Advertisement
E-Paper

বাড়তি টাকা দেওয়ায় ছাত্রদেরই দুষলেন পার্থ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পথে হাঁটলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে’, দু’পক্ষেরই সমান শাস্তি চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শিক্ষামন্ত্রীও সোমবার বলেন, “যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁরা কি অন্যায় করেননি?” তাঁর ইঙ্গিত, বিধি না মেনে নদিয়ার ভক্তবালা বি এড কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়তি ছাত্র ভর্তি করে যে অপরাধ করেছেন, শিক্ষকতার ডিগ্রি পাওয়ার আশায় বাড়তি টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে সেই একই অপরাধ করেছেন ছাত্ররা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৪ ০৫:১৪
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কোনও আশার আলো দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন চাপড়ার ভক্তবালা বি এড কলেজের এক ছাত্রী। বিতান ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে কোনও আশার আলো দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন চাপড়ার ভক্তবালা বি এড কলেজের এক ছাত্রী। বিতান ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পথে হাঁটলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে’, দু’পক্ষেরই সমান শাস্তি চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। শিক্ষামন্ত্রীও সোমবার বলেন, “যাঁরা টাকা দিয়েছেন, তাঁরা কি অন্যায় করেননি?” তাঁর ইঙ্গিত, বিধি না মেনে নদিয়ার ভক্তবালা বি এড কলেজ কর্তৃপক্ষ বাড়তি ছাত্র ভর্তি করে যে অপরাধ করেছেন, শিক্ষকতার ডিগ্রি পাওয়ার আশায় বাড়তি টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে সেই একই অপরাধ করেছেন ছাত্ররা।

কলেজে ভর্তি করতে বাড়তি টাকা নেওয়া যে অপরাধ, সে কথা সরাসরি একবারও বলেননি শিক্ষামন্ত্রী। বরং বলেছেন, “সেল্ফ ফিনান্সিং কোর্সে আবার মেধার ব্যাপার কোথায়?” আজ, মঙ্গলবার, বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ঘটনার ‘প্রকৃত তথ্য’ জানাবে, জানান তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা।

সোমবার সকাল থেকে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভিড় করেছিলেন ভক্তবালা কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ৩৯ জনকে ভর্তি করানোর অভিযোগে নদিয়ার কলেজটির অনুমোদন বাতিল করেছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর কলেজের বৈধ আসনের ১০০ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারলেও, বাড়তি ৩৯ জন পারবেন না। ওই ছাত্রছাত্রীদের দাবি, আসন পেতে তৃণমূলের ছাত্র নেতা থেকে কলেজের কর্মী, সকলকে বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে তাঁদের। অনেকে দিয়েছেন লক্ষাধিক টাকাও। এক ছাত্রী বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে কেউ জানে না, বিয়ের গয়না বন্ধক দিয়ে এক লক্ষ তিরিশ হাজার টাকা দিয়েছিলাম বিএড পড়ব বলে। এবার মুখ দেখাতে পারব না।”

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জড়ো-হওয়া ছাত্রদের অনেকে খোলাখুলি তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তন্ময় আচার্যের বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। নদিয়ার তেহট্টের বাসিন্দা সিরাজ খান ইতিহাসের ছাত্র। তিনি বলেন, “এই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আচার্য ও ক্যাশিয়ার প্রাণেশ্বর বিশ্বাসই চাপড়ার ওই কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। বাবার জমি বন্ধক রেখে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা প্রাণেশ্বরবাবুকে দিয়েছিলাম। উনি সামনে দাঁড়িয়ে ভর্তির ফর্ম ভরিয়েছিলেন। এখন ওঁর মোবাইল বন্ধ। তন্ময়েরও হদিশ নেই।”

চড়া সুদে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা ধার করে কলেজকে দিয়েছিলেন বাদকুল্লার ভূগোলের ছাত্র সৌমিত্র বিশ্বাস। “তন্ময়রা বলেছিল, সব ওদের হাতে। তখন জানতাম, সবাইকেই টাকা দিতে হয়েছে। তাই অবিশ্বাস করিনি।” অনেকে আবার দায়ী করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষকেই। বেথুয়াডহরির আবসার আলি শেখ পরিবারের চাষের জমি বিক্রি করে ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। “এর পরেও বিভিন্ন সময়ে কলেজ কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। না হলে পরীক্ষা দিতে দেবে না বলে ভয় দেখাত।” অমরবাবুর বিরুদ্ধে সঞ্জয় মজুমদারের অভিযোগ, ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি ৪০ হাজার টাকার রসিদ দিয়েছিলেন। “আমাদের রোলকল করত না। বলত, ঠিক সময়ে সব হবে।”

শিক্ষামন্ত্রী এই ছাত্র-ছাত্রীদেরই এ দিন ছাত্রনেতা আর কলেজ কর্তৃপক্ষের পাশে একই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। মুখ ফিরিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলুও। সোমবার তিনি দেখাই করেননি ছাত্রদের সঙ্গে। তবে এ দিনের ঘটনা নিয়ে তিনি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষা দফতরে। জনসংযোগ আধিকারিক নীলাদ্রি বিশ্বাস চার লাইনের একটি বিবৃতি পাঠ করেন। যার বক্তব্য, ভক্তবালা বি এড কলেজে ভর্তি-বিষয়ক অনিয়মের অভিযোগ রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। সরকারই ব্যবস্থা নেবে।

সোমবার সকাল থেকেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল কড়াকড়ি। মূল ফটক ছাড়া সব ফটকে তালা। নিরাপত্তা কর্মীরা প্রত্যেকের পরিচয়পত্র চাইছেন। প্রথমে বাধা দেওয়া হয় অভিযোগকারী ছাত্র-ছাত্রীদেরও। দশটার পরে তাঁদের মধ্যে জনা পঁচিশেক উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে ভিতরে যান। কিন্তু উপাচার্যের ঘরের বাইরে আটকে দেন নিরাপত্তা কর্মীরা। ছাত্ররা মেঝেতে বসে পড়েন। মিনিট চল্লিশেক পরে তাঁদের ডেকে পাঠান বিশ্ববিদ্যালয়ের লিগ্যাল অফিসার অলোক ঘোষ। সওয়া এক ঘণ্টা বৈঠক চলে। সেখানেও অবশ্য কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস মেলেনি।

এ দিন সামনে এসেছে আরও বেশ কিছু অনিয়ম। ভক্তবালা কলেজেরই ৩০জন ছাত্রছাত্রী জানান, কলেজের অনুমোদন বাতিল হওয়ার পরেও তাঁদের ভর্তি করা হয়েছিল। ভিড় করেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন বি এড কলেজের বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী। যাঁদের অভিযোগ, কোর্স ফি বাবদ ৫৩ হাজার টাকা দেওয়ার পরেও বিনা রসিদে এক-দেড় লক্ষ টাকা চাইছে কলেজগুলো। না দিলে ভর্তি বাতিল করে দেবে বলে হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।

লিগ্যাল অফিসার অলোকবাবুও কার্যত ছাত্রদেরই দায়ী করেন। তিনি বলেন, “গত বছর যাঁরা ভর্তির সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন, তাঁরা এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়কে জানাননি। রোল কল হয়নি, ভুয়ো রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে বুঝতে পেরেও কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিশ্বাস করেছিলেন।” তাঁর দাবি, কলেজের দুর্নীতির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই তদন্ত কমিটি গড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়।

kalyani university bhaktabala bed college partha chattopadhyay tmc
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy