অবসরের বয়স বাড়িয়ে শিক্ষক-চিকিৎসকের ঘাটতি যে মিটবে না, তা বুঝে গিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকী, অবসরপ্রাপ্তদের পুনর্নিয়োগ করেও সমস্যা মিটবে না, তা-ও তাঁদের জানা। তাই এ বার ভিন্ রাজ্য থেকে চিকিৎসক আনার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের কী ভাবে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে শিক্ষকতার কাজে নিয়োগ করা যায়, তা নিয়েও ভাবনা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব ওয়েবসাইটে শীঘ্র এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে। ভিন্ রাজ্য থেকে ডাক্তার আনার ক্ষেত্রে ‘প্যাকেজ’ কতটা আকর্ষণীয় করা যায়, আপাতত তাই নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। এখনও এ বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
কেন এই মরিয়া চেষ্টা? স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অবসরের বয়স বাড়িয়ে ফি বছর ৪৫ থেকে ৪৮ জনের বেশি শিক্ষক-চিকিৎসক পাওয়া যাবে না। আর এই সংখ্যা দিয়ে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে যা ঘাটতি, তার অর্ধেকও পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। এর পরেও কোচবিহার, রামপুরহাট, পুরুলিয়া, রায়গঞ্জ এবং ডায়মন্ডহারবার হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করার প্রক্রিয়া ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে দু’টি হাসপাতালকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করার কাজ চলতি বছরেই শেষ হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিয়েছেন। আপাতত তাই যে ভাবে হোক, চিকিৎসক জোগাড় করাটাই এখন স্বাস্থ্যকর্তাদের লক্ষ্য।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে গেলে গোড়াতেই ১৪০ জন শিক্ষক প্রয়োজন হয়।” তার মানে, প্রস্তাবিত পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজের জন্য ৭০০ শিক্ষক প্রয়োজন। সব মিলিয়ে (বর্তমান ও নিকট ভবিষ্যৎ) চাহিদা প্রায় হাজারের কাছাকাছি। “বাইরে থেকে না আনলে পাব কী ভাবে” প্রশ্ন খোদ অধিকর্তারই।
স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, আরও বিকল্পের কথা ভাবা হয়েছে। যেমন, ঘাটতি পূরণে বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদেরও স্বাগত জানানো হবে। যে কোনও হাসপাতালে টানা ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেই চিকিৎসককে সরকারি মেডিক্যাল কলেজে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে নিয়োগ করা হবে। জেলা হাসপাতালে নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদেরও অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে নিয়োগ করার কথা ভাবা হয়েছে।
কিন্তু রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিযুক্ত? কর্তাদের একটা অংশ মনে করছেন, নম্বরের দৌড়ে এগোতে গিয়ে আদতে রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষার ক্ষতি করা হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজের সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে এ ভাবে নিয়োগের নিয়মকানুন শিথিল হলে আপস করা হবে পঠনপাঠনের মানের সঙ্গে। যা ভবিষ্যতের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। এই অংশের মতে, বাইরে থেকে ডাক্তার আনলে রাজ্যের মেডিক্যাল শিক্ষার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।
কী ভাবে? দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “শিক্ষকের অভাব সব রাজ্যেই রয়েছে। অনেক রাজ্যই মেডিক্যাল শিক্ষক খুঁজছে হন্যে হয়ে। এই পরিস্থিতিতে অন্য রাজ্য থেকে যাঁদের আনা হবে, তাঁরা কি তবে নিজেদের রাজ্যে কাজ পাননি বলেই চলে আসতে রাজি হচ্ছেন? সেটা হলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।” বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তারদের নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এক কর্তার কথায়, “বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা হাসপাতাল-চেম্বার সামলে কোনও ফুরসতই পান না। তাঁদের শিক্ষকতার কাজে নিয়োগ করলে তাঁরা অর্ধেক সময় হয়তো ক্লাসই নিতে পারবেন না। তাতে ভুগবে পড়ুয়ারাই।”
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছেন, কোনও আপত্তিকেই তাঁরা আমল দিতে চান না। তাঁর কথায়, “যে করে হোক রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলোয় শিক্ষক জোগাড় করতে হবে। ভিন রাজ্যের শিক্ষক বা বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের শিক্ষকতার কাজে নিয়োগ এরই অঙ্গ। এ সব না করলে রাজ্য এগোতে পারবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy