Advertisement
E-Paper

বাগান মালিক খুনে জড়িত মহিলারাও

সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে খুনে মহিলা শ্রমিকেরাও যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় বকেয়া নিয়ে বচসার পরে রাজেশবাবুকে এলোপাথাড়ি মারধর করে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয় ওই বাগানেরই একটি ঝোপে। রবিবার বাগানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পিকেটও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিন মহিলা সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যেও রয়েছেন বেশ কয়েকজন মহিলা শ্রমিক। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বাগানের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের দুই সদস্য সুনীল ওঁরাও এবং কাউরু ওঁরাও।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৫
জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মর্গ চত্বরে কফিনবন্দি সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালার মৃতদেহ। রবিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের মর্গ চত্বরে কফিনবন্দি সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালার মৃতদেহ। রবিবার সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

সোনালি চা বাগানের মালিক রাজেশ ঝুনঝুনওয়ালাকে খুনে মহিলা শ্রমিকেরাও যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহ করছে পুলিশ। শনিবার সন্ধ্যায় বকেয়া নিয়ে বচসার পরে রাজেশবাবুকে এলোপাথাড়ি মারধর করে পাথর দিয়ে থেঁতলে খুন করা হয় ওই বাগানেরই একটি ঝোপে। রবিবার বাগানটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ পিকেটও রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তিন মহিলা সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৫ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যেও রয়েছেন বেশ কয়েকজন মহিলা শ্রমিক। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বাগানের তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের দুই সদস্য সুনীল ওঁরাও এবং কাউরু ওঁরাও। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের ইউনিট সভাপতি তথা বাগরাকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনালি চা বাগান এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বাবুলাল ওঁরাওর স্ত্রী সঙ্গীতা ওঁরাওকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই ঘটনার পরে তৃণমূল নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতারা ধরা পড়েছেন। আর কার কী ভূমিকা রয়েছে সেটা দেখা দরকার।” কংগ্রেস সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ও এই দিন শিলিগুড়িতে বাগানের ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বর ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের ধারণা, রাজেশবাবুকে খুনের পিছনে শ্রমিকদের আড়াল থেকে কেউ উস্কানি দিয়েছিল। তা নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, চা বাগানে দাবি-দাওয়া নিয়ে গোলমাল হলে তা সামাল দেওয়ার দায়িত্ব মূলত ম্যানেজারদের। শ্রমিকদের হাতে ম্যানেজাররাই সাধারণত ঘেরাও হন। অতীতে ম্যানেজারকে মারধর, কোপানো, খুনের ঘটনাও ঘটেছে একাধিক বাগানে। কিন্তু মজুরি না পেয়ে শ্রমিকরা মালিককে খুন করেছেন, এমন ঘটনা ডুয়ার্সের চা বলয়ে নজিরবিহীন। সে জন্যই আড়াল থেকে শ্রমিকদের ওই ঘটনায় কেউ ইন্ধন দিয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ। জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল এ দিন বলেন, “তদন্তে নেমে অনেক তথ্য, অভিযোগ মিলছে। নানা সন্দেহের কথাও শোনা যাচ্ছে। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

এ ছাড়াও পুলিশ জানতে পেরেছে, বাগানটি বাম আমলে রাজ্য সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। পরে তা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়। বাগানের ম্যানেজার জানান, কলকাতা হাইকোর্ট নিযুক্ত একজন অফিসারের মাধ্যমে ‘কেয়ার টেকার’ হিসেবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাগানটি চালানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন রাজেশ। মেয়াদ ফুরোলে তদারকির দায়িত্ব অন্য কারও হাতেও যেতে পারে বলে বাগানের কয়েকজন অফিসার জানিয়েছেন। সে জন্য বাগানটি পেতে বেশ কয়েকজন আগ্রহী ছিলেন বলেও শ্রমিক ও কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন। রাজেশবাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের কয়েকজন স্বীকার করেছেন, বাগানের ‘কেয়ার টেকার’-এর দায়িত্ব যাতে ভবিষ্যতেও তাঁর হাতে থাকে সে জন্য তিনি চেষ্টাও করছিলেন। বাগান কর্তৃপক্ষের অন্দরের খবর, ওই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা রাজেশবাবু পুরোপুরি নিজের হাতেই রেখেছিলেন। পুলিশের এক অফিসার জানান, কে বা কারা বাগানটির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, সেই ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাত দিন ধরে বাগানে থাকা রাজেশবাবু ভাবতেই পারেননি, শ্রমিকেরা এতটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারেন। একজন মহিলা শ্রমিক জানান, তাঁরা মজুরি পেতে দেরি হবে শুনে প্রথমে ম্যানেজারকে লাগোয়া বাজারের ব্যবসায়ীদের সে কথা জানিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। ম্যানেজার তখন মালিককে ডেকে আনেন। শ্রমিকদের কয়েকজন মালিককে টেনে বাজারের দিকে নিয়ে যান। যাতে খোদ মালিকই দোকানদারদের জানিয়ে দেন যে, ধার দিলে সমস্যা হবে না। মহিলা শ্রমিকদের একাংশের বক্তব্য, তখনই কয়েকজন মালিককে কিল-চড় দেন। বিপদ বুঝে ম্যানেজারের বাংলোর দিকে পালানোর চেষ্টা করেন রাজেশবাবু। কিন্তু বৃষ্টির মতো পাথর পড়তে থাকায় মাথায় আঘাত লেগে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তারপরে তাঁকে ঘিরে ধরে পাথর দিয়ে থেঁতলে ও কুপিয়ে খুন করা হয় বলে তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত। এর পরেই শ্রমিকদের অধিকাংশ বাগান ছেড়ে পালিয়ে যান।


খুনে ধৃত সুনীল ওরাওঁ এবং কাউরু ওরাওঁ। জলপাইগুড়ি আদালতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

ঘটনার রাতেই দু’জনকে ধরে পুলিশ আদালতে হাজির করায়। বাকি ৩ জনকে এদিন ধরেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বাগানের তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের আর এক নেতা সানিয়া ওঁরাও ঘটনার পর থেকেই ফেরার। তরাই ডুয়ার্স প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক বাদল দাশগুপ্ত বলেন, “সানিয়া আমাদের সমর্থক হতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বিক্ষোভের ঘটনা সংগঠনগত ভাবে হয়নি।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, “এ ধরনের ঘটনা রাজ্য সরকার বরদাস্ত করে না। পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করবেই।”

ধৃত দুই শ্রমিকের দাবি, তাঁরা নির্দোষ। বাগানের বাসা লাইনের বাসিন্দা কাউরু বলেন, “পুলিশ অকারণে ধরেছে। শুনেছি মহিলারা বাগান মালিককে মেরেছে।” কোয়ার্টার লাইনের বাসিন্দা ধৃত সুনীলের অভিযোগ, “এক মাস মজুরি মেলেনি। শনিবারও মজুরি মিলবে না শুনে অনেকের মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তা বলে এমন রক্তারক্তি হবে ভাবিনি।”

রাজেশবাবুর দেহ ময়নাতদন্তের পরে এ দিন বিমানে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর মাসতুতো ভাই অজিত অগ্রবাল জলপাইগুড়িতে বলেন, “বাগানে সমস্যা থাকলে আলোচনায় বসে মেটানো যেত। কিন্তু যা ঘটল, সেটা সভ্য দেশে কাম্য নয়।” তবে ঘটনার পিছনে রাজেশবাবুর সঙ্গে ব্যক্তিগত শত্রুতাও কাজ করেছে কি না, তা-ও ভাবাচ্ছে পুলিশকে।

রাজেশবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। লালবাজার সূত্রের খবর, রাজেশবাবুর বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের হয় ২০০৮ সালে বেনিয়াপুকুর থানায়। তাঁকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। রাজেশবাবুর বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার অভিযোগ আনা হয় ২০১০ সালেও। পুলিশ জানিয়েছে, সেক্ষেত্রেও তিনি গ্রেফতার হন। পরে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।

kishore saha sonali tea garden rajesh jhunjhunwala murder
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy