Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বুদ্ধ-বিমানদের নিয়ে সাইবার যুদ্ধে আলিমুদ্দিন

প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা হাত পাকিয়েছেন ক’দিন আগেই। এ বার ভোট-মরসুমে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের নিয়ে টুইটারে আবির্ভূত হচ্ছে আলিমুদ্দিন! এ বারের লোকসভা ভোটে নতুন ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। স্বাভাবিক ভাবেই এই নতুনদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরিরা হাত পাকিয়েছেন ক’দিন আগেই। এ বার ভোট-মরসুমে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রদের নিয়ে টুইটারে আবির্ভূত হচ্ছে আলিমুদ্দিন!

এ বারের লোকসভা ভোটে নতুন ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। স্বাভাবিক ভাবেই এই নতুনদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। তাদের কাছাকাছি পৌঁছতেই আনুষ্ঠানিক ভাবে টুইটার হ্যান্ডল শুরু করছে রাজ্য সিপিএম। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুর হাতে আজ, মঙ্গলবার ওই হ্যান্ডলের (@CPIM_WESTBENGAL) আনুষ্ঠানিক সূচনা হওয়ার কথা। নির্বাচনী প্রচার তো বটেই, সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বিষয়েই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু, বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বা রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুর নিয়মিত মতামত পাওয়া যাবে ওই টুইটার হ্যান্ডলে। ঠিক যে ভাবে কেন্দ্রীয় সিপিএমের তরফে (@cpimspeak) ইদানীং পাওয়া যায় প্রকাশ, বৃন্দা কারাট বা ইয়েচুরির টুইট।

শুধু টুইটারই নয়, নেট-বান্ধব নয়া প্রজন্মের হাত ধরতে চেয়ে ফেসবুকেও আনুষ্ঠানিক ভাবে দলের অ্যাকাউন্ট খুলছে সিপিএম। তার মহলাও চালু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। বিধানসভা উপনির্বাচনের জন্য শান্তিপুর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীর নাম প্রথাগত বিবৃতির পাশাপাশি জানানো হয়েছে ফেসবুকে রাজ্য সিপিএমের ‘অফিসিয়াল’ অ্যাকাউন্টেই। যুগের সঙ্গে তাল রাখতে গত আড়াই বছর ধরে সোশ্যাল নেটওয়ার্ককে চুটিয়ে ব্যবহার করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামপন্থী নেতাদের মধ্যে অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয়। এ বার সিপিএম তাকেই প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ব্যবহার করতে চাইছে।

জাতীয় স্তরে নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি বা রাহুল গাঁধীর কংগ্রেস এবং রাজ্য স্তরে মমতার তৃণমূলের পরে বেশ খানিকটা দেরিতেই ওয়েব দুনিয়ায় দলগত প্রচেষ্টা শুরু করছে সিপিএম। সাইবার যুদ্ধে কী ভাবে এঁটে ওঠা যায়, আলিমুদ্দিন আপাতত তা দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্রকে। সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয়বাবু নিজেই ফেসবুক ও টুইটারে যথেষ্ট তৎপর। তিনি জানাচ্ছেন, সিপিএম আনুষ্ঠানিক ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হতে শুরু করায় সাম্প্রতিক কালে বামপন্থীদের সক্রিয়তাও সাইবার দুনিয়ায় বেড়েছে। গত লোকসভা ভোটের সময়কার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে অমিয়বাবুর বক্তব্য, “প্রতি বছর ভোটার লিস্ট সংশোধনের সময়ে গড়ে প্রায় ২% করে নতুন ভোটার যোগ হয়। গত পাঁচ বছর ধরলে হিসাবটা অন্তত ১২% হবে। গত লোকসভা ভোটের সময়ে যাদের ১২-১৩ বছর বয়স ছিল, তাদের প্রায় সকলেই এ বার ভোটার। ফেসবুক, টুইটারের মাধ্যমে এই নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছনোরই চেষ্টা হচ্ছে।” পাশাপাশি একই গতিতে চলছে মহল্লা বা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে প্রথাগত প্রচারও।

নেতাদের বক্তব্যই শুধু নয়, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশিকা মেনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের অ্যাকাউন্টকে তথ্য ভাণ্ডার হিসাবেও ব্যবহার করতে চাইছে সিপিএম। বিভিন্ন সময়ে তৃণমূল নেত্রী বা প্রতিপক্ষ শিবিরের অন্য গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের প্রতিশ্রুতির স্থান-কাল উল্লেখ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা প্রশ্ন তুলতে চায়, সে সব ঘোষণার এখন কী পরিণতি?

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং যাদবপুরের দলীয় প্রার্থী সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “এখানে আমাদের দলের বক্তব্য তুলে ধরা হবে। এলাকায় গিয়ে আমরা মানুষের মতামত নিয়েই থাকি। সোশ্যাল মিডিয়াতেও মানুষের মত যাচাই করা যাবে। এবং ভোটের পরেও এই প্রক্রিয়া চালু থাকবে।” ব্যক্তিগত ভাবে সুজনবাবু ফেসবুক, টুইটারে সক্রিয়। যেমন সক্রিয় মদন ঘোষ, রবীন দেব, মৃদুল দে-র মতো অন্য রাজ্য নেতারাও। তবে এ ব্যাপারে যাঁর ‘ফলোয়ার’ সংখ্যা সব চেয়ে বেশি, দলের রাজ্য কমিটির সেই তরুণ সদস্য ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কেই সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রচারের ফাঁকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কর্মসূচি নিয়মিত আপডেট করছেন কাঁথির সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহ। তাঁর অভিজ্ঞতা, “মধ্যবয়সী এবং বয়স্কদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নয়। ঘরে ঘরে গিয়ে তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছি। আর একেবারে নতুন প্রজন্মের যে ছেলেমেয়েরা দিনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই অনলাইন থাকে, তাদের জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কে (টুইটে @tapassinha6969) যোগাযোগ করছি।” তাপসবাবুদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একই পথে যাচ্ছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকও। সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, রজত দাসদের উদ্যোগে সোমবারই চালু হয়েছে তাদের নতুন সাইট ‘ফরওয়ার্ড ব্লক লাইভ’। অশোক ঘোষের মতো প্রবীণ নেতারও যেখানে ব্লগ থাকছে। ফ ব নেতা জয়ন্ত রায় মেনেই নিয়েছেন, “স্বীকার করতে অসুবিধা নেই, এই জায়গায় পৌঁছতে আমাদের অনেকটা সময় লেগে গেল!”

বিলম্বে অবশ্য দোষ দেখছেন না কেউই। তৃণমূলের এক সাংসদ স্পষ্টই বলছেন, “বিজেপি, তৃণমূল বা সিপিএম বলে নয়। এটা আসলে যুগের চাহিদা!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE