Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বলতে হয় নীতির কথাও, এটাই সেই সময়

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের রাতেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফোন পেয়েছিলেন তিনি। মহাসচিব (যিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও) তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, দলের ‘কঠিন’ সময়ে এমন কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে দল প্রশ্নের মুখে পড়ে। কিন্তু নেতাজির পরিবারের সদস্যটি মনে করছেন, দুর্নীতি-বিরোধী বার্তা দেওয়ার জন্য এই ‘কঠিন’ সময়কেই বেছে নেওয়া উচিত।

সুগত বসু

সুগত বসু

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৩
Share: Save:

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের রাতেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ফোন পেয়েছিলেন তিনি। মহাসচিব (যিনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীও) তাঁকে বুঝিয়েছিলেন, দলের ‘কঠিন’ সময়ে এমন কোনও মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে দল প্রশ্নের মুখে পড়ে। কিন্তু নেতাজির পরিবারের সদস্যটি মনে করছেন, দুর্নীতি-বিরোধী বার্তা দেওয়ার জন্য এই ‘কঠিন’ সময়কেই বেছে নেওয়া উচিত। এবং সেই কারণেই তিনি তৃণমূলের অধ্যাপক-সাংসদ সুগত বসু জানিয়ে দিচ্ছেন, সমাবর্তনের পর তিনি যা যা বলেছিলেন, তা থেকে পিছু হটছেন না। এবং তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে দলের অনেকেই একমত।

সে দিন কী বলেছিলেন সুগতবাবু?

তিনি বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের টাকাপয়সা নয়ছয়ে যারা জড়িত, তাদের বিচার ও শাস্তি হওয়া উচিত। বলেছিলেন বিচার ব্যবস্থার উপরে আস্থা রাখার কথা। এমনকী সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সংসদে ধর্নায় কেন তাঁকে দেখা গেল না, সেই প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, সাংসদ হিসেবে গঠনমূলক কাজ করতেই তিনি বেশি আগ্রহী। সেই মন্তব্যেই চরম অস্বস্তিতে পড়েছিলেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।

যদিও সুগতবাবু মনে করেন, রাজনৈতিক এবং সামাজিক জীবনে কখনও এমন সময় আসে, যখন কিছু সাধারণ নীতির কথাও জোর গলায় বলার প্রয়োজন পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে এমন সময় উপস্থিত। এমনকী তিনি এ-ও বলছেন, “আমাদের দলেই এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যাঁরা দুর্নীতি চান না। আমার কোনও ভয়ডর নেই। রাজনীতি থেকে আমি নিজের জন্য কিছু পেতে আসিনি। দলে এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা আমার সঙ্গে একমত হবেন এবং আমার বলা কথাগুলি থেকে সাহস পাবেন।”

তৃণমূলের অন্দরে কান পাতলেও শোনা যাচ্ছে, সদ্যসমাপ্ত শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রের বিরোধিতায় কখনও কালো ছাতা নিয়ে, কখনও শাল জড়িয়ে, কখনও হাঁড়ি বা লাল ডায়েরি নিয়ে, কখনও মুখে ঠুলি পরে একের পর ‘নাটক’ করতে করতে দলের অনেক সাংসদই তিতিবিরক্ত। সুগতবাবু তাঁদের মনের কথাটাই বলে দেওয়ায় তাঁরা খুশি। কারণ, এঁরা কেউ প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানানোর সাহসটা করে উঠতে পারছেন না।

সংসদের ধর্নায় বেশির ভাগ দিনই গরহাজির ছিলেন বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারী। তিনি কি সুগতবাবুর দুর্নীতি-বিরোধী বার্তার সঙ্গে একমত? শিশিরবাবু বলছেন, “আমার এ নিয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না। যা বলার দলীয় নেতৃত্বই বলবেন।” শিশিরবাবুর সাংসদ পুত্র শুভেন্দু অধিকারী অবশ্য এক দিনও যোগ দেননি ধর্নায়। উলুবেড়িয়ার সাংসদ সুলতান আহমেদ আবার অত্যন্ত উৎসাহিত সুগত-বচনে! তাঁর কথায়, “উনি তো ঠিকই বলেছেন। গরিব মানুষের টাকা যারা নিয়েছে, তাদের অবশ্যই কঠোর সাজা হওয়া প্রয়োজন।’’ এই পর্যন্ত বলে অবশ্য ‘ইতি গজ’-র মত জুড়েছেন সুলতান, “আমাদের দলও তাই মনে করে। তাই কুণাল ঘোষ এবং সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।” তবে সিবিআই-অধ্যায় নিয়ে নীরব থাকাটাই শ্রেয় বলে মনে করছেন এই সাংসদ।

কিন্তু সুগতবাবু কেন সরব হলেন?

অনেকের মতে, সারদার মতো এত বড় মাপের কেলেঙ্কারির তদন্তের বিরোধিতা করে দলনেত্রীর সুরে কোমর বেঁধে নেমে পড়লে তাঁর ভোটাররা যে বিষয়টা ভাল ভাবে নেবেন না, তা বিলক্ষণ জানেন সুগতবাবু। তিনি যাদবপুরের মতো একটি আধুনিক ও শহুরে নির্বাচনী কেন্দ্রের সাংসদ। কাজেই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের বর্তমান প্রতিকূল পরিস্থিতি আঁচ করে অত্যন্ত সতর্ক শব্দচয়নের মাধ্যমে দুর্নীতি-বিরোধী একটি বার্তা দিয়ে রাখলেন তিনি। আবার এটাও ঘটনা, সারদা কাণ্ডে নাম উঠে আসা একাধিক সাংসদের সঙ্গে রোজ রাজধানীতে ওঠাবসা করতে হচ্ছে তাঁকে। এই পরিবেশে হার্ভার্ড-এর শিক্ষক সত্তাটিকে বাঁচিয়ে রাখাটাও সুগতবাবুর দায়ের মধ্যেই পড়ে। তাই নিয়মের মধ্যে থেকেই তিনি যা করার করছেন। এবং সেই কারণেই ছাতা-হাঁড়ির নাটুকে ধর্নায় তিনি (এবং ‘সমমনস্ক’ আরও কেউ কেউ) গরহাজির।

সুগতবাবু নিজেও বলছেন, “আমার আসল সত্তা ইতিহাসবিদ এবং শিক্ষাবিদের। সেই সত্তাটাকে তো আমাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে। কোন বিষয়টি নিয়ে রাস্তায় নামব বা কোন বিষয়টি নিয়ে নামব না, সেটা আগে আমাকেই ভাবনাচিন্তা করতে হবে।” বক্তব্যের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার কারণটিও আজ ব্যাখ্যা করেছেন সুগতবাবু। বলেছেন, “এই মুহূর্তে যেটুকু বলার প্রয়োজন ছিল, সেটুকু মেপেই বলেছি। কারণ, এটাও মাথায় রাখতে হচ্ছে যাতে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি কোনও ভাবেই বাড়তি সুবিধা না পেয়ে যায়। বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হলে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সমস্যা হতে পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc mp sugata basu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE