Advertisement
E-Paper

বাচ্চার কান্না, ভেঙে পড়ল রাজিয়া বিবি

বিস্ফোরণের পরে যখন রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামীরা মেঝেতে পড়ে রয়েছে, পুলিশ ও দমকলকে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল তারা। এর পর থানায় নিয়ে গিয়ে আলাদা আলাদা দল তৈরি করে তাদের টানা জেরা করছিল পুলিশ। তাতেও তারা কখনও ভেঙে পড়েননি। এক বারও চোখের জল ফেলেনি দু’জনের কেউই। কিন্তু মঙ্গলবার জেরার সময়ে বাচ্চারা কাঁদতে শুরু করায় নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেলল রাজিয়া বিবি।

সৌমেন দত্ত

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৯

বিস্ফোরণের পরে যখন রক্তাক্ত অবস্থায় স্বামীরা মেঝেতে পড়ে রয়েছে, পুলিশ ও দমকলকে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল তারা। এর পর থানায় নিয়ে গিয়ে আলাদা আলাদা দল তৈরি করে তাদের টানা জেরা করছিল পুলিশ। তাতেও তারা কখনও ভেঙে পড়েননি। এক বারও চোখের জল ফেলেনি দু’জনের কেউই। কিন্তু মঙ্গলবার জেরার সময়ে বাচ্চারা কাঁদতে শুরু করায় নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেলল রাজিয়া বিবি। বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ধৃত দুই মহিলার অন্যতম।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন টানা জেরার সময়ে মায়েদের সঙ্গে থাকলেও কখনও কাদেনি রাজিয়া ও আলিমার দুই সন্তান। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে জেরার সময়ে প্রথমে রাজিয়ার সন্তান কাঁদতে শুরু করে। কোনও ভাবে তার কান্না থামানো যাচ্ছিল না। বাচ্চাকে টানা কাঁদতে দেখে শেষে কেঁদে ফেলে রাজিয়াও। এরই মধ্যে আলিমার সন্তানও কান্নাকাটি শুরু করে। তার পরেই জেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কান্নায় জামা ভিজে যাওয়ায় ওই দু’টি বাচ্চাকেই এ দিন নতুন জামা কিনে দিয়েছে পুলিশ।

বিস্ফোরণের ঘটনার পরে দুই মহিলা ও তাদের দুই শিশুকে বর্ধমান মহিলা থানায় রাখা হয়েছে। মহিলা পুলিশ চারটি আলাদা দল করে ওই মহিলাদের দফায় দফায় জেরা করছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃত মহিলারা কার্যত কোনও তথ্যই দিতে চায়নি। পুলিশদের সঙ্গে তারা রীতিমতো তর্ক করেছে। ঘটনার পরে ভেঙে পড়ার কোনও চিহ্ন তাদের মধ্যে ছিল না। জেরা চলাকালীন বার বার তারা চা খেতে চেয়েছেন। শিশুগুলিকে নিয়ে মিথ্যে আবেগ দেখিয়ে জেরা থেকে তারা রেহাই পেতে চেয়েছেন বলেও পুলিশের দাবি। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যেই রাজিয়া ও আলিমা কোলের শিশুকন্যাদের চিমটি কেটে কাঁদিয়ে দুধ খাওয়ানোর দোহাই দিয়েছে। তখন বাধ্য হয়ে জেরা থামাতে হয়েছে। পুলিশকর্তারা জানান, এক জনের স্বামী মারা গিয়েছে বিস্ফোরণে, আর এক জনের স্বামী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু ওই মহিলাদের দেখে তা বোঝার উপায় নেই। স্বামী মারা যাওয়ার জন্য রাজিয়া একবারও একফোঁটাও চোখের জল ফেলেনি।

ঠান্ডা মাথার গাঁয়ের দুই মেয়ে রাজিয়া ও আলিমাকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারী অফিসাররা। এক অফিসারা জানিয়েছেন, রাজিয়া ও আলিমাকে আলাদা ভাবে জেরা করার সময়ও তারা ভাঙা তো দূরের কথা এক বারও মচকায়নি। এক অফিসার বলেন, “আমরা গ্রামের দুই মহিলার এই হিমশীতল আচরণ দেখে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি।”

তদন্তকারী অফিসাররা জানিয়েছেন, তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে রাজিয়া ও আলিমা। পোড় খাওয়া অফিসাররা পর্যন্ত স্বীকার করেছেন, হিমশীতল, কঠিন ওই মহিলাদের মুখ থেকে কিছু বের করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে তাঁদের। তখন তদন্তকারীরা একটি কৌশল নেন। দুই মহিলাকে আলাদা ভাবে বসিয়ে জেরা করার সময়ে রাজিয়াকে পুলিশ বলে, তাঁর স্বামীকে রীতিমতো পরিকল্পনা করে আলিমা ও তাঁর স্বামী হত্যা করেছে। সে জন্যই আলিমার স্বামী প্রাণে বেঁচে গিয়েছে। তার পর দুই মহিলাকে মুখোমুখি বসানো হয়। তখন দুই মহিলাই একে অপরের দিকে তেড়ে যায় বলে পুলিশের দাবি।

তদন্তকারী অফিসাররা রাজিয়া ও আলিমার কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন ওখানে বিস্ফোরক বানানো হতো, ওই বিস্ফোরক বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কে সরবরাহ করত এবং বিস্ফোরক কাদের সরবরাহ করা হতো?

সোমবার পর্যন্ত তারা তেমন কিছু না বলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের দুই মহিলাকে আলাদা দু’টি ঘরে পুলিশ ও সিআইডি-র দল জেরা করা শুরু করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথমে তাদের সঙ্গে নানা রকম গল্প করা হয়। কখন ওই মহিলাদের ধৈর্য ভাঙবে সে জন্য অপেক্ষা করছিলেন গোয়েন্দারা। মন নরম করার জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বাচ্চা কোলে তাদের ছবিও দেখানো হয়। তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। তবে পুলিশের দাবি, এ দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ জেরায় রাজিয়া ও আলিমা দু’টি তথ্য দেয়এক, শিমুলিয়ায় তাদের যাতায়াত ছিল এবং দুই, বোরখার কাপড়ে মুড়ে আইইডি সরবরাহ করা হত, যেগুলি কওসর মোটর বাইকে করে নিয়ে যেত।

burdwan blast khagragadh khagragarh jamat shakil ahmed hasem mollah rajia bibi soumen dutta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy