Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লগ্নি-কর্ণধারকে ধরতে গড়িমসি, কোর্টের তোপে সিপি

পাড়ুই হত্যাকাণ্ড এবং তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের উস্কানিমূলক মন্তব্যের মামলায় বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে তুলোধোনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর শুক্রবার হাইকোর্টের তলবে এজলাসে হাজিরা দিয়েই নিজের বাহিনীর অক্ষমতার কথা শুনতে হল কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৯
Share: Save:

পাড়ুই হত্যাকাণ্ড এবং তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের উস্কানিমূলক মন্তব্যের মামলায় বুধ ও বৃহস্পতিবার রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে তুলোধোনা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর শুক্রবার হাইকোর্টের তলবে এজলাসে হাজিরা দিয়েই নিজের বাহিনীর অক্ষমতার কথা শুনতে হল কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকে।

বারবার নির্দেশ সত্ত্বেও ভবানীপুর থানা চুক্তি খেলাপে অভিযুক্ত একটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার মালিককে গ্রেফতার না-করায় সিপি-কে চোখা চোখা কথা শোনাল উচ্চ আদালত। বিচারপতি সৌমেন সেন এ দিন কলকাতা পুলিশের অতীতের গৌরবের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওই বাহিনীর বর্তমান প্রধানকে বাক্যবাণে বিঁধেছেন। একদা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের নাম উচ্চারিত হলেও এখন কেন আর সেই তুলনা চলে না, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সেই ব্যাখ্যায় দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেছেন ভবানীপুর থানার তদন্তকারীর দায়সারা কাজের নানান নমুনা।

তারই মধ্যে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই অর্থ লগ্নি সংস্থার মালিক কৌশিককুমার নাথকে পুলিশ এ দিনই ভোরে দিল্লিতে গ্রেফতার করেছে। এটা নিছক সমাপতন, নাকি এতে কোনও রহস্য আছে, প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। কৌশিককে গ্রেফতার করার জন্য জুলাই থেকে হাইকোর্ট দু’-দু’বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। অথচ হাইকোর্টে পুলিশ কমিশনারের হাজিরার দিনেই তাঁকে কী ভাবে গ্রেফতার করা গেল, তা নিয়ে আইনজীবী মহলে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ কমিশনারকে যাতে উচ্চ আদালতে কড়া কথা শুনতে না-হয়, সেই জন্যই এ দিন ভোরে তড়িঘড়ি কৌশিককে গ্রেফতার করা হল বলে মনে করছেন আইনজীবীদের অনেকেই। কলকাতা পুলিশের কর্তাদের কেউই অবশ্য এই ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি।

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়সারা কাজকর্মের বিষয়টি ইদানীং বারবার কাঠগড়ায় উঠছে। গত দু’দিনে পাড়ুই হত্যাকাণ্ড এবং তাপস পাল মামলায় রাজ্য পুলিশের তীব্র সমালোচনা করে হাইকোর্ট বুঝিয়ে দিয়েছে, পুলিশের কাজে আর আস্থা রাখা যাচ্ছে না। রাজ্য পুলিশের ডিজি-র উপরে আদালতের আস্থা চুরমার হয়ে হয়ে গিয়েছে বলে পাড়ুই কাণ্ডে রায় দিতে গিয়ে বুধবার মন্তব্য করেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। এ দিন বিচারপতি সেনের এজলাসে হাজির হয়ে পুলিশ কমিশনারকে এতটা কড়া কথা শুনতে না-হলেও তিনি বিলক্ষণ বুঝে গিয়েছেন, তাঁর বাহিনীর কাজ নিয়ে উচ্চ আদালত মোটেই খুশি নয়।

কলকাতা পুলিশের গৌরবের ইতিদাস উস্কে বিচারপতি সেন এ দিন পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, “মনে রাখবেন, কলকাতা পুলিশকে আগে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে তুলনা করা হতো!”

পুলিশ কমিশনারকে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছিল কেন?

পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত কৌশিককুমার নাথ অন্য একটি অর্থ লগ্নি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনেন। কিছু দিন পরে সেই সংস্থা কৌশিকের বিরুদ্ধে চুক্তি খেলাপের অভিযোগ এনে হাইকোর্টে মামলা করে। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল হাইকোর্ট। ভবানীপুর থানার পুলিশ সেই পরোয়ানা রূপায়ণে টালবাহানা করায় পুলিশ কমিশনারকে এ দিন হাইকোর্টে তলব করা হয়েছিল। ক্ষুব্ধ বিচারপতি সরাসরি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে দেন, পুলিশ যে শুধু অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেনি তা-ই নয়, পরোয়ানা কার্যকর না-হওয়ার ব্যাপারে ভবানীপুর থানা যে-ক’টি রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছে, তা-ও অত্যন্ত দায়সারা।

সিপি-র উদ্দেশে বিচারপতি সেন বলেন, “আপনার বাহিনীর নিচু তলার এমন দায়সারা কাজের ব্যাপারে আপনি যে কিছুই জানেন না, সেই বিষয়ে আমি নিশ্চিত। পুলিশ কমিশনারের পক্ষে সব কিছু জানা সম্ভবও নয়। আপনার বাহিনী কী ভাবে কাজ করছে, তা জানানোর জন্যই আপনাকে আদালতে তলব করা হয়েছে।”

বিচারপতির মন্তব্য, মামলার তদন্তকারী অফিসার একাধিক বার আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা রূপায়ণ করতে না-পারার কারণ হিসেবে যে-রিপোর্ট জমা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত দায়সারা। বিচারপতি সেন পুলিশ কমিশনারকে মনে করিয়ে দেন, আদালতে যখন কোনও রিপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়, সেটা যথাযথ তথ্য দিয়ে পেশ করাই সমীচীন।

এই সময়েই রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে এ দিন ভোরে দিল্লির দ্বারকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় আনা হচ্ছে। বিচারপতি সেন এর পরে পুলিশ কমিশনারকে বলেন, “আপনি আপনার কাজে যেতে পারেন।”

তার পরেই ভবানীপুর থানার ওসি-র খোঁজ করেন বিচারপতি সেন। ওসি সুব্রত দে সামনে এগিয়ে যান। বিচারপতি তাঁর কাছে জানতে চান, ভবানীপুর থানার কোন অফিসারের উপরে ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা রূপায়ণের ভার পড়েছিল? ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তখন সেই সময় আদালতেই ছিলেন। তাঁকে দেখিয়ে দেন ওসি। বিচারপতি সেই অফিসারকে বলেন, “এখন থেকে এই ধরনের কোনও রিপোর্ট পাঠানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।” বিচারপতি নির্দেশ দেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২৯ সেপ্টেম্বর, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁর আদালতে হাজির করাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE