জালে মাছ। আলমপুরে রাজ্য মৎস্য নিগমের খামারে সোহম গুহর তোলা ছবি।
পুজোয় এ বার রসনার পরিতৃপ্তির উপাদান হিসেবে বাঙালির পাতে রাজ্য মৎস্য দফতর হাজির করতে চলেছে ‘সিলভার পমপানো’। পমফ্রেট মাছের নতুন এই প্রজাতিকে পুজোর সময় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের মাধ্যমে কলকাতার রাস্তায় খাদ্য রসিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। দেশে একমাত্র চেন্নাইয়ের পর কলকাতাতেই এই ধরনের ভ্রাম্যমাণ গাড়ির মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে মাছ বিক্রির উদ্যোগ বলে জানান রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এমডি সৌম্যজিৎ দাস।
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম সূত্রে খবর, পমফ্রেটের এই নতুন প্রজাতি, সিলভার পমপানো মূলত সমুদ্রের মাছ। তবে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম দিঘা উপকূলে তাজপুর সৈকতের কাছে আলমপুর খামারে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছে এই মাছের। তামিলনাড়ুর মান্দাওপাম থেকে গত মার্চ মাসে প্রায় ১০ হাজার সিলভার পমপানো মাছের চারা এনে চাষ শুরু হয়। পুকুরে সমুদ্রের নোনা জল ভর্তি করে চলে মাছের চাষ। কলকাতায় আলমপুর মৎস্য খামারের প্রকল্প আধিকারিক সুজিত সরকার জানান, মৎস্য খামারে একটি এক হেক্টর পুকুর কেটে তাতে জলের লবণাক্ততার পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ পিপিটি ( পার্সেন্টেজ পার থাউজেন্ড) রেখে দেড় মিটার জলের গভীরতায় সিলভার পমপানো চাষ করা হয়েছে।
এর আগে পরীক্ষামূলক ভাবে বাগদা চিংড়ির বিকল্প ভেনামি চিংড়ি চাষ করে সফলতা মিলেছে। এই চিংড়ির স্বাদ বাগদা চিংড়ির মতোই, তবে দাম অপেক্ষাকৃত অনেক কম। যেখানে কিলোগ্রাম প্রতি বাগদা চিংড়ির দাম প্রায় ৭৫০-৮০০ টাকা, সেখানে ৫০০-৬০০ টাকার মধ্যে মিলছে এক কিলোগ্রাম ভেনামি চিংড়ি। ফলে কাঁচা ভেনামি চিংড়ির যেমন বিক্রি ভালই, তেমনি এই মাছ দিয়ে তৈরি নানা উপকরণের জনপ্রিয়তাও কম নয়। বতর্মানে শুধু রাজ্যে নয় দেশে-বিদেশেও রমরমিয়ে বিক্রি ও রফতানি করা হচ্ছে সেই চিংড়ি।
নিগমের জেনারেল ম্যানেজার বিজন কুমার মণ্ডল জানান, ইতিমধ্যে এক একটি সিলভার পমপানো প্রায় দুশো থেকে আড়াইশো গ্রামের ওজনের হয়েছে। পুজোর সময় মাছের ওজন তিনশো গ্রাম ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা নিগমের। কেমন দাম হবে এই সিলভার পমপানোর? রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের এমডি সৌম্যজিৎবাবু জানান, কিলোগ্রাম প্রতি এই মাছের দাম পড়বে প্রায় ৩৫০ টাকা। সেখানে পমফ্রেট মাছের বর্তমান বাজার দর ৪০০ টাকা তো বটেই।
রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ন্যাশনাল ফিসারিজ ডেভলপমেন্ট বোর্ডের (এনএফডিবি) পক্ষ থেকে রাজ্য মৎস্য দফতরে ১৪টি ভ্রাম্যমাণ গাড়ি দেওয়া হয়েছে। যার এক একটির মূল্য ১২ লক্ষ টাকা। এমনই অত্যাধুনিক দুটি ভাম্যমাণ গাড়ি করে কলকাতার রাস্তায় মৎস্য রসিকদের কাছে মাছ বিক্রি করা হবে। বাকি গাড়িগুলি নামানো হবে দিন কয়েক পরে। পুজোর ক’টা দিন দক্ষিণ কলকাতার যতীন দাস পার্ক ও উত্তর কলকাতার বাগবাজারের রাজবল্লভ পাড়ার পুজো মণ্ডপেও মৎস্য দফতরের স্টলের মাধ্যমে ‘সিলভার পমপানো’ হাজির করা হবে। সেখানে কাঁচা মাছের পাশাপাশি বিক্রি করা হবে সিলভার পমপানো মাছের ফ্রাইও। সেই ফ্রাইয়ের দাম প্রসঙ্গে এখনই মুখ খুলতে নারাজ রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম। তবে সেই দাম সাধারণ মধ্যবিত্তের নাগালেই থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
সৌম্যজিৎবাবু বলেন, “শুধু সিলভার পমপানো নয়, শারদ উৎসবে মৎস্য দফতরের উদ্যোগে ভেনামি মাছের তৈরি মালাইকারিও রসনা তৃপ্তির জন্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” সিলভার পমপানো থেকে ভেনামি মাছের মালাইকারি-র আস্বাদ এ বার শারদ উৎসবে বাঙালির অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠবে বলেই আশা মৎস্য দফতরের। পুজোয় বিভিন্ন মণ্ডপে ঘোরার ফাঁকে পেটে টান পড়লে সেই আকর্ষণের দোসর হতে প্রস্তুত ভোজনপ্রিয় বাঙালিও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy