এক সপ্তাহ আগে রেলের গ্রুপ-ডি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। তার পরে সেই পরীক্ষা বাতিলের দাবি ওঠে। কিন্তু শুক্রবার পর্যন্ত পরীক্ষা বাতিলের ব্যাপারে রেলের তরফে কোনও ঘোষণা তো করা হয়ইনি। উল্টে পুরো বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার তোড়জোড় চলছে বলে অভিযোগ উঠছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব রেলের কর্তাদের কাছে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছে রেল বোর্ড।
২৯ নভেম্বর গভীর রাতে নদিয়ার ঘাগুরগাছি গ্রামের একটি বাড়িতে হঠাৎ হানা দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ভিজিল্যান্স-কর্তারা হাতেনাতে বেশ কয়েক জন পরীক্ষার্থীকে ধরে ফেলেন। সেখানে হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে রেলের গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের পরীক্ষার জন্য প্রার্থীদের প্রশ্নপত্র দেওয়া হচ্ছিল। অনেকের হাত ধরে লিখিয়ে দেওয়া হচ্ছিল সেই সব প্রশ্নের উত্তরও। প্রার্থীদের কাছে সে-রাতে যে-সব প্রশ্ন পাওয়া গিয়েছিল, পরের দিন রেলের ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে তা হুবহু মিলে যায়।
সেই তল্লাশি অভিযান হয় দিন সাতেক আগে। প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত বলে ভিজিল্যান্সের রিপোর্টে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি না, সেই ব্যাপারে পূর্ব রেল কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তের বদলে সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে এই খবর ফাঁস হয়েছে, আরআরসি (রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট সেল) দফতরের কর্তারা সেটারই তদন্তে ব্যস্ত। তবে রেল বোর্ড রিপোর্ট চাওয়ায় রেলকর্তারা এখন নড়েচড়ে বসেছেন বলে রেল সূত্রের খবর।
যে-কোনও রাজ্যে মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বা অন্য কোনও পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলে সরকারের তরফে রাতারাতি সেই পরীক্ষা বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, আবার কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে। রেলের গ্রুপ-ডি পদে নিয়োগের পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা মাধ্যমিকের চেয়ে অনেক বেশি। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই রেলের দু’টি জোন মিলিয়ে ওই পরীক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় ১৭ লক্ষ। আর এই সংখ্যাতেই স্পষ্ট, কর্মহীনদের কাছে এই পরীক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু সাত দিনেও আরআরসি ওই প্রশ্ন ফাঁস বা পরীক্ষা বাতিলের ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ওই ঘটনা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেই রেলকর্তারা বলছেন, এখনও তদন্ত চলছে। তবে রেলের কর্মী ও অফিসারদের একাংশের প্রশ্ন, রেলের ভিজিল্যান্সই তো প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে রিপোর্ট দাখিল করেছে। তা হলে আবার তদন্ত করার কী আছে? প্রশ্ন ফাঁস বা অর্থ নয়ছয়, রেলের সব ধরনের দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে তাদের ভিজিল্যান্সই। এ ক্ষেত্রে ভিজিল্যান্সের তদন্তে প্রশ্ন-কারচুপি প্রমাণিত হওয়ার পরে রেলকর্তারা সেই তথ্য মানতে চাইছেন না কেন? রেলকর্মীরাই প্রশ্ন তুলেছেন, কর্তারা কি অপরাধীদের আড়াল করার জন্য ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চাইছেন?
আর পরীক্ষার্থীদের বক্তব্য, আসলে এই ঘটনার ঠিকঠাক তদন্ত হলে অনেক রেলকর্তারই কপাল পুড়বে। সম্ভবত সেই জন্যই পূর্ব রেলের আধিকারিকেরা এই ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটে বসে রয়েছেন।
শুধু এ বছর নয়, রেলের নিয়োগ পরীক্ষায় মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এ বার ঘটনাটা ঘটেছে পূর্ব রেলে। গত বছর দক্ষিণ-পূর্ব রেলেও একই অভিযোগ উঠেছিল। প্রতি বারেই শেষ পর্যন্ত পুরো ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দেন রেলকর্তাদের একাংশ। এ বারেও সেই চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এই নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বচ্ছতা অভিযানকে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, “এই ঘটনায় বোঝা যায়, মোদীর স্বচ্ছ প্রশাসন কেমন চলছে!” বিষয়টি তিনি সংসদেও তুলবেন বলে জানিয়েছেন। অধীরবাবুর বক্তব্যের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “প্রশাসন তো ওঁদেরই তৈরি। আমরা সবে এসেছি। এই ঘটনা ঘটে এক দিকে ভাল হয়েছে। ফাঁক বেরিয়ে পড়েছে। মেরামতি চলছে। স্বচ্ছতা আসবেই।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেল টাকা নিয়েও অ্যাডমিট কার্ড না-পাঠানোয় কয়েক লক্ষ প্রার্থী ওই পরীক্ষাতেই বসতে পারেননি। তার পরেও পরীক্ষায় বসতে না-পারা প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ওই রেল। নিয়ম ভেঙে কেন অ্যাডমিট কার্ড পাঠানো হল না, তারও কোনও ব্যাখ্যা এখনও দিতে পারেনি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy