Advertisement
E-Paper

ভোটের ধাক্কায় পিছু হটছে পরীক্ষা

গত বছর ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন। ধাক্কা খেয়েছিল পরীক্ষাসূচি। এ বার লোকসভা ভোট। ফের নির্বাচনের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাসূচিতে রদবদল ঘটাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। এবং আবার তার জেরে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে পরীক্ষার্থীদের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জেরে গত বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট ওয়ান, পার্ট টু পরীক্ষা মাসখানেকেরও বেশি পিছিয়ে গিয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ১০:০৯

গত বছর ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন। ধাক্কা খেয়েছিল পরীক্ষাসূচি। এ বার লোকসভা ভোট। ফের নির্বাচনের জন্য স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের পরীক্ষাসূচিতে রদবদল ঘটাচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। এবং আবার তার জেরে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা বাড়ছে পরীক্ষার্থীদের।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের জেরে গত বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট ওয়ান, পার্ট টু পরীক্ষা মাসখানেকেরও বেশি পিছিয়ে গিয়েছিল। আর লোকসভা নির্বাচনের প্রভাবে এ বার পার্ট ওয়ান, পার্ট টু, পার্ট থ্রি তিনটি পরীক্ষারই দিন বদলানো হবে বলে বুধবার জানান বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। তাতে ভুগতে হবে প্রায় তিন লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা বুধবার জানান, উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এখন কলকাতায় নেই। উনি ফিরে এসে আগামী সোমবার পরীক্ষার পরিবর্তিত দিন ঘোষণা করবেন।

সাধারণ ভাবে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষা হয় এপ্রিল, মে, জুনে। এ বার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট থ্রি ৯ এপ্রিল, পার্ট টু ২৮ এপ্রিল এবং পার্ট ওয়ান ২ জুন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত নির্ঘণ্ট বলছে, রাজ্যে ১৭, ২৪, ৩০ এপ্রিল এবং ৭ আর ১২ মে লোকসভা ভোট হবে। তাই পিছোতে হবে পার্ট থ্রি পরীক্ষা। আর তার জেরে অন্য পরীক্ষাগুলিও পিছিয়ে যাবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

যাঁরা ওই সব পরীক্ষা দেবেন, তাঁদের সকলেরই কপালে ভাঁজ। তবে পার্ট থ্রি-র পরে যাঁদের বাইরে পড়তে যাওয়ার কথা, পরীক্ষা পিছোনোয় বেশি সমস্যায় পড়ছেন তাঁরাই।

কারণ, পার্ট থ্রি পরীক্ষার ফল না-বেরোলে অনেক প্রতিষ্ঠানই স্নাতকোত্তরে ছাত্র ভর্তি করতে চায় না। পার্ট টু পিছোলে পার্ট থ্রি-তে পঠনপাঠনের জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যাবে না। তাই ভীষণ চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। তাঁদের নিশ্চিন্ত করার কেউ নেই। কোনও বছর বিধানসভা, কোনও বছর লোকসভা আবার কোনও বার পঞ্চায়েত বা পুরসভার নির্বাচনের জেরে পরীক্ষার সূচি বদলাতে হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বারবার পরীক্ষার সময়টুকু বাদ দিয়ে নির্বাচনের নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত করার আবেদন জানায়। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয় না।

এ বারেও পরীক্ষার ভরা মরসুমেই লোকসভা ভোট ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে কলকাতা, উত্তরবঙ্গ, গৌড়বঙ্গ ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা তো পিছোচ্ছেই। তা ছাড়া যাদবপুর, রবীন্দ্রভারতী, প্রেসিডেন্সির মতো যে-সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কোনও কলেজ নেই, নির্বাচনের প্রভাব পড়বে সেখানেও। ভোটের সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৫৭টি কলেজে পরীক্ষা আছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিষ্ণুপ্রসাদ দ্বিবেদী বলেন, “জেলাশাসককে সব জানানো হচ্ছে। তিনি যা নির্দেশ দেবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। উপাচার্য গোপালচন্দ্র মিশ্র জানান, এ বার লিখিত পরীক্ষার আগে, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষা সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে কলেজগুলিকে। পিছোচ্ছে পুরুলিয়ার সিদো-কানহো বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট-২ পরীক্ষা। তবে পার্ট ওয়ান ও পার্ট থ্রি পরীক্ষার দিন বদলাচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সাত্যকি ভট্টাচার্য জানান, সেখানে কলা শাখার পরীক্ষায় ভোটের প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার পরীক্ষাসূচি বদলাতে হবে। তিনি বলেন, “উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক পরীক্ষা ছিল এপ্রিল-মে জুড়ে। কর্তৃপক্ষ সব ক’টিরই দিন বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বলেন, “সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে তিন-চার দিনের মধ্যে পরীক্ষার পরিবর্তিত তারিখ ঘোষণা করা হবে।” প্রেসিডেন্সিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১২ মে। কিন্তু ভোটের জন্য প্রথম দিকের কয়েকটি পত্রের পরীক্ষা পিছোনো হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে।

কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য নির্বাচনের জেরে নির্ঘণ্ট বদলানোর ঝক্কি এড়াতে এখনও পরীক্ষার দিন ঘোষণাই করেনি। তাই সেখানে কোনও সমস্যা নেই। যেমন বিদ্যাসাগর, কল্যাণী, বারাসতের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। বিদ্যাসাগরের উপাচার্য রঞ্জন চক্রবর্তী বুধবার বলেন, “আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েই এখনও পরীক্ষাসূচি ঘোষণা করা হয়নি। পরীক্ষা নিয়ামকের সঙ্গে কথা বলে তা ঠিক করা হবে।” একই কথা জানান কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাস। নির্বাচনের নির্ঘণ্ট দেখে এ বার পরীক্ষাসূচি ঠিক করবে এই সব বিশ্ববিদ্যালয়। বারাসতের রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কৌশিক গুপ্ত জানান, পার্ট থ্রি-র প্র্যাক্টিক্যাল এবং অনার্সের পরীক্ষা নির্বাচনের আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। পার্ট ওয়ান, পার্ট টু এবং পার্ট থ্রি জেনারেল পরীক্ষা হবে নির্বাচনের পরে। সেগুলির দিন এখনও ঘোষণা করা হয়নি।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক মানিক চক্রবর্তী জানান, পার্ট ওয়ান, পার্ট টু পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। পার্ট থ্রি শেষ হচ্ছে ১৭ এপ্রিল। সেই পরীক্ষার সূচিও বদলাতে হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। তবু বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।

জয়েন্ট এন্ট্রান্সের ঘোষিত তারিখের মধ্যেই ভোট পড়ে গিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষা দিন বদলাচ্ছে না। ওই পরীক্ষা হওয়ার কথা ১৯ এবং ২০ এপ্রিল। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাস্কর গুপ্ত এ দিন বলেন, “এখনও পর্যন্ত পরীক্ষার তারিখ বদলানো হবে না বলেই ঠিক আছে।”

loksabha election university calcutta university suranjan das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy