Advertisement
০৩ মে ২০২৪

শান্তনু কারখানা বেচেছেন দেনা লুকিয়েই: ইডি

দু’দফায় টাকা সরানোর অভিযোগ তো আছেই। সেই সঙ্গে জেনাইটিস-মালিক শান্তনু ঘোষ যাবতীয় দেনা এবং অন্যান্য ‘লায়াবিলিটিজ’ বা দায়ভার লুকিয়ে নিজের মোটরবাইক কারখানাটি সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছে বিক্রি করেছিলেন বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তরফে বুধবার আদালতে জানানো হয়েছে।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে শান্তনু ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে শান্তনু ঘোষ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৪ ০৩:১৭
Share: Save:

দু’দফায় টাকা সরানোর অভিযোগ তো আছেই। সেই সঙ্গে জেনাইটিস-মালিক শান্তনু ঘোষ যাবতীয় দেনা এবং অন্যান্য ‘লায়াবিলিটিজ’ বা দায়ভার লুকিয়ে নিজের মোটরবাইক কারখানাটি সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের কাছে বিক্রি করেছিলেন বলে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র তরফে বুধবার আদালতে জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইডি-র অভিযোগ, শুধু মোটরবাইক তৈরির কারখানা নয়, শান্তনু ‘বেঙ্গল মিডিয়া’ নামে তাঁর অন্য একটি সংস্থাও প্রায় জোর করেই বিক্রি করেছিলেন সারদা-প্রধানের কাছে। ব্যাঙ্কঋণের টাকা এবং ওই দু’টি সংস্থা বিক্রির টাকা কী ভাবে কোথায় সরিয়ে ফেলা হয়েছে, তা জানতে এ দিন শান্তনুকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা শুরু করেছে ইডি। ৩০ জুন পর্যন্ত তাঁকে ওই তদন্ত সংস্থার হেফাজতে থাকতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

জেনাইটিস গ্রুপ অব কোম্পানিজের কর্ণধার শান্তনু মোটরবাইক তৈরির কারখানা-সহ কয়েকটি সংস্থা চালানোর জন্য সাতটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি ‘কনসর্টিয়াম’ বা সঙ্ঘ থেকে ২০০ কোটি ঋণ নিয়েছিলেন বলে জানাচ্ছে ইডি। তাদের অভিযোগ, মোটরবাইক কারখানার যথাযথ পরিকাঠামোই ছিল না। কাগজেকলমে দেখানো হয়েছিল, কারখানাটি তখন লোকসানে চলছে। ব্যাঙ্কঋ

ণের টাকা অন্যত্র সরিয়েও দিয়েছিলেন অভিযুক্ত শান্তনু। কারখানা বিক্রির আগে তার বাজারদর বেশ খানিকটা চড়িয়ে দেন তিনি। তার পরে তা বিক্রি করেন সুদীপ্তের কাছে। ইডি-র তদন্তকারীদের অভিযোগ, বিক্রির সময় মোটরবাইক কারখানার দেনা এবং অন্যান্য দায়ভারের কথা সুদীপ্তের কাছে গোপন করে যান।

একই ভাবে ‘বেঙ্গল মিডিয়া’ সংস্থাটিও সারদা-প্রধানের কাছে বিক্রি করে দেন জেনাইটিস-মালিক। এবং ওই সংস্থার লোকসানের কথাও গোপন রাখা হয় সুদীপ্তের কাছে।

জোড়া সংস্থা বিক্রি করে কত টাকা পেয়েছিলেন শান্তনু?

ইডি-র দাবি, সারদা-প্রধান দু’দফায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন জেনাইটিস-মালিককে। ইডি-র এক অফিসার এ দিন জানান, প্রথমে জেনাইটিস-প্রধানের ওই দু’টি সংস্থা কিনতে রাজি হচ্ছিলেন না সুদীপ্ত। পরে তিনি সম্মতি দেন। মোটরবাইক কারখানার সব শেয়ারও কিনে নেন সারদার কর্ণধার।

আপত্তি থাকা সত্ত্বেও সুদীপ্ত পরে কারখানা কিনতে রাজি হলেন কেন?

এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকার কথা তুলেছে ইডি। তাদের বক্তব্য, রাজ্যের প্রভাবশালী কিছু লোক সুদীপ্তকে বুঝিয়েছিলেন যে, কিনে ফেলার পরে সংস্থা দু’টির লোকসানের বোঝা জনগণের আমানতের টাকায় (সারদা গোষ্ঠীর আমানতকারীদের টাকা) মিটিয়ে দিলে তাঁর আর কোনও দায় থাকবে না।

দেনা এবং অন্যান্য দায়ভার লুকিয়ে জোড়া সংস্থা বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে শান্তনুর বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ টাকা সরানোর অভিযোগও এনেছে ইডি। তাদের অভিযোগ, শান্তনু টাকা সরিয়েছেন দু’দফায়। প্রথমে সরিয়ে ফেলেন ব্যাঙ্কঋণের টাকা। পরে সুদীপ্তের কাছে চড়া দামে মোটরবাইক কারখানা এবং বেঙ্গল মিডিয়া বিক্রির টাকাও সরান তিনি। ইডি এ দিন আদালতে আবেদন জানায়, শান্তনু কী ভাবে কয়েক কোটি টাকা সরিয়েছেন, তা জানতে তাঁকে জেরা করা দরকার। তাই তাঁকে তাদের হেফাজতে দেওয়া রাখার অনুমতি দেওয়া হোক।

‘মানি লন্ডারিং’ (টাকা পাচার) আইনে ধৃত শান্তনুকে এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারক মহম্মদ মুমতাজ খানের আদালতে হাজির করান ইডি-র তদন্তকারীরা। ইডি-র আইনজীবী ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিজিৎ ভদ্র আদালতে জানান, ওই অভিযুক্ত কোথায় এবং কী ভাবে টাকা সরিয়েছেন, ইডি-র অফিসারেরা তা খতিয়ে দেখতে চান। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তকে পাঁচ দিন নিজেদের হেফাজতে রাখতে চান তদন্তকারীরা।

কর্মরত এক আইনজীবীর মৃত্যুতে এ দিন কর্মবিরতি পালন করেন অন্য আইনজীবীরা। তাই শান্তনু নিজেই যাতে তাঁর বক্তব্য পেশ করতে পারেন, সেই সুযোগ দেন বিচারক। শান্তনু আদালতে জানান, সংস্থা দু’টি বিক্রির আগে ব্যাঙ্কগুলিকে দিয়ে তিনি সব হিসেবপত্র পরীক্ষা করিয়েছিলেন। তিনি নিজেও একটি হিসেব পরীক্ষক সংস্থার সাহায্য নেন। তার পরে তিনি সংস্থা দু’টি বিক্রি করেন। তা ছাড়া ইডি-র কাছে তিনি এর আগে একাধিক বার যাবতীয় হিসেবপত্র বা নথি জমা দিয়েছেন। তিনি কোনও ভাবেই দোষী নন। বিচারক যেন তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন।

বিচারক অবশ্য দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে জেনাইটিস-মালিকের জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam ed shantanu genetis owner
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE