উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য সার্চ বা সন্ধান কমিটি গড়া হয়ে থাকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বার রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষাকর্মী ও আধিকারিক বাছাইয়ের জন্য পৃথক সিলেকশন কমিটি তৈরি করতে চাইছে সরকার। এই বিষয়ে একটি বিল সোমবার বিধায়কদের দেওয়া হয়েছে। বিধানসভার চলতি অধিবেশনে বিলটি পেশ করা হবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় আছে।
সংশয় কেন? সরকারি সূত্রের খবর, রাজ্যপাল কিশোরীনাথ ত্রিপাঠী বিলটিতে এখনও সই করেননি বলেই সংশয় দেখা দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার এমন একটি কমিটি কেন তৈরি করতে চায়, এ ভাবে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসনেই হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও নানা ভাবে সেখানে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা হয়ে থাকে হামেশাই। আর শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কলেজেও পদগুলির জন্য প্রার্থী বাছাই করবে প্রস্তাবিত কমিটি।
বতর্মানে সংশ্লিষ্ট কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ই তো এই কাজ করে। তা হলে আলাদা নির্বাচন কমিটি গড়ার উদ্যোগ কেন? সরকার কেন্দ্রীয় ভাবে এই কাজ করতে চায়। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ ব্যাখ্যা করে জানানো হয়েছে, সুপরিকল্পিত ভাবে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখতে এ ভাবে কমিটি গড়ে কর্মী বাছাইয়ের উদ্যোগ শুরু হয়েছে। প্রার্থীদের এক জানলা ব্যবস্থার মাধ্যমে একাধিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদনের সুযোগ দিতেও সরকার কমিটি গঠন করতে চায় বলে জানানো হয়েছে বিলে।
কিন্তু প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই তো পৃথক নিয়মবিধি আছে। তা ছাড়া পাঠ্যক্রম, ছাত্রছাত্রী, ভৌগোলিক অবস্থান ইত্যাদির বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চরিত্রও আলাদা। তাই অফিসার (গ্রুপ ‘এ’ অফিসার বাদে), শিক্ষাকর্মী বাছাইয়ের পদ্ধতিতে সামঞ্জস্য রাখার প্রয়োজন কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। তার উপর এ ভাবে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করতে উদ্যোগী হয়েছে কি না, তা নিয়েও উঁকি দিচ্ছে প্রশ্ন। এমনকী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাছাইয়ের জন্যও এই ধরনের একটি পৃথক কমিটি তৈরি করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে সরকার। এতেও সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকবে বলে অনেকের আশঙ্কা।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা এসইউসি-র বিধায়ক তরুণকান্তি নস্কর এ দিন বলেন, “একটি স্টাফ সিলেকশন কমিটি তৈরি করার জন্য বিল আসছে বলে শুনেছি। এই বিষয়ে মূল আলোচনা করব বিধানসভার অধিবেশনেই।” তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বশাসন আছে। কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কী ধরনের কত জন কর্মী লাগবে, সেটা সেখানকার কর্তৃপক্ষই বুঝবেন। “এ ভাবে কমিটি গড়ে কর্মী বাছাইয়ের উদ্যোগ হলে তা সরাসরি স্বশাসনে হস্তক্ষেপ বলেই মনে হচ্ছে,” বললেন তরুণবাবু।
তবে শাসক দলের নেতারা মনে করেন, সরকার বেতন দেয় বলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তাদের ভূমিকা থাকা জরুরি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বিভিন্ন সময়ে এই যুক্তি দেখিয়ে এসেছেন। তবে প্রস্তাবিত বিল নিয়ে তিনি এ দিন মুখ খুলতে চাননি। বিলটি পেশ হলেই যা বলার বলবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy