Advertisement
০৬ মে ২০২৪

সুদীপ্তদের কোর্টে তোলায় প্রশ্নের মুখে পুলিশ

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। তার পরেও সারদা কাণ্ডের নানান মামলার সূত্রে অভিযুক্তদের বিভিন্ন আদালতে হাজির করাচ্ছে রাজ্য পুলিশ। এতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার। ওই কেলেঙ্কারিতে প্রধান অভিযুক্ত, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে মঙ্গলবার সিউড়ি আদালতে তোলা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৭
Share: Save:

সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে রাজ্য পুলিশের হাত থেকে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তভার নিয়েছে সিবিআই। তার পরেও সারদা কাণ্ডের নানান মামলার সূত্রে অভিযুক্তদের বিভিন্ন আদালতে হাজির করাচ্ছে রাজ্য পুলিশ। এতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজ্য সরকার।

ওই কেলেঙ্কারিতে প্রধান অভিযুক্ত, সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে মঙ্গলবার সিউড়ি আদালতে তোলা হয়। সারদারই অন্য একটি মামলায় সোমবার আরামবাগ আদালতে হাজির করানো হয় অন্যতম অভিযুক্ত, সারদা গোষ্ঠীর ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে। সিবিআই জানাচ্ছে, সারদার তছরুপ নিয়ে সব মামলা ইতিমধ্যেই একত্র করা হয়েছে। তাই ওই সব মামলায় অভিযুক্তদের আলাদা করে বিভিন্ন আদালতে হাজির করানোর কোনও প্রয়োজনই নেই।

প্রশ্ন উঠেছে, সুপ্রিম কোর্ট সারদা কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে বলার পরেও রাজ্য পুলিশ কোন এক্তিয়ারে অভিযুক্তদের বিভিন্ন আদালতে হাজির করাচ্ছে?

রাজ্যের সরকারি আইনজীবীদের একাংশের দাবি, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ রাজ্য প্রশাসনের মাধ্যমে সব জেলা আদালতে পৌঁছয়নি। রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এই বিষয়ে আলাদা ভাবে কোনও নির্দেশ পাঠানো হয়নি। সেই জন্যই জটিলতা বাড়ছে।

রাজ্যের কারা দফতরের কর্তারা কোন এক্তিয়ারে সারদা কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত দেবযানীকে ৩০ জুন আরামবাগ আদালতে হাজির করালেন, তা জানতে এ দিনই আলিপুর আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা। তিনি আদালতের কাছে আরও জানতে চান, রাজ্যের কোন কোন মামলায় দেবযানীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সিবিআই তা সংশ্লিষ্ট আদালতগুলিকে জানিয়েছে কি না। সিবিআই যাতে বিভিন্ন আদালতে সেই তথ্য জানায়, তার নির্দেশ দেওয়ার জন্য বিচারকের কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে।

রাজ্য পুলিশ এ দিন সিউড়ি আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে সুদীপ্তকে হাজির করায়। পুলিশি সূত্রের খবর, সুদীপ্ত বিচারককে জানান, তাঁর যত দূর মনে পড়ছে, বিচারক বারাসত আদালতে থাকাকালীন পুলিশকে সব মামলা একত্র করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

সারদা-প্রধান এ দিন বিচারককে আরও জানান, ৯ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে যে-সব মামলা রয়েছে, সেগুলি যে-অবস্থাতেই থাকুক (চার্জশিট পেশ হওয়া বা না-হওয়া অবস্থায়), সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে হবে। সিউড়ি আদালতে চলা মামলাটি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার আর্জি জানান সুদীপ্ত। তা না-হলে তাঁর হয়রানি বাড়বে বলে সারদা-কর্ণধার আদালতে জানান। অভিযুক্তের হয়রানি বাড়বে শুনে বিচারক সুদীপ্তের কাছে জানতে চান, তিনি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সঙ্গে এনেছেন কি না। পুলিশের খবর, ওই নির্দেশের প্রতিলিপি তাঁর কাছে নেই বলে সুদীপ্ত বিচারককে জানান।

সুদীপ্তের আইনজীবী চঞ্চল সিংহ বিচারককে জানান, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি ওই নির্দেশের প্রতিলিপি বিচারকের কাছে পেশ করবেন। বিচারক জানান, এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ জুলাই। সে-দিন ওই নির্দেশের প্রতিলিপি জমা দিতে হবে।

অভিযুক্তদের টানাহেঁচড়া নিয়ে পুলিশ-সিবিআই বিতর্কের মধ্যেই সুদীপ্তকে ভুবনেশ্বরের বিশেষ আদালতে হাজির করানোর বিষয়টিকে ঘিরে টানাপড়েন শুরু হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে। ইডি সূত্রের খবর, সুদীপ্তের বিরুদ্ধে ‘মানি লন্ডারিং’ (অবৈধ ভাবে অন্যত্র টাকা সরানো) আইনে ভুবনেশ্বরের ওই আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সুদীপ্ত এখন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে আছেন। ভুবনেশ্বরের বিশেষ আদালত বিচারক আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষকে ২৫ জুন নির্দেশ দেয়, সুদীপ্তকে ৩ জুলাই সেখানে হাজির করাতে হবে।

রাজ্যের কারা দফতরের এডিজি অধীর শর্মা জানান, ইডি-র তরফে আবেদন করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সুদীপ্তকে ভুবনেশ্বরে পাঠানো হবে কি না, সেই ব্যাপারে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মতামত চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র দফতরের মতামত জানার পরে কারা দফতর সিদ্ধান্ত নেবে।”

কারা দফতর সূত্রের খবর, ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৬৮ ধারা অনুযায়ী নিরাপত্তার নিরিখে গুরুত্বপূর্ণ বন্দিদের অন্য রাজ্যে পাঠানো হবে কি না, সংশ্লিষ্ট রাজ্য সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই আইন-বলেই মার্কিন তথ্যকেন্দ্রে হামলায় দোষী সাব্যস্ত আফতাব আনসারিকে কয়েক বছর ধরে জেলের বাইরে বার করা হয়নি। এমনকী দিল্লির তিস হাজারি কোর্টের মামলায় আফতাবের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে। আফতাবের মতো সুদীপ্তও ‘হাই সিকিওরিটি’ বা জোরদার নিরাপত্তা ব্যূহে থাকা বন্দি। সেই জন্য ভুবনেশ্বরের বিশেষ আদালতে তাঁকে তোলার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র দফতরের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sudipto sen sarada scam debjani kunal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE