Advertisement
১৯ মে ২০২৪

রাজ্যের ৪২ কেন্দ্রেই পুলিশ পর্যবেক্ষক

পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে ভোট পরিচালনার জন্য প্রথম দফায় আট জন আইপিএস অফিসারকে পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিভিন্ন জেলার সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা খতিয়ে দেখে আরও ন’জন পুলিশ পর্যবেক্ষককে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরের মুখপাত্র অমিত রায়চৌধুরী। কমিশন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে আট জন পুলিশ পর্যবেক্ষককে ১৭টি কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ বার স্থির হয়েছে ৪২টি কেন্দ্রেই নজর রাখবেন মোট ১৭ পর্যবেক্ষক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:১৭
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গে সুষ্ঠু ভাবে ভোট পরিচালনার জন্য প্রথম দফায় আট জন আইপিএস অফিসারকে পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিভিন্ন জেলার সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা খতিয়ে দেখে আরও ন’জন পুলিশ পর্যবেক্ষককে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের (সিইও) দফতরের মুখপাত্র অমিত রায়চৌধুরী। কমিশন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে আট জন পুলিশ পর্যবেক্ষককে ১৭টি কেন্দ্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ বার স্থির হয়েছে ৪২টি কেন্দ্রেই নজর রাখবেন মোট ১৭ পর্যবেক্ষক।

ভোট পরিচালনার স্বার্থে শুধু পুলিশ বা সাধারণ পর্যবেক্ষকরাই এ রাজ্যে আসবেন তা নয়, তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করতে এক জন সিনিয়র আইএএস অফিসারকেও রাজ্য-পর্যবেক্ষক (স্টেট অবজার্ভার) করে পাঠানো হতে পারে বলে কমিশন সূত্রের খবর। খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দিল্লি। সিইও-র দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রেই এক জন সাধারণ পর্যবেক্ষক থাকবেন। দলগুলির ভোটের খরচ দেখার দায়িত্বে আরও ৪২ জন ব্যয়-পর্যবেক্ষক। এ ছাড়াও থাকবেন পুলিশ পর্যবেক্ষকরা। রাজ্য-পর্যবেক্ষক করে কাউকে পাঠানো হলে তিনি থাকবেন সবার মাথার উপরে।”

রাজ্য-পর্যবেক্ষক অবশ্য নতুন নয় পশ্চিমবঙ্গে। ২০০৪ সালে আফজল আমানুল্লা নামে বিহার সরকারের সচিব স্তরের এক অফিসারকে এ রাজ্যে পাঠানো হয়েছিল ওই দায়িত্ব দিয়ে। সে বার ভোটের প্রচারে বামফ্রন্টের কয়েক জন নেতা পর্যবেক্ষকদের বিরুদ্ধে এমন কিছু মন্তব্য করেন যে রাজ্যের বেশ কিছু জেলায় চরম উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে ভোট প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে আমানুল্লাকে রাজ্য-পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠায় কমিশন। কমিশনের এক কর্তা বলেন, “সার্বিক ভোট-পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আমানুল্লা দিল্লিতে যে রিপোর্ট পাঠান, তাতে রাজ্যে ভোট স্থগিত রাখার ইঙ্গিত ছিল। এর পরে কমিশনের কাছে চিঠি দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দেন বাম নেতৃত্ব।”

কিন্তু ২০১৪-তেও কেন রাজ্য পর্যবেক্ষকের কথা ভাবতে হচ্ছে? কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, রাজ্যের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় এমন ভাবনা। কারণ, বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় প্রতিদিনই সংঘর্ষের খবর আসছে। ভোট প্রক্রিয়া শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৩৪২টি হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। তাতে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। ক’দিন আগে সরকারি সম্পত্তিতে লাগানো দলীয় পতাকা খুলতে গিয়ে শাসক দলের সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হন হাওড়ার ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট’ (এমসিসি) সেলের কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার মানিকচকে তৃণমূলের মোটরবাইক মিছিল বন্ধ করতে গেলে মারধর করা হয় জেলা এমসিসি সেলের একাধিক কর্মীকে। সেই খবর জানাজানি হতেই ঘটনার খুঁটিনাটি জানিয়ে জেলাশাসককে দ্রুত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেয় সিইও-র দফতর। পাশাপাশি জেলা পুলিশকেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করে দু’জনকে। কমিশনের মুখপাত্রের কথায়, “মালদহ পুলিশের এই পদক্ষেপে খুশি হতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার সকালে দিল্লি থেকে কমিশন নির্দেশ পাঠায়, এফআইআর-এ নাম থাকা সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করতে হবে।” কমিশনের তথ্য অধিকর্তা বীরেন্দ্র ওঝা বিকেলে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের ডিজি জিএমপি রেড্ডি জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সকলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

কমিশনের মুখপাত্র এ দিন বলেন, “নির্বাচন নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ভোটের সময় গোলমাল পাকাতে পারে এমন সব লোকের নাম জানাতে বলা হয়েছিল সমস্ত জেলা প্রশাসনকে। সেই মতো বীরভূমের জেলাশাসকের যে রিপোর্ট পৌঁছেছে সিইও-র দফতরে, সেখানেও নাম আছে জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের।” প্রশাসন তাঁর উপরে নজর রাখছে, এ কথাও জানানো হয়েছে ওই রিপোর্টে।

অনুব্রত অবশ্য জেলাশাসকের ওই তালিকাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, “এটা রুটিন ব্যাপার। গত এক বছরে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, সেই তালিকা কমিশন জেলার সমস্ত থানার থেকেই চেয়েছিল। পাড়ুই থানায় অনুব্রতর বিরুদ্ধে মামলা থাকায় তাঁর নাম ওই তালিকায় উঠেছে। এর সঙ্গে গোলমাল পাকানোর সম্পর্ক নেই।” আর অনুব্রতর নিজের বক্তব্য, “আমি আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থাশীল। আশা করি সুবিচার পাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lok sabha election election in west bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE