Advertisement
E-Paper

মুদ্রা চিনতে জাদুঘরে

শুধু মুদ্রাই নয়, শিল্পের বিরল কিছু নমুনারও হদিশ মিলবে এখানেই। লিখছেন বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্যমুদ্রা। ছোট্ট এক টুকরো ধাতু। অথচ সেটাই কিনা ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান! এ বার সেই উপাদান অর্থাৎ অসংখ্য সোনা-রুপোর মুদ্রায় সেজে উঠেছে ভারতীয় সংগ্রহালয়ের মুদ্রা গ্যালারি। শুধুমাত্র আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য লিখছেন বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য।

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ২০:৪৪
গুপ্ত যুগের মুদ্রা।

গুপ্ত যুগের মুদ্রা।

মুদ্রা।

ছোট্ট এক টুকরো ধাতু। অথচ সেটাই কিনা ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান!

এ বার সেই উপাদান অর্থাৎ অসংখ্য সোনা-রুপোর মুদ্রায় সেজে উঠেছে ভারতীয় সংগ্রহালয়ের মুদ্রা গ্যালারি। এত দিন সংগ্রহালয়ে মুদ্রা গ্যালারি থাকলেও তাতে দেখা যেত মুদ্রার প্রতিরূপ বা রেপ্লিকা। তবে সংগ্রহালয়ের দ্বিশতবার্ষিকী উপলক্ষে খোলনলচে বদলে নতুন করে তৈরি হয়েছে মুদ্রা গ্যালারি। এখানে প্রদর্শিত হয়েছে সোনা, রুপো, তামা এবং অন্যান্য ধাতুর মোট ২৭১টি মুদ্রা।

ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হয়েছে গ্যালারির বিভিন্ন বিভাগ। শুরুতেই যেমন রয়েছে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের পান্চমার্কড মুদ্রা। তেমনই যৌধেও নামক এক প্রাচীন যোদ্ধা উপজাতিদের মুদ্রায় দেখা যায় ছ’টি মাথাওয়ালা কার্তিকেয়র মূর্তি। কিংবা সিসার তৈরি প্রাচীন দক্ষিণ ভারতীয় মুদ্রা। আছে হর্ষবর্ধনের মুদ্রা থেকে শুরু করে মোগল যুগের মুদ্রা। হায়দার আলি, টিপু সুলতানের মুদ্রা থেকে রানি ভিক্টোরিয়ার দুর্লভ স্বর্ণ মুদ্রাও বাদ যায়নি।

মুদ্রাগুলির যাতে কোনও ক্ষতি না-হয়, সে কথা মাথায় রেখে প্রতিটি মুদ্রা আলাদা করে হোল্ডারে প্রদর্শিত হয়েছে। নিরাপত্তার কারণেই প্রতিটি শো-কেসে বাসানো হয়েছে বার্গলারি অ্যালার্ম এবং কাচের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে টাফন গ্ল্যাস। শুধু তাই নয়, যে মুদ্রাগুলি প্রদর্শিত হয়েছে তার দু’দিকের ছবিই বড় করে প্রদর্শটির উপরেই দেওয়া হয়েছে। এর ফলে মুদ্রার অদেখা দিকটি সম্পর্কে দর্শকদের একটা ধারণা তৈরি হবে।

এর পাশাপাশি প্রদর্শিত সকল মুদ্রার খুঁটিনাটি ইতিহাস জানা যাবে কিয়স্কে। ছোটদের কাছে প্রাচীন মুদ্রাকে আকর্ষণীয় করে তুলতেই এই উদ্যোগ। কিয়স্ক-এ এক ক্লিকেই জানা যাবে মুদ্রা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও ছবি।

সংগ্রহালয়ের মুদ্রা বিভাগের প্রধান ছন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, “উত্তর-পূর্ব ভারতের বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য মুদ্রা এখানে প্রদর্শিত হয়েছে। এই মুদ্রাগুলি থেকে সেই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনৈতিক অবস্থান এবং সমাজচিত্রের একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। বেশ কিছু মুদ্রা এর আগে প্রদর্শিতই হয়নি।”

তবে মুদ্রা গ্যালারির পাশাপাশি সংগ্রহালয়ের আর এক নতুন আকর্ষণ দোতলার ‘ডেকোরেটিভ আর্ট গ্যালারি’। সংস্কারের জন্য দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এই গ্যালারিটি। পুরনো কিছু প্রদর্শের পাশাপাশি এখানে দেখানো হয়েছে বিরল কিছু শিল্প সামগ্রীর নমুনাও। তা সে হাতির দাঁতের তাজমহল হোক বা জয়পুরে তৈরি শ্বেতপাথরের বাংলা শৈলীর অপূর্ব দুর্গামূর্তি— যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত দুর্লভ এবং শৌখিন শিল্প সম্ভারে সম্বৃদ্ধ গ্যালারিটি।

গ্যালারিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে টেক্সটাইল বিভাগ। সংগ্রহালয়ের বস্ত্রশিল্পের সম্বৃৃদ্ধ সংগ্রহ থেকে প্রদর্শিত হয়েছে রাজশাহির জমিদার পরিবারের বেনারসি, নাহার পরিবারের বালুচরি কিংবা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাচীন বস্ত্র সামগ্রী। তবে এ সবের মধ্যেই চোখে পড়ে একটি রুমাল। সংগ্রহালয়ের শিল্প বিভাগের প্রধান নীতা সেনগুপ্ত জানালেন, রুমালটির ‘বর্ডার’ অংশটি সপ্তদশ শতকে তৈরি তৈরি হয়েছিল পারস্যে। পরবর্তী কালে ১৯ শতকে এটি সম্পূর্ণ করা হয় কাশ্মীরে। এতে সূক্ষ্ম সুতোর কাজে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহারাজা রঞ্জিৎ সিংহের জীবনের নানা কাহিনি।

নজর কাড়বে মায়ানমার থেকে আনা কাঠের প্যাগোডার অংশ, ভাবনগরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাড়ির সামনের অংশ, হাতির দাঁতের শিল্পকর্ম, দেশের নানা প্রান্তের প্রসাধন সামগ্রী এবং সাবেক ক্রীড়ার হরেক উপাদান।

গ্যালারির বড় অংশ জুড়ে রয়েছে দারুশিল্পের অনবদ্য সব নমুনা। মায়ানমারের দারুশিল্পের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের দারুশিল্প তুলনামূলক ভাবে এখানে প্রদর্শিত হয়েছে। রয়েছে ধাতুশিল্পের বহু নমুনা, বিদরি শিল্প, রুপোর নানা দ্রব্য, এনামেল করা বাসনপত্রও। গ্যালারির শেষ প্রান্তে রয়েছে নাহার পরিবারের উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তৈরি হিন্দু দেব-দেবীর মূর্তিও।

সব মিলিয়ে ২০০ বছরকে স্মরণীয় করে তুলতে অদেখা দুর্লভ সামগ্রীর সম্ভার দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে তৎপর সংগ্রহালয় কর্তৃপক্ষ।

bibhuti sundar bhattacharya bibhuti historic coins museum indian museum
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy