Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বাংলার দরদী সরকার দিল্লিতেও চান মমতা

দিল্লিতে এ বার সরকার গঠনে তাঁরা যে বড় ভূমিকা নেওয়ার আশা করছেন, দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারে তৃণমূল নেত্রী বারবারই বলছেন, দিল্লিতে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর দলনির্ণায়ক ভূমিকা নেবে।

পড়ে শোনাচ্ছেন ইস্তাহার। —নিজস্ব চিত্র

পড়ে শোনাচ্ছেন ইস্তাহার। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

দিল্লিতে এ বার সরকার গঠনে তাঁরা যে বড় ভূমিকা নেওয়ার আশা করছেন, দলের নির্বাচনী ইস্তাহারেও তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচারে তৃণমূল নেত্রী বারবারই বলছেন, দিল্লিতে সরকার গড়ার ক্ষেত্রে তাঁর দলনির্ণায়ক ভূমিকা নেবে। তাই দলের আসন পাওয়ার সম্ভাবনা মূলত পশ্চিমবঙ্গকে ঘিরে হলেও ইস্তাহারে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করে মমতা বুঝিয়ে দিলেন, দিল্লির দরবারে তাঁদের বাড়তি গুরুত্বের কথা তুলে ধরেই ভোটারদের মন পেতে চান তিনি। এটাই হবে তাঁদের তুরুপের তাস। কালীঘাটে শনিবার দলের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করে তৃণমূল নেত্রীর দাবি, “কংগ্রেস, বিজেপি বা সিপিএম নয়। এ বার তৃণমূলই একমাত্র বিকল্প।”

মূল ইস্তাহার বাংলায় হলেও সর্বভারতীয় রাজনীতিতে দলের আগামী ভূমিকার কথা মাথায় রেখে ইংরেজিতে আলাদা করে ১২ পাতার একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন মমতা। তাতে রয়েছে তৃণমূলের ৬২ দফা ‘ভিশন ও মিশন’-এর কথা। মমতার কথায়, “আমরা পশ্চিমবঙ্গে সরকারে আছি। বাংলা ইস্তাহারে তাই বিস্তারিত ভাবে বলেছি, রাজ্যে তিন বছরে আমরা কী করেছি। কেন্দ্রে তৃণমূল ক্ষমতায় এলে কোন নীতি অনুযায়ী কাজ করবে তা-ও বলা হয়েছে। দিল্লি-সহ অন্যান্য রাজ্যেও তৃণমূল লড়ছে। সে জন্য ইংরেজিতে একটি ইস্তাহার করে দিয়েছি। এর উপরে স্থানীয় বিষয় দিয়ে সেখানকার নেতৃত্ব ইস্তাহার করতে পারেন।”

গত লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের বড় লক্ষ্য ছিল বাংলায় পরিবর্তন আনা। এ বার লক্ষ্য দিল্লি। আঞ্চলিক দলের সীমিত লক্ষ্য থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা স্পষ্ট ইস্তাহারেও। শুরুতে ‘আমাদের আবেদন’ অংশে তৃণমূল নেত্রী জানিয়েছেন, গত তিন বছরে বাংলাকে কী ভাবে তাঁরা উন্নয়ন ও সুশাসনের পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। এর পরে রয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তৃণমূলের কর্মসূচির কথা। দুর্নীতিমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ, শিল্পের পক্ষে এবং কৃষকের স্বার্থবাহী, সর্বোপরি পশ্চিমবঙ্গের মতো কেন্দ্রে একটি জনদরদী সরকার গঠনই ইস্তাহারের মূল সুর। সেই সূত্রেই ইস্তাহারে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের কথা। প্রশাসনিক সংস্কার প্রসঙ্গে ‘ই-কাঠামো’ গড়ে তোলা তো আছেই, তার সঙ্গে দুর্নীতি দূর করতে দেশের সব রাজ্যে লোকপাল এবং লোকায়ুক্ত চালু করা, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার। তৃণমূল কেমন প্রতিরক্ষা নীতি ও বিদেশ নীতি চায়, তা-ও বলা হয়েছে। প্রতিরক্ষা নীতিতে সংস্কারের বিষয়ে মমতা বলেন, “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যা কেলেঙ্কারি হয়েছে, তাতে ভারতের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে! সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্যে আমরা ই-টেন্ডার এবং ই-প্রসেসের কথা বলেছি।” নির্বাচনী সংস্কারের প্রসঙ্গে মমতা বলেছেন, “নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি রোধ করতে সরকারি খরচে ভোট করতে হবে। ব্রিটেন, জার্মানি, বেলজিয়াম, রাশিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে যদি সরকারি খরচে ভোট হতে পারে, এখানে কেন হবে না?”

দিল্লিতে নির্ণায়ক হওয়ার লক্ষ্যে এই নয়া ধাঁচের ইস্তাহারে বদল এসেছে তার বহিরাঙ্গেও। পাঁচ বছর আগে তৃণমূলের ঝকঝকে, ইংরেজি ইস্তাহারে যে কর্পোরেট সংস্কৃতির ছোঁয়া ছিল, এ বারে তা নেই। প্রচলিত ধারায় ‘পেপারব্যাক বাইন্ডিং’। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “তৃণমূল যে মা-মাটি-মানুষের দল, তার ছাপ আমরা ইস্তাহারেও রাখতে চেয়েছি।”

ইস্তাহার প্রকাশ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক হয় ঘণ্টাখানেক। তৃণমূল নেত্রী সেখানে কংগ্রেসের পাশাপাশি একই তীব্রতায় আক্রমণ করলেন বিজেপি-কেও। বিঁধতে ছাড়েননি এ রাজ্যে সে ভাবে ছাপ না ফেলা আম আদমি পার্টিকেও। সিপিএমের মতোই তৃণমূলের ইস্তাহারেও বলা হয়েছে, রাজ্য ভাগ করতে হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের সম্মতি নিতে হবে। তবে তেলঙ্গানা প্রশ্নে কংগ্রেস-বিজেপি-সিপিএমকে এক সূত্রে বিঁধে মমতার অভিযোগ, “আমাদের প্রতিবাদ গ্রাহ্য করা হয়নি। সে দিন সংসদে অন্ধকূপ হত্যার মতো গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে! সেই কাজে কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএমও ছিল।”

এর জবাবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সম্ভবত জানেন না, সিপিএম রাজ্য ভাগের বিরুদ্ধে। আমরা তেলঙ্গানার বিরোধিতা করেছি প্রথম থেকে। অন্ধ্রেও করেছি, সংসদেও।” এর পরেই তাঁর কটাক্ষ, “তৃণমূল আগে সর্বভারতীয় দল হোক। তার পরে এ সব জানতে পারবে!” টিভিতে তৃণমূলের ইস্তাহার প্রকাশের খবর দেখার পরেই সূর্যবাবু বলেন, “অসত্য বলা মুখ্যমন্ত্রীর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে! ওঁকে বলতে চাই, বাম আমলেই রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করা হয়েছিল। সেই লোকায়ুক্ত মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত শাস্তি দিতে পারত। উনি আসার পরে লোকায়ুক্ত নিয়োগের জন্য আড়াই বছরে কোনও বিচারপতি পাননি। এখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, লোকায়ুক্ত করতে হবে!” মুখ্যমন্ত্রীকে আয়নায় নিজের মুখ দেখার পরামর্শ দিয়ে সূর্যবাবু বলেন, “আইএএস, আইপিএস-এ সংরক্ষণ চালু করবেন বলেছেন! এ সব হয় নাকি?”

ইস্তাহারে সারদা-কাণ্ডে সরকার যে বিচার বিভাগীয় কমিশন তৈরি করেছে, গ্রেফতার হয়েছেন সারদার কর্ণধার, তার উল্লেখ করা হয়েছে। ‘চিট ফান্ডের জন্মদাতা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে সিপিএমকে। এ নিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবির বিরোধিতায় লেখা হয়েছে, ‘সিপিএমের পোষা বন্ধু কংগ্রেস, সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সিবিআই বলে চিৎকার করছে’! শিক্ষক-নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত জটের প্রসঙ্গ ইস্তাহারে না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সূর্যবাবু বলেন, “মুখে স্বচ্ছতা, ই-গর্ভনেন্সের কথা বলে লাভ নেই!”

পাঁচ বছর আগে লোকসভা ভোটে বা তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে কৃষি বা জমি নীতি নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান যা ছিল, তার পরিবর্তন হয়নি। জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় আইনের সংশোধনীর সঙ্গে তৃণমূলের মতের ফারাকের কথাও ইস্তাহারে তুলে ধরা হয়েছে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অমিত মিত্র, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুব্রত বক্সী, ইন্দ্রনীল সেনরা ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠানে থাকলেও ছিলেন না মুকুল রায়। বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় কর্মিসভা থাকায় তিনি আসতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loksabha election delhi government tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE