সারদা রিয়েলটি মামলায় অভিযুক্ত সৃঞ্জয় বসুর বিরুদ্ধে ৪০৯ ধারা বাদ পড়ার পরে সিবিআই কেন উচ্চতর আদালতে যায়নি, সেই প্রশ্ন উঠেছিল। সোমবার সারদা মামলার চার্জশিটে ওই ধারা যুক্ত হওয়ার পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা। সৃঞ্জয়ের জামিনের বিরোধিতা করেই মামলা ঠুকেছে তারা।
ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানায়, সাংসদ সৃঞ্জয়ের জামিন খারিজের আবেদন জানিয়ে মামলা করা হয়েছে মঙ্গলবার। হাইকোর্টের বিচারপতি শুভ্রকমল মুখোপাধ্যায় ও বিচারপতি ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে সোমবার তার শুনানি হতে পারে বলে কোর্ট সূত্রের খবর।
সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়ে সৃঞ্জয় ৭৫ দিন জেল-হাজতে থাকার পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি আলিপুরের জেলা জজ সমরেশপ্রসাদ চৌধুরী কয়েকটি শর্তে তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। তা নিয়ে জামিনের দিন থেকে বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে ব্যাপক হইচই হয়েছিল। সৃঞ্জয় যে-ভাবে জামিন পেয়েছেন, তাতে বাঁচার জন্য দিল্লি গিয়ে ধরাধরি করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে বলে মন্তব্য করেন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম।
তবে হইচই তুঙ্গে ওঠে সৃঞ্জয়ের দৃষ্টান্ত ধরে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত মন্ত্রী মদন মিত্রকে জামিনে ছাড়িয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হওয়ায়। মদনবাবুর জামিনের পথে যাবতীয় কাঁটা সরাতে সোমবার খোদ বিচারকের উদ্দেশে কটূক্তি শানিয়ে নেমে পড়েন এক দল আইনজীবী।
কেন জামিন পেয়েছেন সৃঞ্জয়?
সারদা মামলায় সিবিআই গত ১৭ নভেম্বর আলিপুর আদালতে যে-চার্জশিট পেশ করেছিল, তাতে প্রথমে অন্যান্য ধারার সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ নম্বর ধারাটিও ছিল বলে আদালত সূত্রের খবর। কিন্তু ১৮ নভেম্বর চার্জশিট গ্রহণের সময় সেটি বাদ পড়ে যায়। ওই ধারা প্রযোজ্য হয় অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে। এই অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন। কারও বিরুদ্ধে ওই ধারা প্রয়োগ করা হলে তদন্তকারীরা চার্জশিট দাখিলের জন্য ৯০ দিন সময় পান। সৃঞ্জয়ের বিরুদ্ধে অন্য যে-সব ধারা (প্রতারণা ইত্যাদি) প্রয়োগ করা হয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে ৬০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ করতে হয়। তাই ৪০৯ নম্বর ধারা প্রযুক্ত না-হওয়ায় এবং ইতিমধ্যেই ৬০ দিনের বেশি জেল-হাজতে কাটিয়ে দেওয়ায় ওই অভিযুক্ত সাংসদকে জামিন দেন বিচারক।
আলিপুর আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট (২) হারাধন মুখোপাধ্যায় পরে অবশ্য বলেন, “ভুল করে ধারাটি বাদ পড়ে গিয়েছিল।” সিবিআই ওই চার্জশিটে ৪০৯ নম্বর ধারা যোগ করার আবেদন জানানোয় বিচারক সোমবার সেই আর্জি মঞ্জুর করেন। কিন্তু তা মঞ্জুর করার আগে তাঁকে পড়তে হয় বাধা ও কটূক্তির মুখে। তিনি যাতে ওই দিন সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করতে না-পারেন, সেই জন্য আইনজীবীদের একাংশ দীর্ঘ ক্ষণ ঘেরাও করে রাখেন বিচারক হারাধন মুখোপাধ্যায়কে। অবশ্য তাঁদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে অনড় থেকে বিচারক রাতে সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করেন।
কেন সৃঞ্জয়ের জামিনের বিরোধিতা করবে সিবিআই?
সারদা কেলেঙ্কারিতে কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি কী ভাবে কতটা লাভবান হয়েছেন, কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে তা দেখতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। অভিযুক্ত সাংসদ সৃঞ্জয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বলে আগাগোড়াই আদালতে জানিয়ে এসেছেন সিবিআইয়ের আইনজীবীরা। জামিনে মুক্ত থাকলে তিনি সারদা-তদন্তের তথ্যপ্রমাণ লোপাট করতে পারেন। মূলত সেই কারণ দেখিয়েই হাইকোর্টে সৃঞ্জয়ের জামিনের বিরোধিতা করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy