Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বুদ্ধের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ সোমেনরা

কমিশনে সাক্ষ্য দিতে এসে ২১ জুলাইয়ের আন্দোলন নিয়ে কংগ্রেসের তখনকার অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা বলে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই সাক্ষ্যের কথা জানার পরে তৎকালীন প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্র এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য, দু’জনেই প্রতিবাদ করেছেন। সোমেনবাবুর মন্তব্য, “কংগ্রেসের অন্দরে কী হচ্ছে না-হচ্ছে, তা আমার থেকে উনি বেশি জানেন দেখছি!”

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৭:০৪
Share: Save:

কমিশনে সাক্ষ্য দিতে এসে ২১ জুলাইয়ের আন্দোলন নিয়ে কংগ্রেসের তখনকার অন্তর্দ্বন্দ্বের কথা বলে নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর এই সাক্ষ্যের কথা জানার পরে তৎকালীন প্রদেশ সভাপতি সোমেন মিত্র এবং প্রদীপ ভট্টাচার্য, দু’জনেই প্রতিবাদ করেছেন। সোমেনবাবুর মন্তব্য, “কংগ্রেসের অন্দরে কী হচ্ছে না-হচ্ছে, তা আমার থেকে উনি বেশি জানেন দেখছি!”

ঘটনা হচ্ছে, ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের এই আন্দোলনের দিনে সোমেনবাবু এবং প্রদীপবাবু দু’জনের কেউই কলকাতায় ছিলেন না। দিল্লি গিয়েছিলেন। প্রশ্নটা তখনই উঠেছিল। কংগ্রেস মহলেই তখন বহু চর্চিত বিষয় ছিল সোমেন-মমতার দ্বন্দ্ব। কিন্তু এটাও ঠিক, পরে ২১ জুলাইয়ে শহিদ দিবস পালন করা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছাড়ার আগে তা করত যুব কংগ্রেস। ১৯৯৮ সালে দল ভাঙার পরে কংগ্রেস নেতৃত্বই সেই দায়িত্ব হাতে তুলে নেন।

সেই সময়ের দ্বন্দ্বকেই এ দিন কমিশনে সাক্ষ্য দিতে এসে উস্কে দিতে চেয়েছেন বুদ্ধবাবু। প্রাক্তন বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কমিশনের কাছে তিনি জানান, “তৎকালীন কংগ্রেস দলে অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়াও জেনেছিলাম। তাঁরাও বুঝেছিলেন, কাজটা ঠিক হয়নি।” বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় বুদ্ধবাবুকে জানান, কংগ্রেসের নেতারা কমিশনে সাক্ষ্য দিতে এসে কিন্তু ওই ঘটনায় পুলিশের নিন্দা করেছেন। বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবিও তুলেছেন। বিচারপতির প্রশ্ন, “আপনি কি ওঁদের দ্বিচারিতার অভিযোগ করছেন?” বুদ্ধবাবু তখন জবাব দেন, “আমি মন্তব্য করব না। আমরা কথা বলেছিলাম। অনেকেই এ রকম ঘটনা চাননি। আন্দোলন নিয়ে নয়, আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি ছিল।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন যুব কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর সঙ্গে সোমেনবাবুর দ্বন্দ্ব এর পরে ধীরে ধীরে তুঙ্গে ওঠে। যার জেরে ’৯৮ সালের প্রথম দিন তৃণমূল কংগ্রেস গড়েন মমতা। বুদ্ধবাবু সেই দ্বন্দ্বের কথা উস্কে দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের বর্তমান সম্পর্ককে আরও একটু খাদের দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছেন বলেই অনেকের অভিমত।

কিন্তু বুদ্ধবাবুর সাক্ষ্যের পরে সোমেন এবং প্রদীপের প্রতিক্রিয়া হল সম্পূর্ণ বিপরীত। সেই দ্বন্দ্বের কথা আড়াল করে প্রকারান্তরে তৎকালীন যুব নেত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছেন সোমেনবাবুরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে যা তাঁদের কাছে অস্বস্তিকর।

সোমেনবাবু বলেন, “প্রদেশ সভাপতি হিসেবে আমি দলের জরুরি কাজে সে দিন দিল্লিতে ছিলাম। আমার সঙ্গে ছিলেন প্রদীপ ভট্টাচার্যও। ঘটনার খবর পেয়েই আমরা কলকাতা ফিরে আসি।” তাঁর দাবি, “মমতার ওই কর্মসূচিতে আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল এবং পরবর্তী কালে ওই নারকীয় ঘটনা নিয়ে যে আন্দোলন হয়েছে, তা আমরা একসঙ্গে করেছি।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বুদ্ধবাবুর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেন, “যুক্তির খাতিরে যদি দলে মতভেদের কথা মেনেও নিই, তা হলেও কি গুলিচালনা যুক্তিযুক্ত ছিল?” প্রদীপবাবুও বলেন, “সে দিনের আন্দোলনে দলের পূর্ণ সমর্থন ছিল। দলের সর্বস্তরের নেতারা সেই আন্দোলনে ও পুলিশের গুলিচালনার প্রতিবাদে পরবর্তী কালে যাবতীয় কর্মসূচিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।” কংগ্রেস শিবিরের একাংশের ব্যাখ্যা, ২১ জুলাইয়ের আন্দোলন যাতে পুরোপুরি তৃণমূলের হাতে চলে না যায়, তাই এ দিন মমতার পাশে দাঁড়াতে হয়েছে সোমেন থেকে অধীরকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

nandigram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE