Advertisement
E-Paper

রাজ্য নেতৃত্বের হয়ে হারের দায় নিলেন বিমান

ফলপ্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পলিটব্যুরোয় স্বীকার করেছিলেন। এ বার দলের রাজ্য কমিটির সামনেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু মেনে নিলেন, পরাজয়ের দায় রাজ্য নেতৃত্বেরই। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে তিনি এই বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৪ ০৩:০৩

ফলপ্রকাশের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পলিটব্যুরোয় স্বীকার করেছিলেন। এ বার দলের রাজ্য কমিটির সামনেও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু মেনে নিলেন, পরাজয়ের দায় রাজ্য নেতৃত্বেরই। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে তিনি এই বিপর্যয়ের দায় স্বীকার করছেন। দায় নিজেদের কাঁধে নিলেও রাজ্য কমিটিতে তোপের মুখে পড়ে তড়িঘড়ি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা অবশ্য ঘোষণা করেননি রাজ্য সম্পাদক। তিনি জানিয়েছেন, পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

লোকসভা ভোটে নজিরবিহীন বিপর্যয়ের পরে দলের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের দিকে এ বার আঙুল তুলেছিলেন রাজ্য কমিটির একের পর সদস্য। দু’দিনের বৈঠকে জবাবি ভাষণে মঙ্গলবার তাই রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, দু’জনকেই এই বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। বিমানবাবু যেমন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন, তেমনই কারাট এ দিন বৈঠকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, দলের নেতা-কর্মীদের মনোভাব তিনি বুঝতে পারছেন। কিন্তু সকলকেই মনে রাখতে হবে, কমিউনিস্ট পার্টিতে এমন হঠাৎ করে কোনও সিদ্ধান্ত হয় না। এ ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে পদক্ষেপ করা হবে। আসন্ন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হবে বলেও কারাট ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বস্তুত, বিপর্যয়ের পরে দলের মধ্যেই ক্ষোভের ঢেউ সামাল দিতে সম্মেলন প্রক্রিয়া এ বার এগিয়ে আনতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। নির্ধারিত সময়ের আগে সম্মেলন-পর্ব সেরে নিয়ে সেখান থেকেই নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় রদবদল করার ভাবনা রয়েছে তাঁদের। দিল্লিতে আগামী শুক্রবার বসছে পলিটব্যুরোর বৈঠক, তার পরের দু’দিন কেন্দ্রীয় কমিটি। সেখানেই এই সংক্রান্ত প্রাথমিক রূপরেখা ঠিক হতে পারে বলে সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত। একই সঙ্গে এ দিন বিমানবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের অন্দরে যে কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। কিন্তু দলের বাইরে অন্য মঞ্চ ব্যবহার করে বিষোদগার বরদাস্ত করা যায় না। তাই শুভনীল চৌধুরীর মতো তরুণ নেতাকে বহিষ্কার করতে হয়েছে।

আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকের প্রথম দিনে অমল হালদার, মানব মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক নেতা রাজ্য নেতৃত্বে আগাগোড়া পরিবর্তনের কথা বলেছিলেন। দ্বিতীয় দিন আবার প্রণব চট্টোপাধ্যায়, নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়েরা ‘পরিবর্তনপন্থী’দের পাল্টা আক্রমণ করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত মানিক সরকারকে দেখিয়ে তাঁরা এ দিন বলেছেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী রিকশা চেপে কর্মস্থলে যেতেন। এই উদাহরণ তাঁদের সামনেই আছে। অথচ এখানে যাঁরা রাজ্য নেতৃত্বের দিকে আঙুল তুলছেন, বাম জমানায় মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁদের স্ত্রীদের ব্যবহারের জন্য সরকারি গাড়ি যেত। অস্বাভাবিক অঙ্কের বিল মেটাতে হতো সরকারি কোষাগার থেকে! এই রকম যাঁদের জীবনযাত্রা, তাঁরা আবার অন্য নেতাদের দিকে আঙুল তোলেন কী ভাবে! উত্তর ২৪ পরগনার তড়িৎ তোপদার আবার দাবি তুলেছেন, এই কঠিন সময়ে নেতৃত্বের দিকে অহেতুক দোষারোপ যেমন উচিত নয়, তেমনই দলের ছেলেদের ভুলের জন্য ক্ষতি হল এমন কথাও বারবার বলা ঠিক নয়। তাঁর ইঙ্গিত ছিল একই সঙ্গে অমলবাবু ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যদের দিকে।

নেতৃত্বে পরিবর্তনের দাবি ছাড়াও এ বারের বৈঠকে বহু সদস্যই প্রশ্ন তুলেছিলেন কারাটদের রাজনৈতিক লাইন নিয়ে। কিন্তু কারাট এ দিন জবাবি ভাষণে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এমন ধারণা একেবারেই ভুল। এ বার বামেদের নির্বাচনী আহ্বান ছিল, কংগ্রেসকে পরাস্ত করো। বিজেপি-কে প্রত্যাখ্যান করো। পরাস্ত ও প্রত্যাখ্যান দু’টোই কড়া শব্দ। কংগ্রেস বা বিজেপি, কারও সম্পর্কেই নরম মনোভাবের কোনও প্রশ্নই নেই। পার্টি কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল, বামপন্থীরা নিজেরা শক্তিশালী হবে এবং গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে। তিন রাজ্যের বাইরে বামেদের শক্তি বিশেষ নেই বলেই অন্যান্য শক্তির সঙ্গে সমঝোতা করে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে লড়াই করতে হয়েছে। নিজেদের শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা এখনও জারি থাকবে। পাশাপাশিই কারাট এ দিন জানিয়ে দেন, কংগ্রেসকেই তাঁরা সমর্থন করবেন, এমন কথা সাক্ষাৎকারে বলেননি বুদ্ধবাবু। তাঁর কথার অপব্যাখ্যা হয়েছে।

বর্ধমানের অচিন্ত্য মল্লিক, অঞ্জু কর, আভাস রায়চৌধুরী বা উত্তর ২৪ পরগনার সায়নদীপ মিত্রেরা এ দিন বৈঠকে বিবরণ দিয়েছেন, কেমন সন্ত্রাসের মোকাবিলা তাঁদের করতে হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও কম-বেশি প্রশ্ন তুলেছেন সকলেই। সাংসদ ঋ

তব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, কলকাতায় রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবুর মিছিলে যখন হামলা হল, পলিটব্যুরো চুপ করে ছিল কেন? আক্রান্ত কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়াতে সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে প্রশাসনের উপরে চাপ সৃষ্টির প্রস্তাবও দেন তিনি। জবাবি ভাষণে কারাট জানান, এই মুহূর্তে আক্রান্ত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোই প্রথম কাজ। বিমানবাবুও জানিয়েছেন, আক্রান্ত এলাকায় কারা কী ভাবে গেলে কাজ হতে পারে, তার পরিকল্পনা তাঁরা করছেন।

biman basu left front cpm loksabha election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy