Advertisement
১৭ মে ২০২৪

মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে সরকারকে চার্জশিট সূর্যকান্তের

মন্ত্রী থাকার সময়ে তাঁর কণ্ঠস্বর বিশেষ শোনা যেত না! বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় গিয়ে এই নিয়ে দু’টি ব্রিগেড সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে বড় ভূমিকা নিতে দেখা গেল তাঁকে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রবিবারের ব্রিগেড থেকে চার্জশিট পেশ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্রই। গতানুগতিক বক্তৃতার ব্রিগেডে জনতার সাড়ার নিরিখে আলাদা করে চিহ্নিত হয়ে থাকল তাঁর বক্তব্যই।

কমরেডকে সাহায্যের হাত। রবিবার ব্রিগেডে অশোক ঘোষ এবংবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দেবাশিস রায়।

কমরেডকে সাহায্যের হাত। রবিবার ব্রিগেডে অশোক ঘোষ এবংবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: দেবাশিস রায়।

সঞ্জয় সিংহ ও অত্রি মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ১৮:১৯
Share: Save:

মন্ত্রী থাকার সময়ে তাঁর কণ্ঠস্বর বিশেষ শোনা যেত না! বিরোধী দলনেতার ভূমিকায় গিয়ে এই নিয়ে দু’টি ব্রিগেড সমাবেশে কর্মী-সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে বড় ভূমিকা নিতে দেখা গেল তাঁকে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রবিবারের ব্রিগেড থেকে চার্জশিট পেশ করলেন সূর্যকান্ত মিশ্রই। গতানুগতিক বক্তৃতার ব্রিগেডে জনতার সাড়ার নিরিখে আলাদা করে চিহ্নিত হয়ে থাকল তাঁর বক্তব্যই।

বিধানসভার কাজ সামলানোর সুযোগে যে সব অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে তুলে থাকেন সূর্যবাবু, এ দিনের চার্জশিটে সে সব কিছুই নিয়ে এসেছেন তিনি। তবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে সমাবেশে উপস্থিত জনতার প্রত্যাশার কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন। শুরুই করেছেন, “যদি কান খোলা রেখে থাকেন, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীকে বলছি” বলে! রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের অভিযোগ, আড়াই বছরে বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া, উন্নয়নের কর্মকাণ্ডের দাবির সঙ্গে বাস্তবের ছবির অমিল, কৃষক-শ্রমিকের সমস্যা, দুর্নীতির নানা অভিযোগ, নারী নির্যাতনের ধারাবাহিক ঘটনা সাম্প্রতিক সব অভিযোগই ছিল বিরোধী দলনেতার চার্জশিটে।

ব্রিগেডের ময়দানেই তৃণমূলের বিগত দু’টি সমাবেশের উল্লেখ করে কৌশলে কুণাল ঘোষ, সারদা-কাণ্ড এবং বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারির সঙ্গে শাসক দলের নাম কৌশলে জড়িয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ২০১১-র ২১ জুলাই ব্রিগেড সমাবেশের সঞ্চালক ছিলেন কুণালই। তৃণমূলের রাজ্যসভার যে সাংসদ আপাতত জেলে। সূর্যবাবু বলেছেন, “সরকারে আসার পরে ব্রিগেডে যাঁর হাতে মাইক ছিল, তিনি এখন কোথায়? এ বারের ব্রিগেডে যিনি ঘোষক ছিলেন, তাঁকে পরের বার ব্রিগেডের সময় কোথায় দেখব জানি না!” ইঙ্গিত তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দিকে। শেষে আবার মুখ্যমন্ত্রীকেই অবশ্য নিশানায় ফিরিয়ে এনেছেন বিরোধী দলনেতা। মন্তব্য করেছেন, “পরের স্লোগান হবে, দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান! রাজার জায়গায় কী হবে, নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না?” সমবেত উত্তর এসেছে, “না!”

তৃণমূলের তরফে মুকুলবাবুরা এ দিন অবশ্য পাল্টা আক্রমণের লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেই। যিনি বলেছিলেন, সিঙ্গুর শ্মশানে পরিণত হয়েছে, নন্দীগ্রাম নরককূণ্ড! অন্ধকারে পড়ে আছে রাজ্য। বুদ্ধবাবুর কথায়, “কিচ্ছু হচ্ছে না রাজ্যে! আমরা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিতে চাই, এই ভাবে চলবে না! আমাদের মুখ কিছুতেই বন্ধ রাখা যাবে না!” যার প্রেক্ষিতে মুকুলবাবুর জবাব, “বামেরা ৩৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার আগে আমাদের ঘাড়ে ২ লক্ষ ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ চাপিয়ে দিয়ে গিয়েছে। খুন, নারী নির্যাতন করে গিয়েছে। এখন বুদ্ধবাবু নাকি উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন না!”

বামেদের চার্জশিট

• স্বৈরাচারী সরকার • বিধানসভায় প্রশ্নের জবাব নেই কুণাল ঘোষ জেলে। মুখে কুলুপ শাসক দলেই কৃষক, শ্রমিক, কর্মচারী-বিরোধী সরকার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির কী হাল? দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার। কুণাল চোর, মুকুল চোর, আমি চোর? শেষ প্রশ্নের জবাব দিন মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে কন্যাশ্রী, অন্য দিকে নারী নির্যাতন। শ্রী না বিশ্রী?

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ খণ্ডন করে মুকুলবাবুর আরও দাবি, “বাংলায় যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা নিয়ে বাংলার মানুষ সুনিশ্চিত মতামত ৬ মাস আগে পঞ্চায়েত ভোটেই দিয়েছে। কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ, পাহাড় থেকে জঙ্গল উন্নয়ন চলছে।” বামেদের ব্রিগেডে ভিড় ছিল তৃণমূলের তুল্যমূল্যই। তবে তাকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে মুকুলবাবুর মন্তব্য, “এর আগে বাংলা, কলকাতা ব্রিগেডে বিশাল সমাবেশ দেখেছে। আর ৩৫ বছর একটা দল ক্ষমতায় ছিল! একটু ভিড় তো হবেই!” তবে তৃণমূলের অন্দরে কিছু নেতা অবশ্য এ দিন ব্রিগেডের ভিড়কে উপেক্ষা করতে রাজি নন। তাঁদের মতে, “এখনও বামেদের পিছনে এত মানুষ আছে, এটা আমাদের মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।”

ব্রিগেড থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু অভিযোগ করেছেন, “দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এখন আর হচ্ছে না! তৃণমূল বলে, দুষ্টের দমন চলবে না! দুষ্টকে আলো-বাতাস দিয়ে ঝকঝকে করে রাখতে হবে!” সদ্য তৃণমূলের ধাক্কায় দুই বিধায়ক-খোয়ানো আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী বলেছেন, “এ ভাবে আমাদের শেষ করা যাবে না! আমরা রক্তবীজের ঝাড়!” জনতাকে কুর্নিশ জানানোর পাশাপাশিই ‘দলবদলু’দের উদ্দেশে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য নেতা হাফিজ আলম সৈরানি মন্তব্য করেছেন, “যাঁরা লাল ঝান্ডাকে কলুষিত করে গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হয়েছেন, তাঁদের ধিক্কার জানাই!”এ রাজ্য থেকে তৃণমূল কে ডি সিংহকে রাজ্যসভায় পাঠানোয় তাঁর সংস্থা ও অতীত নিয়ে প্রশ্ন তুলতে ছাড়েননি সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার।

বামেদের ব্রিগেডকে নস্যাৎ করে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের অবশ্য দাবি, “ওদের সমাবেশে ব্রিগেড ভরেনি। লোকজন ফাঁক ফাঁক হয়ে বসে মাঠ ভর্তি দেখানোর চেষ্টা করেছে!” আর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মত, “বামেরা ক্ষমতায় থাকুক বা না-থাকুক, ব্রিগেডে সমাবেশ করার একটা কৌশল ওদের আছে। কিন্তু এই সমাবেশের প্রভাব বাংলার রাজনীতিতে পড়বে বলে মনে হয় না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brigade ex-cm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE