গাঙ্গুরাম চা বাগানে লোক আদালতে চলছে বিচার।
শ্রমিকদের পেনশনের নথিতে সই করায় ভুল হওয়ায় ডানকান গোষ্ঠীর একটি চা বাগানের ম্যানেজারকে সর্তক হতে বললেন লোক আদালতের বিচারকমণ্ডলী। দ্রুত নথিতে সই করে পিএফ দফতরে জমা দেওয়ার নির্দেশও দিলেন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। রবিবার রাজ্যের প্রথম চা বাগান লোক আদালত বসেছিল শিলিগুড়ি লাগোয়া গাঙ্গুরাম চা বাগানে। এ দিন লোক আদালতের বিচারকমণ্ডলীর প্রধান ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি প্রদীপ কুমার বিশ্বাস। পিএফ এবং পেনশন সংক্রান্ত জমে থাকা অভিযোগ শোনা হয়েছে এ দিনের লোক আদালতে। চা শ্রমিক কার্লোস টিগ্গা অবসরের পরেও তিন বছর পরেও পেনশন পাননি বলে অভিযোগ। লোক আদালতে উপস্থিত ছিলেন পেনশন অফিসের কর্তারাও। তাঁরা জানান, পেনশনের নথিতে চা বাগানের ম্যানেজারের পুরো সই করার কথা থাকলেও, ম্যানেজার নামের অদ্যাক্ষর লিখেছেন। সে কারণে ওই শ্রমিকের পেনশন আটকে গিয়েছে। লোক আদালত শুরুর সময়েই আরও এক শ্রমিক সুশীলা বেকের পিএফের নথির সইতেও ম্যানেজারের একই ভুলের কারণে আটকে গিয়েছে বলে দফতরের কর্তারা লোক আদালতকে জানিয়েছিলেন। চা বাগানের ম্যানেজার ডেভিড ফ্রাঙ্ক জানান, তাঁর ভুল হয়ে গিয়েছে। এরপরেই প্রাক্তন বিচারপতি প্রদীপবাবু ম্যানেজারকে সর্তক করে বলেন, ‘‘দ্রুত সই করে দফতরে পাঠিয়ে দেবেন। এমন ভুল করবেন না।’’
ডানকান গোষ্ঠীর এই বাগানটি বর্তমানে ধুঁকছে। তিন মাস ধরে কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাসখানেক ধরে শ্রমিকদের মজুরিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বকেয়া রয়েছে গ্র্যাচুইটিও। চা শ্রমিকদের গ্র্যাচুইটি কেন বাকি রয়েছে তাও মালিকপক্ষের থেকে জানতে চান প্রাক্তন বিচারপতি। ম্যানেজার ডেভিড ফ্রাঙ্ক বিচারপতিকে জানান, চলতি বছরে কর্তৃপক্ষের আর্থিক সমস্যা রয়েছে। আগামী আর্থিক বছরে কর্তৃপক্ষ সব মিটিয়ে দেবেন। ম্যানেজারের দাবি শুনে প্রাক্তন বিচারপতি জানিয়েছেন, ‘‘ঠিক আছে। এটা রায়ের প্রতিলিপিতে নোট করা হবে।’’ ডানকান গোষ্ঠীর এই বাগানটি বর্তমানে ধুঁকছে। তিন মাস ধরে কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মাসখানেক ধরে শ্রমিকদের মজুরিও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের প্রথম লোক আদালত বসানোর জন্য এই বাগানটিই বেছে নিয়েছে রাজ্য আইনি সহায়তা সমিতি।
এ দিন চা বাগানের লোক আদালতের প্রদীপ বাবু ছাড়াও জেলা আইনি সহায়তা ফোরামের অমিত সরকার এবং আইনজীবী কাঞ্চন ভদ্র বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন। দার্জিলিঙের জেলা জজ মনোজিত মণ্ডল, অতিরিক্ত জেলা জজ অজয় কুমার দাস এবং রাজ্য আইনি সহায়তা সমিতির সদস্য সচিব অভিজিত সোম বাগানে উপস্থিত ছিলেন। পিএফ সংক্রান্ত অভিযোগেরই শুনানি হবে বলে আঞ্চলিক পিএফ দফতররে কর্তাদেরও উপস্থিত থাকতে বলা হয়। এর পরের চা বাগান লোক আদালতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরেরও উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বলে এ দিন জানানো হয়েছে।
সম্প্রতি শিলিগুড়িতে একটি আইনি সচেতনতা শিবিরে এসে চা বাগানের শ্রমিকদের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এবং হাইকোর্টের জোনাল জজ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী। সেই অনুষ্ঠানেই চা শ্রমিকদের অধিকার পাইয়ে দিতে চা বাগানের জন্য বিশেষ লোক আদালতের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। তারপরেই এ দিন প্রথম চা বাগান লোক আদালত অনুষ্ঠিত হল। সাধারণত জেলা বা মহকুমা আদালত চত্বরেই লোক আদালত বসে। যদিও, চা বাগানের ক্ষেত্রে চা বাগানে গিয়েই লোক আদালত বসবে। এ দিন লোক আদালত শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে দার্জিলিঙের জেলা জজ মনোজিতবাবু শ্রমিকদের বলেন, ‘‘আপনাদের আদালতের কাছে যেতে হচ্ছে না। আদালত-ই আপনাদের কাছে এসেছে।’’ নানা ছোটখাট কারণে চা শ্রমিকদের পিএফ আটকে থাকার ঘটনায় বিরক্তিও প্রকাশ করেছেন হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি। এ দিন লোক আদালতে উপস্থিত পিএফ দফতরের আঞ্চলিক আধিকারিক এম নেগুলি শ্রমিকদের পিএফের নথিতে বেশ কিছু পদ্ধতিগত কারণে সমস্যা রয়েছে বলে দাবি করেন। যা শুনে প্রাক্তন বিচারপতি প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা এখানে পদ্ধতিগত ক্রুটির বিচার করতে আসেনি। চা শ্রমিকরা যাতে দ্রুত তাঁদের ন্যায্য অধিকার পায় তার ব্যবস্থা করতে এসেছি।’’ বিচারকদের বাগানে পেয়ে চা শ্রমিকরা দ্রুত বাগান খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। চা বাগানের আলো-পানীয় জলের সমস্যার কথাও জানিয়েছেন। তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিচারকরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy