Advertisement
E-Paper

মানেকসিয়ায় কাজ বন্ধ, সেই তৃণমূল কাঠগড়ায়

শাসকদলের দাদাগিরির জেরে ফের তালা ঝুলল কারখানায়। হলদিয়ার মানেকসিয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ জানালেন, চাপে পড়েই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। সরাসরি কারও নাম না বললেও কাদের চাপ, তা কার্যত পরিষ্কার। কেননা সেখানে তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি ছাড়া অন্য শ্রমিক সংগঠনই নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৬
হলদিয়ার মানেকসিয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানা।—ফাইল চিত্র।

হলদিয়ার মানেকসিয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানা।—ফাইল চিত্র।

শাসকদলের দাদাগিরির জেরে ফের তালা ঝুলল কারখানায়।

হলদিয়ার মানেকসিয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ জানালেন, চাপে পড়েই তাঁরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। সরাসরি কারও নাম না বললেও কাদের চাপ, তা কার্যত পরিষ্কার। কেননা সেখানে তৃণমূল প্রভাবিত আইএনটিটিইউসি ছাড়া অন্য শ্রমিক সংগঠনই নেই।

পূর্ব মেদিনীপুরের ওই সংস্থা সূত্রের খবর, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য তারা মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ঘরের চাপ আর বাইরের লড়াই সামলাতে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে বলে অভিযোগ। মানেকসিয়ার গ্রুপ পার্সোনেল ম্যানেজার অনুপম মিত্র বলেন, “বড্ড চাপ। সময়মতো মাইনে দিচ্ছি মানেই কারখানার অবস্থা ভাল তা তো নয়! গত আর্থিক বছরে আমাদের প্রায় ১৮ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।”

অনুপমবাবু জানান, সঙ্কট কাটাতে তাঁরা কিছু কর্মী কমাতে এবং এক বিভাগ থেকে অন্যত্র কিছু কর্মীকে বদলি করতে চেয়েছিলেন। বাইরে থেকে দক্ষ শ্রমিক আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চাপের মুখে কোনওটাই হয়নি। তার উপরে মাল আনা-নেওয়া এবং ছাঁট মাল বেরোনোর সময়ে নিত্য টাকা দেওয়া তো রয়েইছে। কর্তৃপক্ষের হিসেবে, এ সবের জেরে মাসে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা লোকসান হচ্ছে।

সবটাই কি ইউনিয়নের চাপ?

অনুপমবাবুর জবাব, “সব ধরনের চাপই আছে। উপরমহলে বলে দিলাম, নীচে শুনে নিল, সেই শোনার জায়গাটা আর নেই। এখন সবাই লিডার। ছোট এক জনও আমাদের ক্ষতি করে দিতে পারে।” তিনি জানান, আগেও পরিস্থিতি খারাপ ছিল। বছর তিনেক হল সঙ্কট বেড়েছে। তাঁর বক্তব্য, “কোনও মালিক চান না কারখানা বন্ধ করে নিজের বদনাম করতে। কিন্তু জেনারেল ম্যানেজারকে যদি ট্রাকের মাল নামানো নিয়ে শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে রফা করতে করতেই দিন কাটিয়ে দিতে হয়, কারখানা চলবে কী করে!”

শাসক দলের নেতা-কর্মীদের দৌরাত্ম্যে কয়েক বছরে একের পর এক শিল্প সংস্থায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুরে জয় বালাজির ইস্পাত কারখানায় ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছিল আইএনটিটিইউসি নেতার বিরুদ্ধে। জামুড়িয়ায় তৃণমূলের দুই যুব নেতার বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগ করে শ্যাম গোষ্ঠী। দুর্গাপুরেই শাসক দলের চাপে কাজ বন্ধের নোটিস দেয় নির্মীয়মাণ কাগজকল। এ দিন তমলুকে বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, “আরও একটা কারখানা বন্ধ হল। হলদিয়া শ্মশান হয়ে গিয়েছে।” হলদিয়ার বিধায়ক শিউলি সাহার দাবি, “একটা কারখানা বন্ধে হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে কোনও প্রভাব পড়বে না।” মানেকসিয়ার কারখানায় আইএনটিটিইউসি প্রভাবিত ইউনিয়নের সভাপতি, তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী মন্তব্য করেননি।

দুর্গাচকের ঝিকুরখালিতে দু’টি কারখানা রয়েছে মানেকসিয়ার। অন্যটি ইস্পাত প্রকল্প, অন্যটি ২০০৬ সালে চালু হওয়া অ্যালুমিনিয়াম কারখানা। প্রথমটিতে আপাতত গোলমাল নেই। অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় ১২৫ জন স্থায়ী ও ১৩৫ জন অস্থায়ী কর্মী। এ বারের গোলমালের শুরু স্থায়ী কর্মীদের বেতন বাড়ানোর দাবিকে ঘিরেই। কিন্তু ওই কারখানায় স্থায়ী কর্মীদের ইউনিয়ন নেই। শুধু অস্থায়ী কর্মীদের ইউনিয়ন রয়েছে। সেটির কার্যকরী সভাপতি মিলন মণ্ডলের দাবি, “কর্তৃপক্ষের অভিযোগ মিথ্যা। কোনও টাকা নেওয়া হয় না। আমরা স্থায়ী কর্মীদের বুঝিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম।”

কারখানা সূত্রের খবর, গত ৩০ অক্টোবর স্থায়ী কর্মীদের একাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার নীবেশকুমার সিংহকে মারধরেরও অভিযোগ ওঠে। রোজ এক ঘণ্টা প্রতীকী কর্মবিরতির সিদ্ধান্তও নেন স্থায়ী কর্মীরা। শনিবার মিলনবাবু তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে কর্মবিরতি ওঠে। রবিবার রাতেই ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ নোটিস পড়ে। জেনারেল ম্যানেজার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শ্রমিক বিক্ষোভের জেরেই নোটিস দিতে হয়েছে।”

এ দিন সকালে কারখানার গেট ছিল বন্ধ। শ্রমিক-কর্মীরাও আসেননি। পূর্ব মেদিনীপুরের সহকারী শ্রম কমিশনার মিহির সরকার বলেন, “শ্রমিক অসন্তোষ ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। স্থায়ী কর্মীরাও দাবি জানিয়েছেন। সব পক্ষকে নিয়ে বুধবার বৈঠকে বসব।”

haldia inttuc tmc manaksia limited
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy