Advertisement
০৬ মে ২০২৪

স্থানীয় ছেলেদের ফাঁসি চায় চকরাতা

একটা ঘটনা হঠাৎ তোলপাড় করে দিল উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট জনপদটিকে। দেহরাদূনের অনতিদূরে এই পাহাড়ি জনপদের নাম চকরাতা। পর্যটকদের বরাবরই টেনে এসেছে তার সৌন্দর্য। কিন্তু রবিবার রাত থেকে শান্তি ছুটেছে চকরাতার। পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে স্থানীয় চার যুবককে। কেন, সেটা জানার পর থেকেই মন ভাল নেই এলাকাবাসীর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

একটা ঘটনা হঠাৎ তোলপাড় করে দিল উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট জনপদটিকে।

দেহরাদূনের অনতিদূরে এই পাহাড়ি জনপদের নাম চকরাতা। পর্যটকদের বরাবরই টেনে এসেছে তার সৌন্দর্য। কিন্তু রবিবার রাত থেকে শান্তি ছুটেছে চকরাতার। পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে স্থানীয় চার যুবককে। কেন, সেটা জানার পর থেকেই মন ভাল নেই এলাকাবাসীর।

দুঃখ নয়, ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। ফাঁসি চান গাড়িচালক রাজু দাস ও তার তিন বন্ধুর। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে দিল্লি থেকে আসা দুই বাঙালি তরুণ-তরুণীকে খুনের অভিযোগে। খুনের আগে তরুণীটির উপর নির্যাতন চালানোর কথাও কবুল করেছে ধৃতরা।

আর সেই কারণেই স্থানীয় ছেলে বলে রাজুদের রেয়াত করতে রাজি নয় চকরাতা। বরং দাবি উঠেছে, ফাঁসি যদি না হয়, তা হলে যেন ধৃতদের জনতার হাতে তুলে দেওয়া হয়। উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ের কেউ যে এমন করতে পারে, সেটাই বিশ্বাস হচ্ছে না স্থানীয়দের।

রবিবার রাতেও এলাকার চার যুবকের গ্রেফতারের কারণ জানত না চকরাতা। সোমবার সকালে খবরের কাগজ পড়ে চমকে যান এলাকার ধৃতদের স্থানীয় থানায় নিয়ে আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রায় গোটা এলাকা হাজির হয়ে যায় সেখানে।

এক সময়ে থানার গেট বন্ধ করে দিতে হয়। ফাঁসির দাবি তখনই উঠেছিল। মঙ্গলবারের কাগজে তরুণীটির উপর শারীরিক অত্যাচারের খবর জানার পর আরও তীব্র হয় বিক্ষোভ। এক সময়ে সব রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, রাজুর বাবা মোহন দাস তাঁর ছেলেকে নিজে হাতে মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়েছেন।

তবে বুধবার চকরাতা অন্য দৃশ্য দেখেছে। বেরিয়েছিল মৌন মিছিল। মূলত পর্যটনকে আঁকড়ে বেঁচে থাকে চকরাতা। এই ঘটনার পর অনেকেরই আশঙ্কা, রুজিতে টান পড়বে না তো!

এলাকার বাসিন্দা নরেন্দ্র তোমরের মন্তব্য, “এখানে চুরি-ছিনতাই পর্যন্ত হয় না। পর্যটকেরা যাতে হেনস্থা না হন, তার উপরে আমাদের সবারই নজর থাকে।” ওই তরুণ-তরুণী চকরাতা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন শুনে তাঁরা ভেবেছিলেন, আত্মহত্যাই করেছেন দু’জনে। কিন্তু এমন যে কিছু হতে পারে, তা ভাবতে পারেননি।

নরেন্দ্র এবং স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী একই সুরে বলছেন, এই একটা ঘটনায় তাঁদের মান-সম্মান সব গিয়েছে। হোটেল ব্যবসায়ীটি জানান, দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা থেকে তাঁদের গ্রাহকরা ফোন করে এখন ওই একটা বিষয়েই জানতে চাইছেন। তাঁরা কোনও জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না। বিশেষত উত্তরাখণ্ড পুলিশ ওই তরুণ-তরুণীর আত্মীয়দের ভুল পথে চালিত করেছেন বলে স্থানীয়রাই অনেকে মনে করছেন।

মুম্বইয়ে একটি পর্যটন সংস্থা চালান উত্তরাখণ্ডের ল্যান্সডাউন পাহাড়ের আদি বাসিন্দা অজয়কুমার কালা। একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলছিলেন, “ব্যবসার লাভ-ক্ষতির কথা ভাবছিই না। আমি ভাবছি, এটা তো আদৌ আমাদের উত্তরাখণ্ডের সংস্কৃতি নয়! আমাদের পাহাড়িদের টাকাপয়সা কোনওদিনই তেমন ছিল না, কিন্তু মূল্যবোধ ছিল।”

আঘাতটা সেখানেই। হয়তো তাই আরও বেশি ফুঁসছে চকরাতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chakrata raju das uttarakhand murder case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE