Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সংগঠনে জোর কোথায়, সরব বিজেপি নেতারা

দরকার ছিল ছোটখাটো স্থানীয় বিষয় নিয়ে জেলায় জেলায় পথে নামা। তরতাজা তরুণদের দলে আনা, যাঁরা নিষ্ঠা নিয়ে দলটা করবেন। নিয়মিত পথসভা, জনসংযোগ করে মানুষকে বার্তা দেবেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে বিজেপি আগাগোড়া ময়দানে রয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩৮
Share: Save:

দরকার ছিল ছোটখাটো স্থানীয় বিষয় নিয়ে জেলায় জেলায় পথে নামা। তরতাজা তরুণদের দলে আনা, যাঁরা নিষ্ঠা নিয়ে দলটা করবেন। নিয়মিত পথসভা, জনসংযোগ করে মানুষকে বার্তা দেবেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে বিজেপি আগাগোড়া ময়দানে রয়েছে। অথচ বাস্তবে দেখা গিয়েছে, সংগঠন বাড়ানোর এই সমস্ত পথে আদৌ হাঁটেননি রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের নিচু তলার ক্ষুব্ধ কর্মীরাই বলছেন, লাভের মধ্যে শুধু বাইরে থেকে লোক ধরে ধরে এনে ভিড় বাড়ানো হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সভায়। আগু-পিছু বিচার না করেই অন্য দল থেকে যাকে-তাকে নিয়ে আসা হয়েছে দলে। আর আনা হয়েছে টালিগঞ্জের কিছু পিছনের সারির মুখকে।

ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। প্রবল তৃণমূল বিরোধী হাওয়া সত্ত্বেও জোড়া উপনির্বাচনে তার আশানুরূপ ফায়দা তুলতে পারেনি বিজেপি। শতাংশের নিরিখে ভোট যতই বাড়ুক, বনগাঁয় তো তৃতীয় স্থান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হল তাদের। ফল বেরোনো ইস্তক দলের পুরনো কর্মীদের মধ্যে রাজ্য নেতৃত্বের মনোভাব নিয়ে ক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়েছিল। এ বার সেই ক্ষোভের কথা বুধবার দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে খোদ রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সামনে তুলে ধরলেন কিছু নেতা। উত্তপ্ত হল বৈঠক।

বিজেপি সূত্রের খবর, দলের অন্তত তিন জন নেতা এ দিনের বৈঠকে যে সব ‘অপ্রিয়’ প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার সন্তোষজনক কোনও ব্যাখ্যা তাঁরা রাজ্য সভাপতির কাছ থেকে পাননি। বরং সভাপতি এমন কিছু যুক্তি দিয়েছেন, যাতে তাঁদের ক্ষোভ আরও বেড়ে গিয়েছে। দলীয় সতীর্থদের প্রশ্নের মুখে পড়ে রাজ্য সভাপতি বৈঠকে বলেন, পাঁচ জন লোক নিয়ে তো ভোটে জেতা যায় না! সংগঠন করার লোক দলে কোথায় (এ দিনই অবশ্য বিজেপির সরকারি কর্মচারী পরিষদ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা খুলেছে)?

এই সূত্রেই দলীয় নেতা-কর্মীদের বক্তব্য, লোক যখন নেই, তখন নিষ্ঠাবান কর্মী-সদস্য বাছাই করার দায়িত্বটাও রাজ্য নেতৃত্বের উপরেই বর্তায়। লোকসভা ভোটে মোদী-ঝড়, তৃণমূলের সারদা-বিপর্যয় সেই সুবর্ণ সুযোগ করে দিয়েছিল। রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের মনে আস্থা জাগাতে তখন থেকেই মাটি কামড়ে পড়ে থাকার দরকার ছিল। ঠিক যে ভাবে এক দিন তৃণমূলের সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন মুকুল রায়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তৃণমূল নেতাকেও তিনি নামে চেনেন। এই রণকৌশল যে বিজেপিতেও জরুরি, একাধিক বার দলের মধ্যে সেই দাবি উঠেছিল। অথচ কার্যক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ব্রিগেড বা ধর্মতলার মতো জনসভায় বাস বোঝাই করে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে গাদা গাদা লোক আনা হয়েছে। কিন্তু শুধু সেই ভিড় এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘ভাগ মমতা ভাগ’ বা ‘ভাগ মদন ভাগ’ স্লোগান যে রাজ্যের ভোটে জেতার পক্ষে যথেষ্ট নয়, নেতাদের তা বোঝা উচিত ছিল বলে কর্মীদের বক্তব্য।

বস্তুত, তাঁদের সব চেয়ে বড় ক্ষোভ, স্থানীয় স্তরে যাঁরা দীর্ঘ দিন ধরে বিজেপি করছেন, দলের কর্মপন্থা ও ভাবধারার সঙ্গে যাঁরা সম্যক পরিচিত, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়ার বদলে অন্য দল থেকে নিয়ে আসা লোকেদের কেন বাড়তি খাতির করা হবে? এই ‘মডেল’ নিয়েই এ দিন প্রশ্ন তোলেন এক সাধারণ সম্পাদক। লোকসভা ভোটে প্রার্থী ছিলেন, এমন এক নেতা আবার সরব হন বুথভিত্তিক রিপোর্ট নিয়ে। আর এক নেতার সঙ্গে রীতিমতো বাগ্যুদ্ধ বাধে রাজ্য সভাপতির! কোন নেতা কোথায় কী কাজে যাচ্ছেন, তা তাঁকে জানিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিলেন রাজ্য সভাপতি। ওই নেতা বলেন, সভাপতির ‘ব্যস্ততা’র জন্যই তাঁরা এ সব জানান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে। ক্ষুব্ধ সভাপতি ওই নেতাকে জানিয়ে দেন, তাঁদের ‘আদেশ’ মেনে চলতে তিনি বাধ্য নন!

লক্ষ্যণীয় ভাবে, এ দিনের বৈঠকের পরে রাজ্য সভাপতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। সেই দায়িত্ব সামলান দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য তথাগত রায়। বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা জল চুক্তি নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের আপত্তির কথা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানাতে আজ, বৃহস্পতিবার সকালে রাহুলবাবুর দিল্লি যাওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতেও সাংবাদিকদের এড়িয়ে যাচ্ছেন রাহুলবাবু, এমন ঘটনাকে মোটেও স্বাভাবিক বলে মনে করছে না বিজেপির একাংশ!

দলীয় সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে কয়েক জন নেতা আর্জি জানান, পুরভোটে প্রার্থী বাছাইটা যেন অন্তত দেখেশুনে করা হয়। কিন্তু তাঁদের নাকি বলা হয়, দলের পক্ষে ভোটের সব খরচ বহন সম্ভব নয়। প্রার্থী করার সময়ে এই ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে। যা শুনে দলের এক নেতার বিস্মিত প্রতিক্রিয়া, “এর মানে দাঁড়ায়, যাঁরা খরচের ভার নিতে পারবেন, প্রার্থী বাছাইয়ে তাঁরাই অগ্রাধিকার পাবেন!”

তথাগতবাবু অবশ্য এ দিন জানিয়েছেন, গেরুয়া শিবিরের ভাবধারায় বিশ্বাসী হলে তবেই মিলবে পুরভোটের টিকিট। শুধু স্বচ্ছ ভাবমূর্তি হলেই চলবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আপাতত কলকাতার মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে কাউকে তুলে ধরার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিজেপি। তথাগতবাবুর কথায়, “কাউকে মেয়র হিসেবে তুলে না ধরেও ভোটে লড়াই করা যায়!” বিজেপির অন্দরের ব্যাখ্যা, বনগাঁ লোকসভা উপনির্বাচনে সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী হিসাবে ‘চাপিয়ে’ দেওয়ার ফল কী হয়েছে, তা মাথায় রেখেই পুরভোটে তাড়াহুড়ো করে কারও নাম ঘোষণায় আপত্তি জানিয়েছে দলের একাংশ। দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পর্যবেক্ষক আবার বৈঠকে অভিযোগ করেছেন, বনগাঁয় অন্তর্ঘাত হয়েছে। সে ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। পুরভোট ১৮ এপ্রিল করা নিয়ে অবশ্য রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে শীঘ্রই আপত্তি জানাবে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bjp westbengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE