Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিক্ষুব্ধ রাজ্য নেতাদের বার্তা দিয়ে অধীরের পাশেই দাঁড়ালেন রাহুল

লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একটি অংশ যখন অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসন্তোষ উগরে দিচ্ছেন, সে সময়ে আজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পাশেই দাঁড়ালেন রাহুল গাঁধী। দলের নিজস্ব ওয়েবসাইট ‘খিড়কি’-র মাধ্যমে গোটা দেশের কংগ্রেস নেতা-কর্মীর সঙ্গে আজ কথা বলেন দলের সহ-সভাপতি। কথা হয় পশ্চিমবঙ্গের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৪ ০৪:৩২
Share: Save:

লোকসভা ভোটে দলের প্রার্থী তালিকা তৈরি নিয়ে রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের একটি অংশ যখন অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসন্তোষ উগরে দিচ্ছেন, সে সময়ে আজ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পাশেই দাঁড়ালেন রাহুল গাঁধী। দলের নিজস্ব ওয়েবসাইট ‘খিড়কি’-র মাধ্যমে গোটা দেশের কংগ্রেস নেতা-কর্মীর সঙ্গে আজ কথা বলেন দলের সহ-সভাপতি। কথা হয় পশ্চিমবঙ্গের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও। কর্মীদের সঙ্গে সেই আলাপচারিতাতেই অধীর চৌধুরীকে লড়াকু বলে বর্ণনা করেন রাহুল। বলেন, পশ্চিমবঙ্গে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া কংগ্রেসকে অধীরই ঘুরে দাঁড় করাতে পারেন। সে জন্যই তাঁকে প্রদেশ সভাপতি পদের দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি।

বহরমপুরের সাংসদ তথা রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীকে রাহুল কেন প্রদেশ সভাপতি করেছেন তা নিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে বিশেষ ধন্দ নেই। অতীতে বাম জমানায় তো বটেই, সম্প্রতি পঞ্চায়েত-পুরভোটেও অধিকাংশ জায়গায় তৃণমূল হই-হই করে জিতলেও মালদহের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদকে কংগ্রেসের গড় হিসেবে ধরে রাখতে পেরেছেন এই দাপুটে নেতা। উল্টে কংগ্রেস কর্মীরাই প্রশ্ন তুলেছেন, অধীরবাবুকে প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব দিতে রাহুল এত দেরি কেন করলেন? কারণ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ তুলে রাজ্য ও জেলা স্তরের বহু নেতা-কর্মী ইতিমধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

সে দিক থেকে রাহুলের অধীর-প্রশংসা অপ্রত্যাশিত নয়। তবু এই প্রশংসার সময়টা তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ প্রার্থী তালিকা নিয়ে গত তিন দিন ধরে রাজ্য কংগ্রেসের কিছু নেতা ঘরে বাইরে অধীরকে বিঁধছেন। আব্দুল মান্নান রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। অধীরের কাজের পদ্ধতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রাজ্য কংগ্রেসের একাধিক নেতা সনিয়া-রাহুল-সি পি জোশীর দফতরে চিঠি ও ই-মেল পাঠিয়েছেন। তার পরেও রাহুল অধীরের পাশেই দাঁড়ালেন।

‘খিড়কি’-র মাধ্যমে আজ রাহুলের সঙ্গে কথা বলেন প্রদেশ কংগ্রেসের কিছু নেতা। এর নেপথ্যে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। বড়বাজারের নেতা ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠক রাহুলকে বলেন, “আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। কারণ, যাঁকে আপনি প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি করেছেন, তিনি মাটির নেতা।” সন্তোষের এই কথার মাঝেই রাহুল বলেন, “হ্যাঁ, উনি লড়াকু নেতা!” এর পরেই সন্তোষ বলেন, “কিন্তু আমার একটা ছোট্ট প্রশ্ন রয়েছে। বাংলায় কংগ্রেস যে জমি হারিয়ে ফেলেছে, তা কী ভাবে উদ্ধার করা যাবে?”

জবাবে রাহুল বলেন, “আমি মনে করি যে চার রাজ্যে কংগ্রেসের সব থেকে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলি হল পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, বিহার ও উত্তরপ্রদেশে। যত দিন বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের মনোবল ফেরাতে পারছি, তাঁদের কথা শুনছি, তত দিন রাজ্যে কংগ্রেস লড়তে পারবে না।” এখানেই থেমে না থেকে রাহুল বলেন, “অধীরজিকে এ কারণেই প্রদেশ সভাপতি করেছি। আমি জানি উনি মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ। বাংলার মানুষের জন্য, কংগ্রেসের জন্য উনি লড়ে যাবেন। এই লড়াই শুরু হয়ে গেছে, তাই শীঘ্রই বাংলায় ফারাকটা বোঝা যাবে।” রাহুল বলেন, “আমিও আপনাদের পাশে থেকে এই লড়াইটা করতে চাই। এজন্য খুব শীঘ্রই বাংলায় যাব।”

অধীরের সম্পর্কে রাহুলের এই প্রশংসা প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের প্রতি তাঁর বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এর পর কি প্রদেশ নেতাদের একাংশের অসন্তোষ থেমে যাবে? এই প্রশ্নের জবাবে অধীরবাবু আজ জানান, আবদুল মান্নানের সঙ্গে তিনি কাল রাতেই কথা বলেছেন। মান্নানকে তিনি বলেন, “আপনার কথা মেনেই হুগলি জেলার দুটি আসনে প্রার্থী স্থির করা হয়েছে। হুগলি আসনের প্রার্থীও আপনার কথা শুনেই চলবেন।” তবে এতেও যে বরফ গলেনি, তা আজ ফের ধরা পড়েছে মান্নানের কথায়। তিনি আজও বলেন, “যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কুড়ি বছর দলে কোনও পদ পাইনি। তবু সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি। এ নিয়ে আমি আপস করব না।”

শুধু মান্নান নন, প্রার্থী তালিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ওমপ্রকাশ মিশ্রও। তিনি বালুরঘাট থেকে প্রার্থী হওয়ার আশা করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে দমদমে প্রার্থী করা হচ্ছে, এমন কানাঘুষো শুরু হওয়ায় ওমপ্রকাশ হাইকম্যান্ডের কাছে তাঁর অসন্তোষ জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারেও অধীরবাবুর বক্তব্য, বালুরঘাট আসনের জন্য দু’জন দাবিদার রয়েছেন। স্থানীয় নেতা নীলাঞ্জন রায়, এমবিএ পাশ। চাকরি ছেড়ে রাজনীতি করছেন। সেখানকার ভূমিপুত্র তিনি। দ্বিতীয় জন হলেন, ওমপ্রকাশ মিশ্র। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে তাঁর পাণ্ডিত্য রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র তিনি। বালুরঘাটের সঙ্গে উনিও নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন। দু’জনের সম্পর্কেই হাইকম্যান্ডকে জানিয়েছি। এর পর তাঁরা কাকে প্রার্থী বাছবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তবে হ্যাঁ, হাইকম্যান্ডকে এ কথাও জানানো হয়েছে, দমদমে এক জন তাত্ত্বিক নেতাকে প্রার্থী করলে ভাল হয়।

রাজ্যের ১৭টি আসনে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে। বাকি ২৫টি আসনে প্রার্থী তালিকা এখনও ঘোষণা হয়নি। মূলত তিন-চারটি আসনে প্রার্থী বাছাই নিয়ে জটিলতা চলছে। তালিকা প্রকাশের পর সেই জট আরও বাড়বে, না রাহুলের আজকের বার্তার পর তা কমবে— কয়েক দিনের মধ্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE