখতে হবে।”বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, “সবাই চাইছেন, এক বার ওঁর সঙ্গে দেখা করে কথা বলতে। আশা করছি, এতেই সাফল্য আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy