Advertisement
০১ মে ২০২৪

ব্যথিত জয়ের স্ত্রী, চিঠি নিয়ে দ্বিধায় তৃণমূলও

কেরলে গৌরী আম্মা। মধ্যপ্রদেশে মাধবরাও সিন্ধিয়া। পশ্চিমবঙ্গে হলেও হতে পারতেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাঙার পরে সিপিএমে চলে যাওয়া গৌরী আম্মার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছিল সিপিআইয়ে থেকে যাওয়া স্বামী টি ভি টমাসের। কংগ্রেসি মাধবরাওয়ের সঙ্গে কার্যত মুখ দেখাদেখি ছিল না কংগ্রেস ছেড়ে জনসঙ্ঘে নাম লেখানো মা বিজয় রাজে সিন্ধিয়ার।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪০
Share: Save:

কেরলে গৌরী আম্মা। মধ্যপ্রদেশে মাধবরাও সিন্ধিয়া। পশ্চিমবঙ্গে হলেও হতে পারতেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাঙার পরে সিপিএমে চলে যাওয়া গৌরী আম্মার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটেছিল সিপিআইয়ে থেকে যাওয়া স্বামী টি ভি টমাসের। কংগ্রেসি মাধবরাওয়ের সঙ্গে কার্যত মুখ দেখাদেখি ছিল না কংগ্রেস ছেড়ে জনসঙ্ঘে নাম লেখানো মা বিজয় রাজে সিন্ধিয়ার।

তৃণমূলের স্নেহচ্ছায়ায় ত্যাগ করে আচমকা বিজেপির হয়ে বীরভূম কেন্দ্রে ভোটে দাঁড়ানো অভিনেতা জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছেন তাঁর স্ত্রী অনন্যা। শুক্রবার সিউড়ির চাঁদমারির মাঠে জনসভায় সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “এখানে বিজেপির যিনি প্রার্থী হয়েছেন তাঁর পরিবারটা কী করে চলে, কে চালায়, কার টাকায় চলে, একটু খোঁজ নিন। খোঁজ নিন, তাঁর বউ তাঁকে সমর্থন করেন কি না। ওঁর বউ আমাকে যে চিঠি দিয়েছেন, তা শতাব্দী আর কেষ্টকে দিয়ে দেব, এলাকায় বিলি করার জন্য।”

গৌরী আম্মা, সিন্ধিয়া পরিবারের থেকে জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পটা আলাদা হল এখানেই যে, শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন অনন্যা। বলেছেন, “ওটা তো বন্ধ চিঠি ছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত ভাবেই দিয়েছিলাম। খোলা হলে তো সাংবাদিকদের হাতেই দিতাম। মুখ্যমন্ত্রীকে ভরসা করে যে চিঠি দিয়েছিলাম, সেটা দশ জনের কানে পৌঁছনোয় কষ্ট হচ্ছে।” আর জয় নিজে বলেন, “আমার স্ত্রী আমার সম্মতি নিয়েই নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে কী লিখেছিলেন তা অবশ্য আমি জানার চেষ্টা করিনি।”

অনন্যা ব্যক্তিগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দিলেও পাঁচ দশক আগে গৌরী আম্মা কিন্তু রাজনীতিকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন বেশি। তাঁর কথায়, “তখন পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে ব্যক্তিগত জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়নি। নিজেদের মধ্যে বারবার বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।”

রাজনীতির সম্পর্ক কেন ছাপ ফেলে ব্যক্তিগত সম্পর্কে? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত মনোবিদ্যার শিক্ষক দীপেশচন্দ্র নাগের মতে, “এটা মূলত আদর্শের প্রতি আনুগত্যের ব্যাপার। এই আদর্শটাকে মানুষ এত গুরুত্ব দেয় যে কাছের মানুষও ভিন্ আদর্শের কথা বললে তার সঙ্গে বিভেদ তৈরি হয়ে যায়।”

রাজনৈতিক বিভেদ ব্যক্তিগত জীবনে ঢুকে পড়াটা কোনও অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় বলেই মনে করছেন সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র। তাঁর কথায়, “বিশ্ব জুড়েই এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের এখানে সত্তরের দশকে এই প্রবণতাটা খুব বেশি ছিল। এখনও আছে।”

জয়ের স্ত্রী ব্যক্তিগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে তাকে আড়ালে রাখতে চাইলেও মুখ্যমন্ত্রী যে অস্ত্র তুলে দিয়ে গিয়েছেন, তা কি ভোটযুদ্ধে ব্যবহার করবেন তৃণমূল নেতারা? বীরভূম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায় বেশ খানিকটা দ্বিধায়। শনিবার তিনি বলেন, “আমি কোনও দিনই কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। আমি মনে করি, এ সবের প্রয়োজন পড়ে না। তা ছাড়া, জয়ের সম্পর্কে যদি কিছু বলতেই হয়, তা হলে অনেক কিছু আমি জানি। ওর স্ত্রীর লেখা চিঠির চেয়ে আরও অনেক বেশি।” শতাব্দী জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে জয়ের স্ত্রীর চিঠি এখনও তাঁর হাতে আসেনি। চিঠি পেলে দলের নির্দেশমতো কাজ করবেন। বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও বলছেন, “চিঠি হাতে পেলে কী করা যায় দেখব।”

কেন এই দ্বিধা?

বীরভূম কেন্দ্রের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতার কথায়, “সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের ব্যক্তিগত জীবনে অনেক কিছুই ঘটে। ভোটের প্রচারে এটা না আনাই ভাল। তৃণমূল প্রার্থীও অভিনেত্রী। কাদা ছোড়াছুড়ি হলে তার আঁচ আমাদের দলেও পড়বে।”

তৃণমূলের এর বিপরীত মতও অবশ্য রয়েছে। দলীয় সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, অনন্যাকে একটি সরকারি সংস্থার দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। তা থেকে তিনি নিয়মিত সাম্মানিক পান। জয় তাঁর ব্যবসাতেও সরকারের থেকে নানা ধরনের সাহায্য পেয়েছেন। সে কারণেই তাঁর লাগাতার আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষুব্ধ। বীরভূম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি সুকান্ত সরকার বলেন, “নুন খেলে গুণ গাইতে হয়। জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে উপকার পেয়ে আসছেন। এখন তাঁর স্বামী প্রতিনিয়ত শতাব্দী রায়কে আক্রমণ করছেন। ঢিল ছুড়লে পাটকেল তো খেতেই হবে।”

জয়ের বাবা প্রাক্তন পুলিশ অফিসার সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “আমার ৭৫ বছর বয়স। এখনও বেসরকারি অফিসে কাজ করি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কে সংসার চালায় তা খোঁজ নিয়ে দেখুন। শুনে মর্মাহত হলাম।” বিজেপি সূত্রে খবর, তাদের প্রার্থীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত চিঠিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এলে তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে যেতে পারে দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loksabha election tmc joy bandopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE