প্রস্তুতি। বুধবার ব্রিগেডে মাইকের সারি। —নিজস্ব চিত্র।
আজ জমজমাট ব্রিগেড থেকেই লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি দিতে চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের এই সমাবেশ থেকেই মমতা শুধু দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের নয়, শীর্ষ নেতৃত্বকেও জানিয়ে দেবেন আসন্ন লোকসভা ভোটের পথনির্দেশিকা। নেত্রীর কাছ থেকে সেই বার্তা পাওয়ার পরেই পুরোদমে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেবেন দলের নেতা-কর্মীরা।
ব্রিগেড সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল গত বছর ২১ জুলাই। কিন্তু প্রথমে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে টানাপোড়েন, পরে পুরভোটের জেরে ঠিক হয়েছিল সমাবেশ হবে নভেম্বরে। সেই দিনক্ষণও যে শেষ পর্যন্ত বদলে দেওয়া হয়, তার কারণ, ব্রিগেডে কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ থেকেই লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করতে চেয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
একদা এই ব্রিগেড থেকেই রাজ্যের তৎকালীন শাসক সিপিএমের ‘মৃত্যুঘণ্টা’ বাজিয়েছিলেন মমতা। তৎকালীন বিরোধী নেত্রীর সেই সমাবেশে মানুষ উপচে পড়েছিল। আজও ঠিক তেমন ভাবেই ব্রিগেডে লোকের ঢল নামবে বলে আশা করছেন তৃণমূল নেতারা। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে পরেই ব্রিগেড সমাবেশ করেছিল তৃণমূল। দলের নেতারা বলছেন, আড়াই বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও মমতার জনপ্রিয়তা তিলমাত্র কমেনি, আজ তা প্রমাণ হয়ে যাবে। বুধবার ব্রিগেডে প্রস্তুতির তদারকি করতে করতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “এ বারের ব্রিগেড হবে ঐতিহাসিক।” কেন? মুকুলবাবু ব্যাখ্যা দিলেন, এই ব্রিগেড থেকেই জাতীয় ক্ষেত্রে নির্ধারক শক্তি হওয়ার পথে পা রাখবে তৃণমূল।
আজ মঞ্চ থেকে কী বলবেন মমতা?
দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, সনিয়া গাঁধীর ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটের মুখে বা পরে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করা হবে কি হবে না, সেটা পরের কথা। আপাতত চাপ বাড়াতে রাজ্যের সব আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা বলতে পারেন মমতা। যে কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন মুকুল রায়। আসলে তৃণমূল নেত্রী মনে করছেন, কংগ্রেসের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে গোটা দেশে একটা হাওয়া উঠেছে। সাম্প্রতিক জনমত সমীক্ষাগুলিতেও সেই ছবিটাই উঠে এসেছে। এখন তাদের সঙ্গে জোট বাঁধার কথা বললে সেই দায় তৃণমূলের ঘাড়ে এসেও বর্তাবে। পাশাপাশি, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কের কারণে বিজেপি-র বিরোধিতা করার দায়বদ্ধতাও রয়েছে তাঁর। সেই কারণে আজ ব্রিগেডের মঞ্চ থেকে কংগ্রেস এবং বিজেপি দু’দলের থেকেই সমদূরত্ব বজায় রাখার কথা বলতে পারেন মমতা।
তৃণমূলের আর একটি অংশের বক্তব্য, লোকসভা ভোট পরবর্তী পর্যায়ে আঞ্চলিক দলগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। মমতা নিজেও এর আগে একাধিক বার এই দলগুলির জোট বা ফেডেরাল ফ্রন্টের কথা বলেছেন। আজ ব্রিগেড থেকে আরও এক বার সে কথা বলতে পারেন তিনি। পাশাপাশি, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে নির্ণায়ক ভূমিকা নেওয়ার জন্য আসন সংখ্যা যতটা সম্ভব বাড়িয়ে রাখা প্রয়োজন। তৃণমূলের ওই অংশের দাবি, মমতা চাইছেন আসন সংখ্যা এমন জায়গায় নিয়ে যেতে, যাতে তাঁর দল অন্য সব আঞ্চলিক দলকে ছাপিয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই অন্য রাজ্যেও প্রার্থী দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব তৈরি করতে চাইছে তৃণমূল। আজকের ব্রিগেড সে দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলছেন দলীয় নেতারা। কেননা, একাধিক রাজ্য থেকে বহু সমর্থক ব্রিগেডে যোগ দিতে শহরে এসেছেন।
বস্তুত, রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৃণমূল নেতৃত্ব নজর দিয়েছেন জাতীয় রাজনীতিতে দলের প্রাধান্য বাড়াতে। বিশেষ করে, উত্তর-পূর্ব ভারতে সংগঠনের প্রসারে মুকুলবাবুরা গুরুত্ব দিয়েছেন।
আজ ব্রিগেডে উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, মণিপুর, সিকিম, অসম, ত্রিপুরা, বিহার থেকেও বহু নেতা-কর্মী যোগ দেবেন বলে মুকুলবাবুরা জানিয়েছেন। এমনই কয়েক জন বুধবার ব্রিগেডে এসেছিলেন প্রস্তুতি দেখতে। তাঁদের দেখিয়ে মুকুলবাবু বলেন, “এ বারের ব্রিগেড সমাবেশ থেকে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইয়ের জন্য দলনেত্রী কী নির্দেশিকা দেন, তা জানার জন্য শুধু এ রাজ্যের নয়, অন্য রাজ্যের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও সমান উৎসুক।”
শুধু লোকসভা ভোটের প্রচার শুরুই নয়, অন্য রাজনৈতিক দলকে টেক্কা দেওয়ার প্রশ্নেও এ বারের ব্রিগেড তৃণমূলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী মাসের ৫ তারিখে ব্রিগেডে নরেন্দ্র মোদীর সভা। তার পরেই বামেদের। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, আজকের ব্রিগেডের সঙ্গে ওই দুই সমাবেশ যাতে কোনও ভাবে তুলনাতেই না আসে, সেটা নিশ্চিত করাই তাঁদের চ্যালেঞ্জ।
এই সবের পরিপ্রেক্ষিতেই মুকুলবাবুর বক্তব্য, “সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে এ বার ব্রিগেড সমাবেশ করতে চলেছি আমরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy