Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পঞ্চায়েত সমিতির কর্মসূচিতে ব্রাত্য দুই বিধায়ক

বিধানসভা ভোটের আগে কালীঘাটে প্রতিটি জেলার সব স্তরের দলীয় নেতাদের ডেকে কোন্দল মেটানোর নির্দেশ দিয়ে চলেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তা বাস্তবে মানা হচ্ছে কি? সেই প্রশ্নই উস্কে দিল রবিবার রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির অনুষ্ঠান। এ দিন ওই পঞ্চায়েত সমিতির সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে প্রচার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৩
Share: Save:

নেত্রী তো নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু সবাই কি শুনছেন?

বিধানসভা ভোটের আগে কালীঘাটে প্রতিটি জেলার সব স্তরের দলীয় নেতাদের ডেকে কোন্দল মেটানোর নির্দেশ দিয়ে চলেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু, তা বাস্তবে মানা হচ্ছে কি? সেই প্রশ্নই উস্কে দিল রবিবার রানাঘাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির অনুষ্ঠান। এ দিন ওই পঞ্চায়েত সমিতির সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে প্রচার কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সেই কর্মসূচিতে জেলা সভাধিপতি বাণী রায়, রানাঘাটের সাংসদ তাপস মণ্ডল আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু ডাকা হয়নি রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক আবিররঞ্জন বিশ্বাসকে। অথচ, তাঁদের বিধানসভা এলাকাতেই অনুষ্ঠান!

নদিয়া জেলার গোষ্ঠী রাজনীতিতে তাপস ঘোষের উল্টো মেরুতে রয়েছেন পার্থবাবু ও আবিরবাবু। তাপসবাবু এই পঞ্চায়েত সমিতির টানা তিন বারের সভাপতি। ২০০৬ সালে রানাঘাট পশ্চিম কেন্দ্র থেকে তাপসবাবুকে কংগ্রেস নেতা শঙ্কর সিংহের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শঙ্কর সিংহ হেরেছিলেন মাত্র ১৮১ ভোটে। সেই সময় থেকেই শঙ্করবাবুর তৎকালীন ডান হাত বলে পরিচিত বর্তমান বিধায়ক ও রানাঘাটের পুরপ্রধান পার্থবাবুর সঙ্গে তাপস ঘোষের সম্পর্ক ‘অম্ল-মধুর’। পরে পার্থবাবুরা তৃণমূলে যোগ দিলেও সম্পর্কের উন্নতি হয়নি।

ওই পঞ্চায়েত সমিতির ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ছ’টি রয়েছে আবিরবাবুর বিধানসভা এলাকায়। আর চারটি পার্থবাবুর এলাকার। এই ব্লকে দীর্ঘ দিন ধরে সক্রিয় রাজনীতি করছেন তাপসবাবু। এলাকায় আধিপত্য নিয়ে তিন নেতার দ্বন্দ্ব বহু দিনের। রানাঘাট কলেজে কার প্রভাব থাকবে, তা নিয়েও তাপসবাবু ও পার্থবাবুর বিবাদ রয়েছে। সে সব জেনে স্বয়ং দলনেত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মেটানোর। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশ কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে প্রথম থেকেই সন্দিহান ছিলেন তৃণমূল কর্মীরা। এ দিনের ওই কর্মসূচিতে দুই নেতার অনুপস্থিতি যেন সেই সন্দেহকেই জোরালো করল।

ফোনে আবিরবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা জানান, তিনি আমন্ত্রণ পাননি। পার্থবাবুও বলেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কেউ কেউ এক সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত নন!’’ কেন নেত্রীর নির্দেশ মানা হল না?

অনুষ্ঠানের আয়োজক তাপসবাবুর যুক্তি, ‘‘এটা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মসূচি। তাই ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।’’ তা হলে সাংসদ আমন্ত্রণ পেলেন কী করে? সদুত্তর মেলেনি।

তবে তাপসবাবুর দাবি, ‘‘সংশ্লিষ্ট সকলকেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল।’’ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মসূচিতে বিধায়কদের ডাকাই রীতি। কারণ, বিধায়কেরা নিজের বিধানসভা এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির ‘এক্স অফিসিও’ সদস্য।

এ দিন সাংসদ তাপস মণ্ডল অনুষ্ঠানে যাননি। বীরনগরের কর্মিসভা সেরে ফেরার পথে কর্মীদের সঙ্গে দেখা করে যান সভাধিপতি বাণী রায়। তবে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা বলে পরিচিত কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। উজ্জ্বলবাবুর সঙ্গে তাপসবাবুর সখ্য রয়েছে। উজ্জ্বলবাবু মন্তব্য করতে চাননি। তবে গৌরীশঙ্করবাবুর টিপ্পনী, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতির কর্মসূচিতে এলাকার বিধায়ক ও সাংসদরা উপস্থিত না থাকলে কর্মসূচি সার্থকতা পায় কি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE