কাকদ্বীপের ধলেরখাল গ্রামে শিক্ষক গৌতম মণ্ডলের বাড়িতে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি:দিলীপ নস্কর
শিক্ষকের উপরে হামলার প্রতিবাদ করায় ভুগতে হল প্রাক্তন ছাত্রদেরও!
প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে স্কুলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দু’কথা বলায় প্রহৃত হয়েছিলেন কাকদ্বীপের শিবকালীনগর ঈশান মেমোরিয়াল হাইস্কুলের ইংরেজির শিক্ষক গৌতম মণ্ডল। অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এ বার ওই শিক্ষকের হয়ে ফেসবুকে প্রতিবাদ জানানোয় তাঁর দুই প্রাক্তন ছাত্রের এক জনকে তৃণমূলের লোকজন ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অন্য জনকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ তুললেন সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।
শনিবার কয়েক ঘণ্টার তফাতে ধলেরখাল গ্রামে গৌতমবাবুর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন কান্তিবাবু এবং সিপিএমের আইনজীবী নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। দু’জনেই গৌতমবাবুর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একই ভাবে বিঁধেছেন তৃণমূলকেও। সেই সূত্রেই কান্তিবাবুর অভিযোগ, “তন্ময় জানা নামে স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্র ফেসবুকে ওই শিক্ষককে মারধরের ঘটনার নিন্দা করায় তাঁকে তৃণমূল ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল নামে আরও এক প্রাক্তন ছাত্র একই ভাবে নিন্দা করায় বাড়িতে হামলা এবং তাঁকে মারধরও করা হয়েছে।”
ওই দুই প্রাক্তন ছাত্রের পরিবার অবশ্য জরিমানা বা হামলার কথা অস্বীকার করেছে। তবে, স্থানীয়দের অনেকেই মনে করছেন, তৃণমূলের ‘চাপে’ই দুই পরিবার সত্য প্রকাশ করতে চাইছে না। তাই থানাতেও তারা অভিযোগ জানায়নি।
তন্ময়ের বাড়ি কাকদ্বীপের পাঁচ নম্বর হাট গ্রামে। সে অন্য স্কুল থেকে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। এ দিন কান্তিবাবুর অভিযোগ নিয়ে তন্ময়ের মা কবিতাদেবী বলেন, “গৌতমবাবু ছেলের প্রিয় শিক্ষক। তিনি মার খাওয়ায় ছেলে সহ্য করতে না পেরে কম্পিউটারে কী সব যেন লিখেছিল। জানতে পেরে কিছু ছেলে এসে সাবধান করে দেয়। তার পর থেকে ছেলেকে শাসনে রেখেছি। ছেলে সেই লেখা মুছে দিয়েছে
বলে জানিয়েছে।” তাঁরা কাউকে কোনও জরিমানা দেননি বলে দাবি করেছেন কবিতাদেবী।
কৃষ্ণেন্দু মণ্ডলের বাড়ি বাণীবরের চক গ্রামে। বেশ কিছু দিন ধরেই তিনি কিডনির অসুখে ভুগছেন। এ দিন তাঁর বাবা হিমাংশু মণ্ডল বলেন, “ছেলে ফেসবুকে লিখেছিল, ‘গৌতমবাবু আমাদের প্রিয় শিক্ষক। ছাত্রেরা কী মনে করে?’ পরে শুনি গৌতমবাবুকে মারধর করা হয়নি। ছেলে ওই লেখা মুছে দেয়।” তাঁর দাবি, “তৃণমূলের লোকজন আমাদের বাড়িতে কোনও হামলা করেনি। বরং, তৃণমূলের আর্থিক সাহায্যেই ছেলের চিকিৎসা চলছে।”
গৌতমবাবুকে মারধরে প্রধান অভিযুক্ত ওই স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা শুভ্রাংশু কামার ওরফে বাবু সোনা। কান্তিবাবুর তোলা অভিযোগেও এসেছে শুভ্রাংশুর নাম। কান্তিবাবুর দাবি, “দু’টি ঘটনারই পিছনে রয়েছেন শুভ্রাংশু।” শুভ্রাংশু অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, “আমাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ওই দু’টি পরিবারের উপরে হামলা বা জরিমানার কোনও ঘটনাই ঘটেনি।”
এ দিন বিকাশবাবুর সঙ্গে এসেছিলেন কিছু আইনজীবীও। বিকাশবাবু গৌতমবাবুর কাছ থেকে গোটা ঘটনা শোনেন। গৌতমবাবুর বিচারের জন্য তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান। তাঁর অভিযোগ, “যদি প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা না নেয় তা হলে শাসক দলের মদতেই করছে। পুলিশ আধিকারিকেরা দুর্বল। কোনও ব্যবস্থা নিতে পারছে না।” পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, ঘটনার যথাযথ তদন্ত চলছে।
ওই শিক্ষককে আইনি পরামর্শের আশ্বাস দিয়ে এ দিন পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠীকে ফোন করেন বিকাশবাবু। শিক্ষকের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। পুলিশ সুপার তাঁকে আশ্বস্ত করলে গৌতমবাবুকে সোমবার থেকে স্কুলে যোগ দেওয়ার কথা বলেন বিকাশবাবু। প্রজাতন্ত্র দিবসের পর থেকেই স্কুলে যাচ্ছিলেন না তিনি।
গৌতমবাবু বলেন, “এই ক’দিনে অনেক বিদ্বজ্জন এসেছেন। আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। আমি সোমবার থেকে স্কুলে যাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy