Advertisement
০৬ মে ২০২৪

পড়ুয়াদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ উপাচার্য, চুপ পুলিশি তাণ্ডব নিয়ে

ঠিক এক মাস আগে নিজের ‘প্রাণসংশয়ের আশঙ্কায়’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকেছিলেন তিনি। ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ। শুক্রবার সেই ছাত্রছাত্রীদেরই তৈরি করা মানবশৃঙ্খল দিয়ে নিজের দফতরে ঢুকলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। এই সাহায্যের জন্য আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “অরবিন্দ ভবনে ঢোকার জন্য ছাত্রছাত্রীরা আমাকে সেফ প্যাসেজ তৈরি করে দিয়েছে। ওরা আমার সন্তানের মতো।”

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকছেন অভিজিৎ চক্রবর্তী। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকছেন অভিজিৎ চক্রবর্তী। শুক্রবার।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২৩
Share: Save:

ঠিক এক মাস আগে নিজের ‘প্রাণসংশয়ের আশঙ্কায়’ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডেকেছিলেন তিনি। ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের বেধড়ক পেটায় পুলিশ। শুক্রবার সেই ছাত্রছাত্রীদেরই তৈরি করা মানবশৃঙ্খল দিয়ে নিজের দফতরে ঢুকলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। এই সাহায্যের জন্য আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “অরবিন্দ ভবনে ঢোকার জন্য ছাত্রছাত্রীরা আমাকে সেফ প্যাসেজ তৈরি করে দিয়েছে। ওরা আমার সন্তানের মতো।” তবে যা নিয়ে আন্দোলন, ১৬ সেপ্টেম্বরের সেই পুলিশি তাণ্ডব নিয়ে দুঃখপ্রকাশ তো দূরের কথা, এক বারের জন্যও মুখ খুললেন না উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার থেকে ক্যাম্পাসে প্রতীকী অনশনে বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ অভিজিৎবাবু ক্যাম্পাসে ঢোকেন। তাঁকে হেঁটে আসতে দেখে অরবিন্দ ভবনের সামনে জড়ো হন ছাত্রছাত্রীরা। প্রচুর নিরাপত্তারক্ষী পরিবেষ্টিত হয়ে অরবিন্দ ভবনের সামনে পৌঁছে উপাচার্য দেখেন, শ’খানেক ছাত্রছাত্রী জড়ো হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। থমকে গিয়ে ছাত্র প্রতিনিধিদের ডেকে পাঠান তিনি। তাঁদের সরে যাওয়ার জন্য বোঝান। ছাত্রেরা উপাচার্যকে জানান, তাঁকে ভিতর ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে না। ততক্ষণে বাইরে চলে এসেছেন রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ, পরীক্ষা নিয়ামক সাত্যকী ভট্টাচার্য-সহ অফিসারেরা। এসেছেন শিক্ষাকর্মীদের কেউ কেউ, যাঁদের অধিকাংশই তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সদস্য। নিরাপত্তারক্ষীদের এনে দেওয়া চেয়ারে অরবিন্দ ভবনের সামনেই বসে পড়েন উপাচার্য। তাঁর দাবি, চত্বর খালি করে ছাত্রছাত্রীরাই তাঁকে ভিতরে যাওয়ার রাস্তা করে দিন।

উপাচার্যকে তাঁর দফতরে ঢুকতে কেউ বাধা দেননি। উল্টে তিনি যাতে নির্বিঘ্নে অফিসে ঢুকতে পারেন, তার জন্য হাতে হাত ধরে মানবশৃঙ্খলের ‘সেফ প্যাসেজ’ তৈরি করেন পড়ুয়ারা। মুখে যদিও উপাচার্য-বিরোধী স্লোগান। তার পরেও কিছুক্ষণ উপাচার্য চেয়ারে বসে থাকেন। পরে মানবশৃঙ্খল এবং স্লোগানের ভিতর দিয়েই তিনি অরবিন্দ ভবনে ঢোকেন। তাঁর দফতরে ঢুকতে সাহায্য করায় ছাত্রছাত্রীদের প্রশংসা করেছেন অভিজিৎবাবু। জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা তাঁর সন্তানের মতো ও অত্যন্ত কাছের। তাঁদের আলোচনায় বসার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে, তাঁদের আলোচনায় রাজি করাতে সাত সদস্যের কমিটি গড়ছেন উপাচার্য। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ডিন ছাড়াও রেজিস্ট্রার, ফিনান্স অফিসার ও পরীক্ষা নিয়ামক থাকতে পারেন বলে খবর। আগামী সোমবার আনুষ্ঠানিক ভাবে ওই কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।

উপাচার্য পরে জানান, স্লোগান, আন্দোলন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলতেই পারে। ছাত্রছাত্রীদের দাবি ‘সহানুভূতি’র সঙ্গে দেখা ও আলোচনার মাধ্যমে তাঁদের ‘অভিমান’ দূর করার ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু পড়ুয়াদের মূল দাবিই তো তাঁর পদত্যাগ? তা হলে তিনি সেই দাবি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের কোনও জবাব অবশ্য অভিজিৎবাবু দেননি। ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকার ব্যাপারেও মন্তব্যে নারাজ তিনি।

গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় খুললেও উপাচার্য আসেননি। এ দিন অফিসে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি। জানান, শরীর খারাপ থাকায় কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেননি। উপাচার্যের কথায়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ১৬ কোটি টাকা অনুদান মিলেছে। প্রথমেই সেই কাজ করতে চাই।”

কিন্তু ছাত্র-শিক্ষকদের এই বিরোধিতার আবহে কী করে কাজ করবেন তিনি? উপাচার্যের জবাব, “আমি আগেও বহু বার বলেছি, আমাদের ছাত্ররা খুব মেধাবী, তারা পড়াশোনা করে। তারাই আজ সেফ প্যাসেজ করে দিয়েছে। তাদের কাছে আবেদন জানিয়ে বলছি, এই সময়টা জীবনের সুবর্ণ সময়। তাই এখনই ক্লাসে ফেরা দরকার। আমার মনে হয়, ওরা ব্যাপারটা বুঝতে পারছে, ক্লাসে ফিরছে। খুব শীঘ্রই সব ক্লাস শুরু হবে।” শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুব ভাল বলে দাবি উপাচার্যের। তাঁদের কাছ থেকেও তিনি অতীতের মতো সহযোগিতা পাবেন বলে উপাচার্যের আশা। শিক্ষক সংগঠন জুটা অবশ্য উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অনড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে ফিরলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নয়। গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশও ফেরানো দরকার।

শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও এ দিন জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীরা পঠনপাঠন স্বাভাবিক করা জরুরি বলে বুঝতে পারছেন, ক্লাসে ফিরছেন। তিনি বলেন, “পড়ুয়াদের মনে কোনও ব্যথা থাকলে আমাদের এসে বলতে পারে। কেউ তো ওদের বিরোধী নয়।”

বিকেল চারটে নাগাদ উপাচার্য যখন ক্যাম্পাস থেকে বেরোন, তখনও তাঁর বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের স্লোগান চলছে। তাঁরা উপাচার্যের পিছনে তাঁর গাড়ি পর্যন্ত যান। নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশের বেষ্টনীর মধ্যেই গাড়িতে ওঠেন তিনি। তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা জানিয়েছেন, আজ, শনিবারও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবার অনেক কম ক্লাস হয়েছে। কলা ও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার ছাত্রছাত্রীরা আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্লাস বয়কট তুলে নেবেন কি না, সে ব্যাপারে আগামী সোমবার সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jadavpur univercity abhijit chakraborty
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE