পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তদন্তে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করল সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তরত এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র এবং রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল জিএমপি রেড্ডিকে চিঠি পাঠিয়ে এই অভিযোগ করে ইডি জানিয়েছে, সারদা তদন্তে বাধা দিতে তাদের অফিসারদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথাও ভাবছেন ইডি-র কর্তারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটির অভিযোগের আঙুল মূলত আলিপুর থানার বিরুদ্ধে। ইডি-র অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যসচিব বলেন, “আমি কিছু জানি না।”
কেন রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে চিঠি দিয়ে এমন গুরুতর অভিযোগ আনল ইডি?
জেলবন্দি সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেন অভিযোগ করেছিলেন, আলিপুর জেলে গিয়ে গত ২৯ এপ্রিল দু’টো নোটিস-এ সই করানোর সময় তাঁকে দিয়ে জোর করে ২০ এপ্রিলের তারিখ (ব্যাক ডেট) লিখিয়ে নিয়েছিলেন ইডি-র অফিসার দেবব্রত ঝা। সারদা কর্তার এই অভিযোগের ভিত্তিতে দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধে আলিপুর থানায় ২৩ মে এফআইআর দায়ের করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সল্টলেকে ইডি-র অফিসে খবর আসে, ওই এফআইআরের ভিত্তিতে দেবব্রতবাবুকে গ্রেফতার করতে পারে রাজ্য পুলিশ।
ইডি-র কলকাতা দফতরে এই গ্রেফতারের খবর আসতেই তারা যোগাযোগ করে দিল্লির সদর দফতরে। সেখানে নড়াচড়া শুরু হয়। যোগাযোগ করা হয় আইনজীবীদের সঙ্গে।
এর পরেই মুখ্যসচিব এবং ডিজি-কে চিঠি এবং উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আলিপুর থানা, আলিপুর সংশোধনাগার এবং রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে অভিযোগ জানানো হবে।
ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, আলিপুর থানায় তাদের অফিসারের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হওয়ার পরে বিষয়টি তারা নানা ভাবে প্রশাসনের উচ্চমহলকে জানায়। কিন্তু কেউ কোনও আমল দেননি। ইডি-র একটি সূত্রের দাবি, সে দিন আলিপুর সংশোধনাগারে বসে যে দু’টি নোটিসে সুদীপ্তবাবু সই করেছিলেন, তা করা হয় জেলারের সামনেই। সেই মর্মে জেলারও ইডি-কে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। ইডি-র এক অফিসারের কথায়, “জেলারের সামনে কী করে সুদীপ্তকে জোর করা হল, তা বোঝা যাচ্ছে না!”
নবান্ন সূত্রের খবর, সুদীপ্ত সেনের অভিযোগ পেয়ে প্রেসিডেন্সি জেলে ২৯ এপ্রিল ডিউটিতে থাকা চার-পাঁচ জন কারারক্ষী ও অফিসারের লিখিত বক্তব্য সংগ্রহ করে পুলিশ। ওই কারারক্ষী ও অফিসারেরা পুলিশকে জানান, সুদীপ্তবাবুর সঙ্গে দেখা করে ইডি-র কর্তা পুরনো তারিখ দিয়ে কিছু কাগজপত্রে সই করিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তের এই রিপোর্ট পেয়ে ৫ মে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় ও ডিজি তা নিয়ে মুখ্যসচিবের সঙ্গে আলোচনা করেন। সেখানে ঠিক হয়, ওই ইডি অফিসারের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে রাখা হবে। পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দেওয়া হবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই আলিপুর থানায় দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছিল। তাই এই নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাননি ইডি-র কর্তারা। কিন্তু দিন কয়েক আগে নবান্নে আচমকাই ওই মামলার প্রসঙ্গটি ওঠে। তখন প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের কেউ কেউ আলিপুর থানায় করা ওই মামলার ভিত্তিতে দেবব্রতবাবুকে গ্রেফতার করার কথা বলেন। কিন্তু বেঁকে বসে প্রশাসনেরই অন্য একটি অংশ। তাদের মত ছিল, দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য ধারা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে গ্রেফতার করে লাভ নেই। তা ছাড়া এখন সারদা কাণ্ডে তদন্ত করছে ইডি। রাজ্য পুলিশ যে তদন্ত চালাচ্ছিল, তা সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইডি-র কোনও অফিসারকে গ্রেফতার করলে ভুল বার্তা যাবে।
রাজ্য পুলিশের একটি অংশের বক্তব্য, একটি নোটিসে পুরনো তারিখ দিয়ে সই করানোর জন্য যদি দেবব্রত ঝা-কে গ্রেফতার করা হয়, তা হলে সারদা তদন্তের জন্য রাজ্যের তৈরি ‘সিট’-এর নানা ভুলভ্রান্তি নিয়ে ইডি-ও পাল্টা মামলা করতে পারে। তাতে যথেষ্ট জটিলতা তৈরি হবে। এই সব যুক্তি, পাল্টা-যুক্তি নিয়ে আলোচনার পর ইডি অফিসারকে গ্রেফতার করা থেকে আপাতত বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পুলিশকর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy