ভর্তি ছিলেন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে। অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় বুধবার রাতে আইটিইউয়ে পাঠানো হয় ক্রীড়া ও পরিবহণমন্ত্রী মন্ত্রী মদন মিত্রকে।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে সিবিআইয়ের হাতে ধৃত মদনবাবু ঠিক কতটা অসুস্থ, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। চিকিৎসকেরা জানান, বুধবার রাতে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য মদনবাবুর স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়। অনেকটা সময় তিনি আচ্ছন্ন অবস্থায় ছিলেন। ভুল বকছিলেন মাঝেমধ্যেই। কাউকে চিনতে পারছিলেন না। সেই সঙ্গে ছিল প্রবল শ্বাসকষ্ট। এর ধাক্কায় এক সময় তাঁর কথাও বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ওই সময় মদনবাবুর অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে, রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁকে উডবার্ন ওয়ার্ড থেকে মেন ব্লকের আইটিইউয়ে ভর্তি করানো হয়। শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখার জন্য সাহায্য নেওয়া হয় ‘বাইপ্যাপ’ যন্ত্রের।
পিজি সূত্রের খবর, ওই রাতে ক্রীড়ামন্ত্রীর রক্তচাপ বেড়ে ১৮০/১১০ হয়ে গিয়েছিল। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৮৬ শতাংশ। নাড়ির গতি মিনিটে ১৫০ ছাড়িয়ে যায়। বৃহস্পতিবার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় মদনবাবুকে আইটিইউ থেকে বার করে আবার উডবার্নের পাঁচ নম্বর কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। তাঁদের বক্তব্য, মদনবাবু এখনও খুবই দুর্বল। প্রায় কিছুই খেতে পারছেন না। তাঁর চিকিৎসার জন্য এ দিন মেডিসিনের মৃদুলকুমার দাসের নেতৃত্বে সাত চিকিৎসকের একটি বিশেষজ্ঞদল গঠন করা হয়েছে।
সারদা কাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই, গত দুর্গাপুজোর সময় মদনবাবু ভর্তি হন দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে। ডায়বেটিস, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও প্যানিক অ্যাটাক-সহ বিভিন্ন সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চিকিৎসা চলছে। নার্সিংহোম থেকে তাঁকে ভর্তি করানো হয় এসএসকেএমে। সেখানে বেশ কিছু দিন নানা পরীক্ষানিরীক্ষার পরে চিকিৎসকেরা কোনও বড় অসুখ খুঁজে পাননি। গত ১২ ডিসেম্বর তিনি সিবিআই অফিসে গিয়েছিলেন।
ওই দিনই সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় মদনবাবুকে। জেলে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সে-রাতেই তাঁকে আবার এসএসকেএমে ভর্তি করানো হয়। সেই দফায় তিনি বেশ কিছু দিন ওই হাসপাতালে থাকেন। মন্ত্রী কেন এত দিন এসএসকেএমে আছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। বিরোধীরাও অভিযোগ তোলেন, কারাবাস এড়াতেই মদনবাবু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ওই বিতর্কের কিছু দিন পরে ক্রীড়ামন্ত্রীকে জেলে ফেরানো হয়। স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য সেখান থেকে তাঁকে নিয়মিতই এসএসকেএমে নিয়ে যাওয়া হত। এর মধ্যে অভিযোগ ওঠে, বাড়ি থেকে জলের বোতলে মদ মিশিয়ে মদনবাবুর কাছে পাঠানো হয়েছে। সেই পানীয় খেয়ে জেলের মধ্যে অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন মদনবাবু। বিরোধী শিবির এই নিয়ে শোরগোল শুরু করার পরে মদনবাবুর পরিবার থেকে অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক আগে ফের অসুস্থ হয়ে উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হন পরিবহণমন্ত্রী।
ওই ওয়ার্ডে থাকাকালীনই বুধবার রাতে মদনবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় আইটিইউয়ে। এই দফায় তাঁর অসুস্থতা ঠিক কতটা, তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ, যতটা খারাপ বলা হচ্ছে, মদনবাবুর অবস্থা বাস্তবে ততটা খারাপ নয়। এসএসকেএমে মন্ত্রীর একটানা থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে এবং তাঁকে দ্রুত জেলে ফেরত পাঠানো হতে পারে, এটা আঁচ করেই একটি মহল থেকে মন্ত্রীর অসুস্থতার কথা ফলাও করে প্রচার করে চিকিৎসকদের উপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন। এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র বলেন, “কেউ আমাদের কোনও রকম চাপ দেননি। হঠাৎই মদনবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। এখনও তাঁর শ্বাসকষ্ট রয়েছে।”
বুধবার রাতে ক্রীড়ামন্ত্রীর অসুস্থতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
অধ্যক্ষ প্রদীপবাবু জানান, মদনবাবুকে রোজ অন্তত ২৫টি ওষুধ খেতে হয়। তার মধ্যে স্নায়ু সংক্রান্ত ওষুধ আছে বেশ কয়েকটি। নার্সেরা অধ্যক্ষকে জানিয়েছেন, খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম করতেন ক্রীড়ামন্ত্রী। দিনে অনেক ক্ষণ খালি পেটে থাকতেন। “অনুমান করা হচ্ছে, খালি পেটে কড়া ওষুধ খেয়েই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন,” বললেন প্রদীপবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy