Advertisement
১০ মে ২০২৪
মধ্যমগ্রাম কাণ্ড

মৃতার দেহ দখল কেন, কোর্ট তুষ্ট নয় হলফনামায়

মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ ও ধর্ষিত কিশোরীর পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ফের কলকাতা হাইকোর্টের সমালোচনার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। ওই ঘটনায় কিশোরীর মৃতদেহ দখলের কারণ জানিয়ে সরকার পক্ষ আদালতে যে-তিনটি হলফনামা পেশ করেছে, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

মধ্যমগ্রামে গণধর্ষণ ও ধর্ষিত কিশোরীর পুড়ে মৃত্যুর ঘটনায় ফের কলকাতা হাইকোর্টের সমালোচনার মুখে পড়ল রাজ্য সরকার। ওই ঘটনায় কিশোরীর মৃতদেহ দখলের কারণ জানিয়ে সরকার পক্ষ আদালতে যে-তিনটি হলফনামা পেশ করেছে, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি বলেন, হলফনামায় যে-সব ঘটনার কথা বলা হয়েছে, তার উৎসের কোনও উল্লেখই নেই।

বিচারপতি বুধবার নির্দেশ দেন, রাজ্য সরকারকে অতিরিক্ত হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, কীসের ভিত্তিতে তারা ওই তিন হলফনামায় ওই সব ঘটনার কথা বলছে। ২৫ মার্চ আদালতে অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করতে হবে সরকারকে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৭ মার্চ।

মামলাটি করেছেন মৃত কিশোরীর ট্যাক্সিচালক বাবা। তাঁদের বাড়ি মধ্যমগ্রামে। মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পরে তাকে টালা থানার অধীন আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় কিশোরীর। হাসপাতাল থেকেই কিশোরীর দেহ নিয়ে যায় পুলিশ। প্রথমে তার বাড়ি, পরে নিমতলা শ্মশান। বাবার অভিযোগ, তাঁদের (তিনি এবং তাঁর স্ত্রী) বাদ দিয়ে এবং ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াই শেষকৃত্য সম্পন্ন করার জন্য মেয়ের দেহ নিমতলায় নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। পুরো ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন কিশোরীর বাবা। সেই মামলায় এ দিন কলকাতা পুলিশ, টালা থানার ওসি এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকে আদালতে হলফনামা পেশ করা হয়েছিল। সেই তিনটি হলফনামা পড়ে বিচারপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং অকিরিক্ত হলফনামা চান।

তিনটি হলফনামায় সরকার পক্ষ ঠিক কী বলেছে?

তিনটি হলফনামারই মোদ্দা কথা, দু’বার গণধর্ষিতা ওই কিশোরীর মৃত্যু হয় আগুনে পুড়ে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালের বাইরে সে-দিন অনেক লোক জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা আন্দোলন করছিলেন। তার ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা ছিল। এই জন্যই দাহ করার জন্য কিশোরীর মরদেহ নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু পুলিশের কাছে যে-হেতু মৃতার ডেথ সার্টিফিকেট ছিল না, তাই পুলিশ দাহকাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। তা ছাড়া সেই সময় মৃত কিশোরীর মা কিংবা বাবার কোনও সন্ধানও পাওয়া যায়নি।

সরকার পক্ষের এই বক্তব্য জানার পরে তার সমালোচনায় সরব হন অভিযোগকারীর আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। এ দিন মামলার শুনানিতে তিনি বলেন, সে-দিন পুলিশ কী ভাবে হাসপাতাল থেকে ওই কিশোরীর মৃতদেহ অপহরণ করেছিল, সে-কথা হলফনামায় বলা হয়নি। আবার কীসের ভিত্তিতে মৃতদেহ এক থানা (টালা) এলাকা থেকে অন্য থানা (মধ্যমগ্রাম) এলাকায় এবং এক কমিশনারেট (কলকাতা পুলিশ কমিশনারের অফিস, লালবাজার) থেকে অন্য কমিশনারেটে (বিধাননগর) নিয়ে যাওয়া হল, তারও ব্যাখ্যা নেই হলফনামায়। বিকাশবাবুর অভিযোগ, মৃতার বাবার কাছ থেকে কেন এবং কী ভাবে জোর করে দেহ ছিনিয়ে নেওয়া হল, হলফনামায় তার উল্লেখ নেই। তাঁর দাবি, পুলিশ কার নির্দেশে সে-দিন এই রকম আচরণ করেছিল, তার প্রকৃত তথ্য সকলের জানা উচিত। বিকাশবাবু মন্তব্য করেন, হলফনামা দেওয়া

হয় সন্দেহ দূর করার জন্য। এ ক্ষেত্রে কিন্তু সরকার পক্ষের তিন-তিনটি হলফনামা সত্ত্বেও সন্দেহ দূর হওয়ার পরিবর্তে বিষয়টি আরও মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল।

বিচারপতি তার পরেই অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দেন। তিনি মন্তব্য করেন, যে-কোনও তথ্যের উৎস জানাটা আদালতের প্রয়োজন। ওই তিনটি হলফনামায় তার খামতি থেকে গিয়েছে।

মধ্যমগ্রামের ঘটনার তদন্ত করতে ডিআইজি (সিআইডি) দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে ‘স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম’ (সিট) বা বিশেষ তদন্তকারী দল তৈরি হয়েছিল উচ্চ আদালতের নির্দেশে। সিট ইতিমধ্যে তাদের রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে: ধর্ষণে অভিযুক্ত এবং

এলাকার কিছু যুবকের লাগাতার নির্যাতন সহ্য করতে না-পেরে ওই কিশোরী নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। সিটের মতে, এটি খুন নয়, আত্মহত্যার ঘটনা। তবে অভিযুক্ত মিন্টা শীল ও রতন শীল যদি মেয়েটিকে ক্রমাগত অত্যাচার না-করত, তা হলে হয়তো সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিত না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE