প্র: এ রাজ্যে সাধারণত ভোটে লড়াই হত সরাসরি বাম এবং কংগ্রেসের মধ্যে। পরবর্তীকালে কংগ্রেসের জায়গা দখল করে তৃণমূল। বিজেপি-র উপস্থিতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। এই প্রথম রাজ্যে চতুর্মুখী লড়াই হচ্ছে। ‘হর হর মোদী’ এ রাজ্যেও গুনগুন করছে। বিজেপি-কে খাটো করে দেখছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। এতটা গুরুত্ব পাওয়ার কারণ কী?
উ: সারা দেশেই মোদী লহর বা হাওয়া বইছে। এ রাজ্যে তার ব্যতিক্রম হবে কেন? এখানে তো সেই হাওয়া ঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে আমাদের অনুমান। কারণ, এ রাজ্যের মানুষ কংগ্রেসকে দেখেছে। ওরা দুর্নীতির মোড়কে দেশটাকে মুড়ে ফেলেছে। বামপন্থীরা এ রাজ্যে ৩৪ বছর ধরে রাজত্ব করেছে। শেষের দিকে মানুষের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তাই, ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটে বামপন্থীদের ছুঁড়ে ফেলেছে। ওদের আর উঠে দাঁড়াবার ক্ষমতা নেই। দিল্লি গিয়ে বামপন্থীরা কী করবে যে মানুষ ওদের ভোট দেবে! আর তৃণমূল তো তিন বছরে বামফ্রন্টের অপশাসনকেও হার মানিয়েছে। ওরা রাজ্যবাসীকে হতাশ করেছে। কেন্দ্রে বিজেপি-র বিকল্প কিছু নেই। মানুষ আমাদের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই, আমাদের এখন আর কেউ উপেক্ষা করতে পারছে না।
প্র: এ বার লোকসভা ভোটে রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রে প্রার্থী হওয়া জন্য প্রায় সাড়ে ছ’শো আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। যা কখনও বিধানসভার ২৯২টি আসনের জন্যও জমা পড়েনি। প্রার্থী হওয়ার জন্য এই উপচে পড়া আগ্রহের কারণ কী?
উ: এ বার ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের জন্য সাড়ে ছ’শো নয়, ৭৭৬টি আবেদন জমা পড়েছিল। এর থেকেই তো আভাস পাওয়া যাচ্ছে রাজ্যবাসীর চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। মানুষ বিজেপি-কে চাইছে বলেই তো বহু মানুষের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
প্র: রাজ্যের বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে গোষ্ঠীবাজির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপি কর্মীদের একাংশ। অনেক ক্ষেত্রে আপনি রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি হিসেবে পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলেও অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাদের মাপকাঠি কী কী?
উ: আমার কাছে এই ধরনের কোনও অভিযোগ আসেনি। দলে কোনও গোষ্ঠীবাজি আছে বলে আমার জানা নেই। তবে, দল বড় হচ্ছে। কোথাও কোথাও সামান্য ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকতে পারে। তা নিতান্তই স্থানীয় স্তরে হয়ে থাকলেও থাকতে পারে। তা মিটিয়েও ফেলেছেন দলের স্থানীয় কার্যকর্তারা। সৎ চরিত্র এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কলঙ্কমুক্ত ব্যক্তিদেরই আমরা প্রার্থী হিসেবে বেছে নিই। প্রার্থীর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি থাকাটা আমাদের দলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্র: এ রাজ্যে আপনাদের প্রার্থী তালিকায় মহিলা ও সংখালঘু প্রার্থী এত কম কেন?
উ: রাজ্যে ৪২টি আসনের মধ্যে দু’টি আসনে আমরা মুসলিম প্রার্থী এবং একটিতে খ্রিস্টান প্রার্থী দিয়েছি। আমাদের দলে এ রাজ্যে সংখ্যালঘু সদস্যের নিরিখে সংখ্যাটা ঠিকই আছে বলে মনে হয়। মহিলা প্রার্থী কম হলেও তার পিছনে অন্য কোনও ব্যাখ্যা নেই। মহিলা সদস্যের সংখ্যা যত বাড়বে মহিলা প্রার্থীর সংখ্যাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়বে।
প্র: বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে এ রাজ্যে বিজেপি-র ভোট বাড়লেও একটির বেশি আসন কেউই দিচ্ছে না। ক’টা আসন পাবেন এ রাজ্যে?
উ: সংখ্যাটা বলব না। তবে, আশাতীত সংখ্যক আসন পেলে অবাক হবেন না। প্রাক্-নির্বাচনী জনমত সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা করার উৎসাহ আমার নেই। ২০০৯ সালের ভোটে ওই ধরনের বিভিন্ন সমীক্ষার ফল দেশবাসীর জানা আছে। আমি মনে করি, ভোটের আগে সঠিক ফল বলে দেওয়ার মতো দক্ষতা জনমত সমীক্ষকদের এখনও হয়নি।
প্র: রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে। ভোটের পর তৃণমূলের সাহায্য ছাড়াই যদি দিল্লিতে আপনারা সরকার গঠন করেন তা হলে রাজ্যের প্রতি বৈষম্য আরও বেড়ে যাবে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। যদি বাস্তবে তা হয় সেই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি কি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হবে?
উ: কংগ্রেস যে ভাবে বিভিন্ন রাজ্যে অকংগ্রেসি সরকার ভেঙে দিয়েছে তা বিজেপি কখনও করবে না। বিজেপি-র একটা আলাদা সংস্কৃতি রয়েছে। আমরা ক্ষমতায় এলে কোনও রাজ্যের অ-বিজেপি সরকারকে বিপাকে ফেলব না। তবে একটা কথা রাজ্য সরকারগুলিরও মাথায় রাখতে হবে, দিল্লি থেকে উন্নয়নের জন্য যে টাকা আসবে তার হিসেব দিতে হবে। বিনা হিসেবে টাকা আমরা কাউকে দেব না।
প্র: আপনি নিজে কলকাতা উত্তর কেন্দ্র থেকে লড়ছেন। আপনি জিতলে ওই কেন্দ্রের জন্য কী কী করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন?
উ: আমার কেন্দ্রে প্রচুর গরিব মানুষের বাস। প্রচুর বেকার। পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। কলকাতার সবচেয়ে বেশি স্কুল-কলেজ রয়েছে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে। আশা করছি জিতব এবং এই কেন্দ্রকে একটি উন্নয়নের মডেল কেন্দ্র হিসেবে সারা দেশের সামনে তুলে ধরব।
প্র: আপনার কেন্দ্রে আরও তিন জন প্রার্থী রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে আপনার প্রধান পার্থক্য কোথায়?
উ: অন্যদের তুলনায় আমি বেশ খানিকটা এগিয়ে। তার কারণ, মানুষ বুঝে গিয়েছে, কেন্দ্রে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। আমি দিল্লি ও রাজ্যের মধ্যে সেতুর কাজটা সবচেয়ে ভাল করতে পারব। তা ছাড়া, মোদী হাওয়ার ফলেও আমি অন্য তিন প্রার্থীর চাইতে অনেকটা এগিয়ে রয়েছি।
প্র: আপনি দলের রাজ্য সভাপতি। নিজের কেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য কেন্দ্রেও আপনাকে যেতে হচ্ছে। এর ফলে প্রচারের ক্ষেত্রে নিজের কেন্দ্রের প্রতি কি অবিচার করছেন না?
উ: না। আমার সব কাজের জন্য সময় ভাগ করা আছে। ভোটের প্রচার আমি শুরু করি ভোর পাঁচটা থেকে। চিরদিনই আমি ওই সময় হাঁটতে যাই। প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সঙ্গে আলাদা করে ভোটের কথা বলতে হয় না। আগেও তাঁদের সঙ্গে যে ভাবে গল্প-গুজব করতাম এখনও তা-ই করি। তার পর যাই পাড়ায় পাড়ায় প্রচারে। সেখান থেকে সোজা রাজ্য দফতরে। সেখানে দলীয় কাজকর্ম সেরে ফের প্রচার শুরু করি বিকেল পাঁচটা থেকে। চলে রাত ন’টা অবধি। প্রচার সেরে দলীয় কাজকর্ম করি, সামাজিক কোনও অনুষ্ঠান থাকলে সেখানে যাই। তার পর বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে শুতে শুতে রাত বারোটা বেজে যায়।
প্র: এ রাজ্যে ক্ষমতায় বিজেপি-কে কত দিন পর দেখা যাবে?
উ: এ রাজ্যে এ বারে লোকসভা ভোটে বিজেপি যে ভাবে আত্মপ্রকাশ করবে তা কেউ ভাবতেই পারছেন না। ফল প্রকাশের পর সবাই বুঝতে পারবে, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য পাবে এক নতুন সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy